মিয়ানমারে অব্যাহত নির্যাতনের কারণে ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে আরাকানের লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী শিশু পুরুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাড়ায় ১২ লাখে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের ভরণ পোষণ সহ সার্বিক দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ করকার।
রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বাড়তি বুঝা। তাই শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেরও প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। মিয়ানমারের অসহযোগিতাসহ নানা কারণে যদিও রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন এপর্যন্ত ঠেকে রয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এই কারণে উখিয়া টেকনাফ সহ বদলে গেছেগোটা কক্সবাজারের অর্থনৈতিক চিত্র। বলতে হয় রোহিঙ্গাদের আগমনের কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে চোখে পড়ার মতো। কর্মসংস্থান হয়েছে শত শত যুবকের। গোটা কক্সবাজারে এই রোহিঙ্গা সহযোগিতার সুবাদে বেড়ে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার মান।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের হাজার হাজার কোটি টাকার অনুদানে রোহিঙ্গাদের ভরণ পোষণ ছাড়াও তাদের শিক্ষা চিকিৎসা সহ সার্বিক মান উন্নয়নের কথা থাকলেও এই অনুদানের সিংহভাগেই চলে যাচ্ছে এনজিও কর্মীদের পেছনে বা আমলা তোষণের পেছনে। কিন্তু ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গারা গত পাঁচ বছর ধরে সেই কুঁড়েঘরেই অমানবিক জীবন যাপন করে আসছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে দেয়া হয়েছে কাঁটাতারের ঘেরা। এরা যাতে বাইরে কোথাও বের হতে না পারে। তাদের জীবনযাত্রা সীমিত করে রাখা হয়েছে স্বল্প পরিসরে। এতে করে শারীরিক মানবিক বিকাশের কথা তো দূরে তারা ক্যাম্পের ভেতরে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপকর্মে।
কিছু কিছু রোহিঙ্গা স্থানীয় সীমান্ত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারীদের সাথে মিশে মাদক চোরাচালনসহ জরিয়ে পড়ে নানা অপরাধ কর্মে। এতে করে ক্যাম্প ও তার আশেপাশে খুন অপহরণের মত ঘটনাও ঘটছে।
এই অমানবিক অবস্থায় রোহিঙ্গারা কর্মসংস্থানের জন্য অথবা খেলাধুলার জন্য ক্যাম্পের বাইরে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এবং কিছু কিছু স্থানীয় সংস্থা রোহিঙ্গা দমনের নামে তাদেরকে যেভাবে চাপাচাপি করে আসছেন এটা আরো অমানবিক। গত শুক্রবারে শতাধিক রোহিঙ্গা যুব ক্যাম্প থেকে বের হয়ে উকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে খেলতে আসলে একজন স্থানীয় চেয়ারম্যান তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তোলে দেন। বিষয়টি দেশী এবং বিদেশী মানবাধিকার সংস্থা এবং রোহিঙ্গা বিসয়ক কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্ট ড়ায়নি বলে জানা গেছে।
এমন প্রক্ষাপটে বাংলাদেশ সফরে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর সহকারী সেক্রেটারি জুলিয়েটা ভালস নয়েস। এই সফরে তিনি কক্সবাজার ও ভাষানের চর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।
এ সফরে তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করবেন। রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট থেকে পালিয়ে আসা অন্যান্য শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য তিনি বংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করবেন বলে এক প্রেস নোটে জানানো হয়েছে।
এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রভাবিত হোস্ট সম্প্রদায়কে সমর্থন করার জন্য মার্কিন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে বেসরকারী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশীদারদের সাথে দেখাও করবেন-এমন কথা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন