ডেঙ্গু জ্বরে বিস্তার লাভ করে মহিলা প্রজাতির এডিস এজিপটাই মশার মাধ্যমে। এডিস মশা সংক্রমিত হয় যখন এ মশা কোনো মানুষকে কামড় দেয় যার রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাস রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস সরাসরি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায় না। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো তিন থেকে চৌদ্দ দিনের মধ্যে শুরু হয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে উচ্চ মাত্রার জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি, জয়েন্ট ও পেশী ব্যথা এবং ত্বকে বিশেষ ধরণের ফুসকুড়ি অথবা দাগ দেখা দিতে পারে। সুস্থ হতে দুই থেকে দশ দিন সময় লাগতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি আরো মারাত্মক ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে পরিণত হয়। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে রক্তপাত হয়। রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যায়। প্লাজমার নিঃসরণ বা লিকিং হতে পারে। অনেক সময় ডেঙ্গু সক সিনড্রোমের কারণে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে। এ ধরণের ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপালে রেখে বিশেষ চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। তাই ডেঙ্গু জ¦রে অবহেলা না করে সতর্ক থাকতে হবে। আর সাধারন জনগনকে ডেঙ্গু জ¦র প্রতিরোধে অর্থাৎ এডিস মশা যে সব স্থানে ডিম পাড়ে যেমন- গাছের টব, ডাবের খোসা, খালি পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, ছাদের উপর খোলা ট্যাংকি ইত্যাদি স্থানে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। সমাজে সবার এ বিষয়ে কাজ করতে হবে।
ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে আইজিএম এবং আইজিজি এন্টিবডি তৈরি করে থাকে। এন্টিবডি টেস্ট জ¦র শুরু হওয়ার চার দিনের পর থেকে কার্যকর হয়। তবে প্রথম ৪ দিন এনএস১ এন্টিজেন রক্তে পাওয়া যায়। আইজিএম এন্টিবডির পর আইজিজি এন্টিবডি সৃষ্টি হয়ে থাকে। জ¦র শুরু হওয়ার আনুমানিক সাত দিনের মাথায় আইজিজি এন্টিবডি পাওয়া যায় এবং রক্তে দীর্ঘ সময়ের জন্য উপস্থিত থাকে। যদি দেখা যায় শুধুমাত্র আইজিজি পজেটিভ কিন্তু এনএসওয়ান এবং আইজিএম নেগেটিভ সেক্ষেত্রে এটি এ্যাকটিভ বা কার্যকর ডেঙ্গু সংক্রমনের নির্দেশনা দেয় না। আইজিএম টেস্ট পজিটিভ হলে সাম্প্রতিক ডেঙ্গু সংক্রমনের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এনএসওয়ান হলো ডেঙ্গু ভাইরাস এন্টিজেন শনাক্তের টেস্ট। জ¦র শুরু হওয়ার তিন দিনের মধ্যে এনএসওয়ান টেস্ট পজিটিভ হলে ধরে নিতে হবে রোগীর ডেঙ্গু জ¦র হয়েছে। তবে জ¦র শুরু হওয়ার সাত দিনের মাথায় অথবা পরে এই টেস্টের কোনো গুরুত্ব নেই। এনএসওয়ান টেস্ট নির্ণয় করে ভাইরাসের নন-স্ট্রাকচারাল প্রোটিন। এই প্রোটিন রক্তে নিঃসরিত হয় ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমনের সময়। দাঁতের চিকিৎসা নিতে আসা কোনো রোগীর ডেঙ্গু জ¦র সন্দেহ হলে জ¦র আসার প্রথম তিন দিনের মধ্যে হলে এনএসওয়ান এন্টিজেন পরীক্ষা করে নিতে হবে। তিন দিনের পরে হলে ডেঙ্গু এন্টিবডি আইজিজি এবং আইজিএম টেস্ট অবশ্যই করানোর পর দাঁতের বা মুখের চিকিৎসা করা যাবে কি না সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। রোগীর কথামতো দাঁতের স্কেলিং অথবা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা ডেঙ্গু জ¦রের ক্ষেত্রে করা যাবে না। রক্তপাতজনিত ডেঙ্গু জ¦রের ক্ষেত্রে দাঁতের স্কেলিং করলেও বিপদ হতে পারে। তাই ডেঙ্গু জ¦রের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে দাঁত ও মুখের চিকিৎসা করতে হবে।
ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হলে বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। জ¦র কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করতে হবে। অধিকাংশ সময় রোগীর শিরায় স্যালাইন দিতে হয়, কারন অনেকেরই বমির প্রবণতা থাকে। আবার অনেকের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। তবে সব সময় শিরার স্যালাইন প্রয়োজন নাও হতে পারে। ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীকে দাঁতের ব্যথার জন্য এনএসএআই ডি গোত্রভুক্ত ব্যথানাশক ঔষধ প্রদান করা যাবে না। ডেঙ্গু জ¦রের জন্য কোনো অবস্থাতেই এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা ঠিক নয়। সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু জ¦র চলাকালীন সময়ে দাঁতের চিকিৎসায় সব ধরণের ঔষধ ব্যবহার করা যায় না। অনেক ঔষধ হাড়ের কার্যক্রম ব্যাহত করে রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এসপিরিন জাতীয় ঔষধও রক্তের প্লাটিলেটের বিশেষ অংশের কাজ কমিয়ে দিয়ে রক্ত জমাট বাধায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। একটি এসপিরিন ট্যাবলেটের কার্যক্রম দশ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তাই এই সময় মাথা ব্যথা অথবা দাঁত ব্যথায় এসপিরিন ট্যাবলেট সেবন করা যাবে না। এছাড়া অন্য যে সব ঔষধ রক্তের অণুচক্রিকার কাজ কমিয়ে দেয় সেগুলো হলো ডেক্সান, হেপারিন, বিটা ব্লকার জাতীয় ঔষধ, ব্যথানাশক ঔষধ ইন্ডোমেথাসিন, ফিনাইল বুটাজন। এছাড়া যারা স্বল্প মাত্রায় এসপিরিন জাতীয় ট্যাবলেট সেবন করে থাকেন তাদের ডেঙ্গু জ¦র হলে এসপিরিন জাতীয় ঔষধ সম্পুর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। তাই ডেঙ্গু জ¦র চলাকালীন সময়ে ঔষধ সেবনেও সতর্ক থাকতে হবে।
হার্টের রোগীদের মধ্যে যারা এন্টিপ্লাটিলেট জাতীয় ঔষধ সেবন করে থাকেন এবং যাদের হার্টের রিদম ঠিক নেই তাদের ডেঙ্গু জ¦র হলে ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। হার্টের রোগীদের রক্তপাতজনিত ডেঙ্গু জ¦র হলে দেরী না করে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ডেঙ্গু সক সিনড্রোমে এক মুহুর্ত সময় অপচয় করা যাবে না রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে। যাদের প্লাজমা নিঃসরণ হয় তাদের জরুরী ভিত্তিতে রক্তের প্লাজমা প্রদান করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের সাথে হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি শারীরিক কারন থাকলে তাকে অবশ্যই ডাক্তারের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। সামান্য অবহেলায় একজন রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন