নতুন করে পুলিশের দায়ের করা গায়েবি মামলাসমূহ প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে চিঠি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করে মহাসচিবের এই চিঠি দেন এবং মামলার বিষয়াদি নিয়ে বৈঠক করেন।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আমরা বাংলাদেশে যে গায়েবি মামলা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের লোকজন বোমা ফাটিয়ে আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে। এর একটি স্মারক লিপি মাননীয় মহাসচিবের তরফ থেকে আমরা আইজিপিকে প্রদান করেছি। উনি আমাদের প্রতিনিধিদলের সবার বক্তব্য শুনেছেন। বিভিন্ন জায়গায় গায়েবি মামলা করা হচ্ছে, নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, গ্রেফতার করছে, বাড়ি তল্লাশী করছে। আমরা এর প্রতিকার চেয়েছি। উনি বলেছেন এগুলো খতিয়ে দেখবেন।
গায়েবী মামলার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গতকাল হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন জায়গার সাড়ে চার‘শ নেতাকর্মী জামিন নেওয়ার পর হাইকোর্টের গেইট থেকে ৫০ জনকে তাদের ল‘ইয়ার্স সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলে গ্রেফতার করেছে। নরসিংদীতে একটা মামলা দিয়েছে গায়েবি মামলা। সেই মামলায় উল্লেখ আছে চলো চলো, ঢাকায় চলো, বেগম খালেদা জিয়া জিন্দবাদ, তারেক রহমান জিন্দাবাদ বলে ৫/৬ ককটেল ফাটিয়েছে। এজন্য এই মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা বলেছি যে, আমি যদি আমার লোকজনকে ঢাকায় আসার জন্য দাওয়াত দেই তাহলে আমি বোম ফাটাবো কেনো? তাহলে তো মানুষ আতঙ্কিত হবে তারা সমাবেশের আসবে না। এভাবে তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে।
মহাসচিবের চিঠির সাথে ১৬৯টি গায়েবী মামলায় তালিকা দেয়া হয়। গত ২২ আগস্ট থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত এসব মামলায় এজহারভুক্ত আসামীর সংখ্যা ৬ হাজার ৭২৩ জন, অজ্ঞাত আসামীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৫০ জন এবং ৫৫৯ জন গ্রেফতারের তালিকাও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলের ছিলেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। পুলিশ মহাপরিদর্শনের সঙ্গে বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার ফারুক আহমেদসহ উর্ধবতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের বিষয় আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, সমাবেশে নিয়ে উনারা কথা বলেছেন, আমরা বলিনি। আমরা বলেছি এটা (সমাবেশ) পল্টনেই করতে চাই। সমাবেশের স্থলের বিষয়ে আমরা দুইটা চিঠি উনাদেরকে দিয়েছি। একটা ১৩ নভেম্বর ও আরেকটা ২০ নভেম্বর। দুইটা চিঠিতে আমরা নয়াপল্টনের স্থান চেয়েছি। আমরা কোনো দ্বিতীয় স্থান চাইনি। উনারা বলেছেন যে, আপনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করেন, আমরা সব সহযোগিতা করবো। আমরা বলেছি এটা আমাদের আজকের বিষয় না। আমরা যে বিষয়টি নিয়ে এসেছি তার সাথে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট না। এটা আমাদের স্থায়ী কমিটি, মহাসচিব আছেন তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। এটা আমাদের এখতিয়ারে নেই। গত মঙ্গলবার ডিএমপি ২৬ শর্তে বিএনপিকে ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়।
পরে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, নয়াপল্টনে বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য তারা অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করেছিলো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে তারা চায়নি। ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের সমাবেশের ব্যবস্থা গ্রহন করার আহবান জানিয়েছে মঙ্গলবার দলের এক অনুষ্ঠানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, জায়গায় আপনারা(সরকার) দিতে চান সেই জায়গায় আমরা কনফোর্টেবল নই-খুব পরিস্কার কথা। চারিদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, চতুর্দিকে যাওয়ার রাস্তা নেই। একটা মাত্র গেইট যে গেইট দিয়ে এক-দুইজন মানুষ ঢুকতে পারে, বেরুতে পারে না। আমরা পরিস্কার করে আবার বলছি, আপনাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে এই নয়া পল্টনে আমাদেরকে ১০ তারিখ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা গ্রহন করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন