প্রায় ২৩ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার দায়ে দিনাজপুর পৌরসভা কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে নেসকো। মঙ্গলবার দিনের যে কোন সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পৌরকর্তৃপক্ষকে কিছুই জানানো হয়নি বলে পৌর কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন বকেয়ার কারনে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি অনেক আগেই চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় পৌর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদপত্র বিতরনসহ সকল ধরনের সেবা মূলক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা ভ্যাকসিন, কলেরার টিকাসহ বিভিন্ন অতিজরুরী চিকিৎসাসামগ্রী নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ জেনারেটর চালিয়ে ভ্যাকসিন ও টিকার মত গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী সংরক্ষনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পৌর মেয়র বলেছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ যে পরিমান টাকা বকেয়া রয়েছে পৌর কর বাবদ তার দ্বিগুনের বেশী টাকা পৌর কর্তৃপক্ষের পাওনা রয়েছে।
বৃটিশ শাসনামলে ১৮৬৯ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শ্রেনীর মর্যাদাসম্পন্ন দিনাজপুর পৌরসভার ১২ ওয়ার্ডে ২ লক্ষের বেশী মানুষের বসবাস। জন্ম নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয়তা সনদসহ সকল ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিয়ে থাকে পৌরসভা। এসকল সেবা নিতে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী পুরুস পৌরসভায় এসে থাকেন। গত মঙ্গলবার বকেয়ার কারনে বিদ্যুৎ বিল বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ বিল বিচ্ছিন্নের বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ জানেন না বলেন জানান পৌর মেয়র ও নির্বাহী প্রকৌশলী। তাদের মতে বুধবার সকালে বিদ্যুৎ না থাকায় খোজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন সংযোগের বিষয়টি । বিদ্যুতের অভাবে জন্মনিবন্ধন সনদসহ অনলাইনের সকল সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তার বাতি।
দিনাজপুরের বাহিরে অবস্থানরত মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের কাছে যে পরিমান বিলের টাকা পাবেন তার চেয়ে দ্বিগুন বেশী টাকার ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। তার মতে বিদ্যুৎ বিভাগ যে বিল দিয়েছে তার মধ্যে অনেক ভুতুরে বিল রয়েছে। আমরা সে দিকে না যেয়ে জনগনের সেবা নিশ্চিত্বের জন্য গত ২০১২ সালে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। বলেছিলাম করের বকেয়া টাকার সাথে বিদ্যুৎ বিল সমন্বয় করার জন্য। কিন্তু তা না করে তারা আকষ্মিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি বলেন পৌরসভা জনগনের ট্যাক্সের টাকায় চলে থাকে। বিদ্যুৎ বিভাগ চিঠি দিয়ে অবগত করার বিষয়টি জানালে তিনি বলে ২/৪ মাস চিঠি দিয়ে বকেয়ার কথা জানালেও সংযোগ বিচ্ছিন্নের আগে জানানো উচিৎ বলে মনে করি। এছাড়া দিনাজপুর পৌরসভা আর বিদ্যুৎ বিভাগ দুটি প্রতিষ্ঠানই সরকারের। এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারন জনগনই সেবা পেয়ে থাকেন।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন বুধবার সকালে। বুধবার সকাল থেকে জন্মনিবন্ধন সনদসহ বিভিন্ন সেবা নিতে আসার পর বিদ্যুৎ না থাকায় অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে পৌর কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিভাগে খোজ নিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের কথা জানতে পারেন। তাৎক্ষনিকভাবে ফ্রিজে থাকা করোনার ভ্যাকসিন, কলেরার টিকাসহ সকল ধরনের টিকা ও ঔষধ নষ্ট হওয়ার শংকা দেখা দিলে জেনারেটর চালিয়ে সেগুলিকে সংরক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। প্যানেল মেয়র জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন রক্ষায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্ংালা স্কুল ভবনে তা বিকল্প পন্থায় সংরক্ষনের কথা জানান।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিনারুল ইসলাম খান বলেন বিদ্যুৎ বিভাগ বিল বাবদ পাবেন ১৮ কোটির মত টাকা। আর পৌরসভা বিভাগের কাছে পাবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। তিনি জানান, বিদ্যুতের অভাবে করোনা ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন টিকা ও ইনজেকশন নষ্ট হওয়ার পথে। জন্মনিবন্ধন প্রদান বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ অভাবে।
প্যানেণ মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল জানান, জেনারেটর চালিয়ে প্রাথমিকভাবে ভ্যাকসিন, টিকা রক্ষা করা হচ্ছে বিকেলে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে। কাউন্সিলর মাসুদ হোসেন জানান, ডিজিটালের যুগে বিদ্যুৎ অভাবে সবকিছুই অচল।
বুধবার দুপুরে দিনাজপুর পৌর কার্যালয়ে শত শত নারী পুরুষকে সেবা না পেয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। বছরের শেষে স্কুল কলেজে ভর্তির জন্য সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য অভিভাবকেরা মরিয়া হয়ে গেছে। এসময় পৌরসভায় বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টিকে কোন মহলই ভাল চোখে দেখছে না। সর্বশেষ বুধবার সন্ধায় নেসকোর একজন কর্মকর্তা জানান বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আশা করা হয় দ্রæত বিষয়টির সমাধান হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন