বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশ কেন গুলি করবে

কামরুল হাসান দর্পণ

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিএনপির পূর্ব ঘোষিত বিভাগীয় গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার সমাবেশ সফল করতে গত ১৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণ করে। লিফলেট বিতরণকালে সোনারামপুর ইউনিয়নের ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নয়ন মিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি’র সাথে তর্কাতর্কির সময় এক কনস্টেবল তাকে গুলি করে। এতে নয়ন মিয়া নিহত হয়। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে আদালত তা খারিজ করে দেয়। ফলে কোনো ধরনের তদন্ত ও বিচার ছাড়াই নয়নের মৃত্যুর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা এ ঘটনাকে বিচারহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছেন। কারণ, স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়া অন্য যেকোনো মৃত্যুরই একটি সুষ্ঠু তদন্ত করতে হয়। খুনের ঘটনা ঘটলে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দায়ী বা দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা বাধ্যতামূলক। নয়ন মিয়ার হত্যার ঘটনায় এ ধরনের কিছু হয়েছে বলে জানা যায়নি। ফলে পুলিশের আচরণ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, লিফলেট বিতরণের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ কেন বাধা ও গুলি করবে? ওসির সাথে তর্কাতর্কি করলেই কি গুলি করে দিতে হবে? পুলিশ কি যখন-তখন যাকে খুশি তাকে গুলি করতে পারে? কেন ও কোন পরিস্থিতিতে গুলি করা হলো তার কি যথাযথ তদন্ত হবে না? যদি নাই হয়, তাহলে দেশের কোনো নাগরিকই নিরাপদ নয়। বিশ্বে ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ বলে একটি কথা আছে। অনেকে বলেন, দেশটা পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বিরোধীদলের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশ ‘পুলিশী রাষ্ট্রে’ পরিণত হয়েছে, এমন অভিযোগ প্রায়ই করা হয়। তাদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের পাখির মতো ফ্রি স্টাইলে গুলি করে। কোথাও কিছু হলে, সব দোষ দলটির নেতাকর্মীদের ওপর চাপিয়ে হামলা-মামলা, নির্যাতন এবং গুলি করে হত্যা করে। সরকারি দলের সাথে কোথাও সংঘর্ষ হলে একতরফাভাবে কেবল বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়া অজ্ঞাত ও গায়েবি মামলা করে দলটির নেতাকর্মীদের আসামী করা হচ্ছে। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ঘটনার বিবরণ থেকে পাঠকের মনেও তার সত্যতা প্রতিভাত হয়।

দুই.
দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। রাজনৈতিক দল তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও এন্তার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশকে জনগণের সেবক বলা হলেও, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে, যা সেবকের একেবারে বিপরীত। পুলিশকে ‘আতঙ্ক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে। ফলে, গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ ও র‌্যাবের আইজিপি এবং মহাপরিচালকসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আবার এ কথাও শোনা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আবারও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। ইতোমধ্যে বিএনপির নেতাদের মুখে এমন কথা শোনা গেছে। যদি তাই হয়, তবে এর চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা আর কি হতে পারে! একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, এ বাহিনী কতটা বেপরোয়া অবস্থায় রয়েছে। এতে শুধু বাহিনীরই ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে না, বিশ্বে দেশের বদনামও হচ্ছে। একশ্রেণীর পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ নতুন নয়। সুদীর্ঘকাল ধরেই এ ধরনের অভিযোগ চলে আসছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম দমনে পুলিশকে ব্যবহার একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরশাদের স্বৈরশাসন থেকে শুরু করে পরবর্তী সরকারগুলোর সময়েও তারতম্য ভেদে এ ধারা পরিলক্ষিত হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিগত চৌদ্দ বছরের শাসনামলে পুলিশের বিরূপ আচরণ অতীতের সকল শাসনামলকে ছাড়িয়ে গেছে। এ শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ এবং বিরোধীদলের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে দমন করার মতো ঘটনা বেশি আলোচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের কথাই যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে, পুলিশের গুলিতে বিএনপির ৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। তারা নিহত হয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও বিরোধীদলের এত নেতাকর্মী নিহত হয়নি। তখন কোনো দলের একজন নেতা বা কর্মী নিহত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শেষের দিকে এক মিলন হত্যাকাণ্ডই এরশাদ সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল। সে সময়ের আন্দোলনে নিহত নূর হোসেন, জেহাদ, ডা. মিলনদের মানুষ এখনও স্মরণ করে। তাদের নামে আলাদা দিবস ও রাজধানীতে বিভিন্ন চত্বর রয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর মিলন হত্যা দিবস পালিত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বিরোধীদলের ৬ জন বা তার কিছু বেশি নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। এতেই এরশাদের ভিত্তি কেঁপে উঠে। আর বিগত ৬ মাসের মধ্যে বিএনপির ৭ নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। গত চৌদ্দ বছরের হিসাব করলে এর সংখ্যা কত হবে, তা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না। এই যে গত ৬ মাসে বিএনপি’র ৭ নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে, তাতে কি সরকারের কিছু যায় আসেনি। ঘটনাটি অনেকটা মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশকে তার স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং পুলিশ সে কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে পুলিশ একধরনের দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশের মধ্যেও এমন ধারণা বদ্ধমূল, সরকারকে সে টিকিয়ে রেখেছে। অবশ্য পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তার মুখেও এসব কথা শোনা গেছে। কয়েক বছর আগে কোনো এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘দেশের রাজা পুলিশ।’ তার এ কথা থেকে এটাই বোঝা যায়, দেশে একধরনের পুলিশি শাসন চলছে। অর্থাৎ এখানে পুলিশ যা বলবে বা করবে, তাই সিদ্ধ। তা নাহলে, বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কেন সরাসরি গুলি করবে? বিরোধীদলের কর্মসূচি হলেই কি গুলি করতে হবে? বিএনপির যে ৭ নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হলো, তারা কি এদেশের নাগরিক নয়? তর্কের খাতিরে যদি বলা হয়, চোর, ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসী হলেই কি তাকে গুলি করতে হবে? নাকি পুলিশি কৌশল অবলম্বন করে তাকে গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করবে? বলা বাহুল্য, পুলিশ যখন তার আচরণবিধির বাইরে কোনো অঘটন ঘটায়, তখন সে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার একটি অপসংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কোনো নিরপরাদ মানুষের সাথে অন্যায় আচরণ করলে তাকে নানা অপবাদ দিয়ে অপরাধী বানিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশে পুলিশকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভাবা হয়। অপরাধ করলেও পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর রাজনৈতিক আন্দোলনের সময় নিপীড়ন-নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করলে সেক্ষেত্রে তা আমলে নেয়া হয় না। জানমালের নিরাপত্তা ও পুলিশের আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। এখানেই আমাদের পুলিশের সক্ষমতার অভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। কোন পরিস্থিতিতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়টি ভেবে দেখা হয় না। আমাদের দেশ আন্দোলন-সংগ্রামের। এখানে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিরোধীদল আন্দোলন করবে এবং তা কখনো কখনো সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু দেশে রাজনৈতিক এই অপসংস্কৃতি চলমান, তাই তা মোকাবেলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশেরও ভিন্ন কৌশল থাকা জরুরি। দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদলের কোনো আন্দোলন বেগবান হয়ে উঠলে পুলিশ সরাসরি গুলি করছে। অথচ পুলিশের গুলি করার বিষয়টি সর্বশেষ ধাপ হিসেবে গণ্য হয়। তার আগে লাঠির ব্যবহার কিংবা টিয়ারশেল ও গরম পানি নিক্ষেপ করে সংঘাতে লিপ্তদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে। এরশাদের সময়ও পুলিশকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। একেবারে গুলি করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে গুলি করা হতো না। এখন দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পুলিশ গুলি করার শেষ পদক্ষেপটি শুরুতেই ব্যবহার করছে।

তিন.
উন্নত বিশ্বেও পুলিশের বিরুদ্ধে কমবেশি অভিযোগ থাকে। তবে রাজনৈতিক আন্দোলন বা প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশকে সরাসরি গুলি করতে দেখা যায় না। এমন দৃশ্যও দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়লে তারা ঢাল দিয়ে তা প্রতিহত করে। এমনকি পুলিশের কাছে গিয়ে তাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে। তর্কবিতর্ক করে। পুলিশ চরম সহিষ্ণু ও ধৈর্য্যরে সাথে তা মোকাবেলা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তারা টিয়ার শেল বা লাঠিপেটা করে। কয়েক বছর আগে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই সারাবিশ্বে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর মতো আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ঘটনাটি বর্ণবাদী এবং পুলিশের বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও তার দায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরো পুলিশ প্রশাসনের ওপর বর্তায়। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত পুলিশের বিচার হয়েছে। আমাদের দেশে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে বিনাবিচারে অসংখ্য মানুষ নিহত হলেও তার বিচার হতে দেখা যায় না। এসব বন্ধুকযুদ্ধে যে সবাই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছিল তা নয়, কেউ কেউ নিরীহ এবং বিরোধীদলের নেতাকর্মী ছিলও বলে বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। ফলে এসব ‘বন্ধুকযুদ্ধ’ বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে, যার বদনাম পুরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তাচ্ছে। দেশে-বিদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা বদ্ধমূল হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক দেশের পরিচায়ক নয়। ইতোমধ্যে ‘পুলিশি রাষ্ট্রে’র যে বদনাম জুটেছে, তা পুলিশের অস্বাভাবিক আচরণের কারণেই হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের দায় সবার আগে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-পীড়ন করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশকে ব্যবহার করছে। পুলিশকে দলীয়করণ করে বিরোধীদল দমন করছে। এই দলীয়করণের কারণে পুলিশের পেশাদার আচরণ অনেকাংশে পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একশ্রেণীর পুলিশ বিরোধীদলের কর্মসূচিতে হামলা ও গুলি করার মতো পন্থা অবলম্বন করছে। তারা এটা ভাবে না, বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি গণতান্ত্রিক অধিকার। বিরোধীদলের নেতাকর্মী দুর্ধর্ষ কেউ নয়। তারা প্রকাশ্যেই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। তাদের কেউ বেপরোয়া হয়ে উঠলে তা মোকাবেলার কৌশল পুলিশের নিশ্চয়ই জানা আছে। সে কৌশল ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাই শ্রেয়। তা না করে, একেবারে গুলি করে দেয়া নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। পুলিশের এ ধরনের অতিউৎসাহী সদস্যর মনে রাখা উচিৎ, পুলিশ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য, জীবন নেয়ার জন্য নয়। সে যদি তার বিপরীত মনোভাবেরও হয়, তা মেনে নিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে আচরণ করাই তার দায়িত্ব। দুঃখের বিষয়, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন এতটাই দলীয় ভাবাপন্ন যে, তাদের অনেকেই নিজ পেশাদারিত্বের কথা ভুলে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছে। বিরোধীদলের লোকজন মানেই ‘শত্রু’, তাদের দমন করতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে গুলি করে হত্যা করতে হবে, এমন প্রবণতা অত্যন্ত গর্হিত। তাদের মনে রাখা উচিৎ, কোনো সরকারই চিরস্থায়ী নয়, তবে পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রযন্ত্র হিসেবে থেকে যায়। ফলে যারা এ ধরনের অসহিষ্ণু ও দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করে, সরকার পরিবর্তন হলে তাদের বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ পুলিশকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, যারা তাদের নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে কিংবা গুম ও অপহরণের সাথে জড়িত, ক্ষমতায় গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চার.
পুলিশকে এটা ভাবতে হবে, বিরোধীদলের নেতাকর্মীরাও রাষ্ট্রের নাগরিক। তারা কোনো ভিনদেশ থেকে আসেনি। সরকারের বিরোধিতা এবং রাজনীতি করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাদের এ অধিকারকে পেশাদার আচরণের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্মান দিতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশ তাই করে। তারা বিরোধীদলের আন্দোলনকে সম্মান দেখিয়ে তাদের কর্মসূচি পালনে সহায়তা করে। মিছিল বা সমাবেশ করতে গেলে পিটিয়ে বা গুলি করে তা ভণ্ডুল করে দেয় না। এটাও বাস্তবতা, বিরোধীদলের সব নেতাকর্মী এক নয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ উগ্র আচরণও করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের কীভাবে নিবৃত করা যায়, এ কৌশল পুলিশকে অবলম্বন করতে হবে। তার মানে এই নয়, সরাসরি গুলি করে দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ বা ক্ষমতা প্রয়োগের বিধি রয়েছে। তার মানে এই নয়, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে বাহাদুরি দেখাতে হবে। এই যে কোনো কোনো পুলিশ গুলি করে ৭ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে হত্যা করল, তারা কি একবার ভেবেছেন, নিহতদের পরিবারগুলোর কি পরিস্থিতিতে রয়েছে? ছোট সন্তান যে তার বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো, স্ত্রী স্বামীকে, মা-বাবা সন্তানকে হারালো, এ বেদনা কি তারা নিজের পরিবার দিয়ে উপলব্ধি করেছেন? প্রকৃতির নিয়মে এসব পরিবারের কান্না ও দীর্ঘশ্বাস কি তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না? এখানে রাষ্ট্রের বা উপরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করা হয়েছে বলে কি পার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে? পুলিশের কি মানবিকতা থাকবে না? একবারও কি ভাববে না, একজন জীবন্ত মানুষ একটু পরে তার গুলিতে নিহত হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর পুলিশে যারা রয়েছেন, তাদের ভাবা উচিৎ। তাদের এটা ভাবতে হবে, পুলিশকে সবচেয়ে বেশি মানবিক, সহনশীল ও পরোপকারি হতে হয়।

darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন