শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয় ও মর্মান্তিক ঘটনাক্রম

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের গাড়ীর চাকায় পিষ্ট হলেন এক কিশোর সন্তানের জননী। শ্রেফ দুর্ঘটনা হিসেবে বাংলাদেশে এটি নতুন বা ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনা নয়। তবে ঘটনার আদ্যান্তে এটি নিছক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাস্তায় দুর্ঘটনা হতেই পারে। আমাদের দেশে লাইসেন্স বিহীন, অশিক্ষিত, ভুয়া লাইসেন্সধারি ড্রাইভারদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গাড়ী চালনার কারণে রাস্তায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো একটি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই গাড়ী চালক দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি নাকি অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে আগেই অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান, উচ্চশিক্ষিত মানুষ হিসেবে শিক্ষকদের মান-মর্যাদা এবং এক নৈতিক মানের অবনতি নিয়ে আমাদের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ অভিভাবক পর্যন্ত উদ্বিঘ্নতা ও আস্থার সংকটে রয়েছেন। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সরকার সমর্থিত শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে একের পর নজিরবিহীন নাশকতা ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। গত শুক্রবার ঢাবি এলাকায় দুর্ঘটনার পেছনে কোনো রাজনৈতিক যোগসূত্র না থাকলেও এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের মানবিকতার স্তর সর্বসাধারণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। মটরসাইকেলের পেছনে বসা নারী শিক্ষকের গাড়ীর চাকায় কাপড় পেঁচিয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর অসংখ্য মানুষ চিৎকার চেঁচামেচি করেও তাকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার টেনে হেঁচড়ে নেয়ার পর নীলক্ষেত মোড়ে যানজট ও সাধারণ মানুষের ব্যারিকেডে গাড়িটি থামানোর পর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত নারীকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। উত্তেজিত জনতার গণপিটুনির শিকার হয়ে সেই শিক্ষকও এখন হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। তা নাহলে তিনিও হয়তো গণপিটুনিতে নিহত হতেন। এই পুরো ঘটনাটির মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা ও সমাজ বাস্তবতার এক প্রচ্ছন্ন চিত্র বেরিয়ে এসেছে। দুর্ঘটনার সাথে সাথে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচির আগেই গাড়ীর চালক টের পাওয়ার কথা। তিনি যদি তাৎক্ষণিক গাড়ী থামিয়ে স্বাভাবিক মানবিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতেন, তাহলে হয়তো সেই মহিলাটিকে এভাবে মরতে হতো না। খবরে জানা যায়, মৃত রুবিনা বেগম আগারগাঁও এলাকায় বাস করতেন। কয়েক বছর আগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর বাড়িতে বাড়ি ভাড়ার আয়ে স্কুল পড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। পুরনো ঢাকায় বাবার বাড়ি যাওয়ার পথে তিনি এই দুর্ঘটনার শিকার হন। তার মৃত্যুতে ছেলেটি পিতৃ-মাতৃহীন এতিম হয়ে গেল। আগেই বলেছি, এটি নিছক একটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নয়। একজন উচ্চশিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গাড়ীচালকের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে রুবিনা এবং তার শিশু সন্তান। আমাদের পুরো সমাজ আজ কিছু সংখ্যক অমানবিক-অনৈতিক শিক্ষক-আমলা ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সমাজে এদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও এদের দাপটের কাছে অন্য সবার নীরবতার কারণে তারা সমাজে ও রাষ্ট্রে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও বিশ্বব্যবস্থার এককেন্দ্রীক নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার অধীনে বৈচিত্রময় বিশ্ব এখন একটি বিশ্বপল্লী বা গ্লোবার ভিলেজে পরিনত হয়েছে। পশ্চিমা প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মূলত পুঁজিবাদী শোষণ ও সম্পদের কেন্দ্রীভুতকরণ লক্ষ্যের উপর দৃঢ়সংকল্প রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ৭০ বছর ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি যুদ্ধের নেপথ্যে পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কৌশলকে একচ্ছত্র রাখা। সেখানে দেশে দেশে সাধারণ মানুষের রক্ত, জীবন, মানবিক অধিকার ও নৈতিক-দার্শনিক অবস্থানের কোনো মান-মর্যাদা রক্ষার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশ নানাভাবে পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীল, সেখানে পশ্চিমা ভূ-রাজনৈতিক পুঁজিতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থেকে সৃষ্ট অবক্ষয় সমাজে ও রাজনীতিতে সর্বগ্রাসী বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দখলদারিত্বের মধ্য দিয়ে এই অবক্ষয় শুরু হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এবং শেষ ধাপে এসে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দেশে দেশে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, অধিকার, সামগ্রিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও নৈতিক অবস্থানকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমেরিকায় নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে সূচিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আঞ্চলিক কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের উত্থান ঘটে। এটি ছিল বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সাথে পশ্চিমাদের একটি অঘোষিত সমঝোতার ফসল। সেই সরকারের ধারাবাহিকতায় নবম, দশম, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সাজানো নাটকে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দেড় দশক ধরে ক্ষমতাসীন রয়েছে। দক্ষিন এশিয়ায় চীনের বিপরীতে পশ্চিমাদের কৌশলগত মিত্র হিসেবে ভারতের উপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ভার তুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তোলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেড়কোটি প্রবাসি কর্মীর পাঠানো রেমিটেন্স এবং প্রযুক্তি ও মুক্তবাজার অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় ক্রমাগ্রসরমান তৈরীপোশাক রফতানি খাতের উপর ভর করে এক সময় দক্ষিন এশিয়ার উদীয়মান ইকোনমিক টাইগার হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার ভারতসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে সহজেই সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। পশ্চিমারা তাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ রিপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের উপর নজরদারি করলেও এসব দুর্নীতি-লুটপাটের নেপথ্য কারসাজি টিকিয়ে রাখতে তাদের নেপথ্য তৎপরতাই বেশি দায়ী। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য নিয়ে এক সময় অনেক কথা শোনা যেত। এখন আর তা শোনা যায় না। গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের বাণিজ্য, সেবাখাত ও জব মার্কেট থেকে ভারত যে পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তা ইউরোপ-আমেরিকার চেয়েও বেশি। অগণতান্ত্রিক শাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশি সন্ত্রাস ও লুণ্ঠনের নানাবিধ কৌশলে বাংলাদেশকে নিজেদের জন্য সোনার ডিমপাড়া হাঁসে পরিনত করেছে ইন্দো-মার্কিন কুশীলবরা। গণতন্ত্রের বরকন্দাজ মার্কিনীরা নিজেদের মুখ রক্ষা করতে প্রতিটি নির্বাচনের আগে-পরে নির্বাচনের স্বচ্ছতা-গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রকারান্তরে নিরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সাবেক সেনাপ্রধানসহ র‌্যাব-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের অবস্থান পরিবর্তনের কঠোর বার্তা দিয়েছে। তবে আরেকটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও শাসনতান্ত্রিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে পশ্চিমাদের ভূমিকার মধ্য দিয়েই তাদের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত হতে পারে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক লুণ্ঠন ও সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয়ের পেছনে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের প্রবল ভূমিকা রয়েছে। দেশের উপর সাধারণ মানুষ ও নাগরিকদের কর্তৃত্ব ও মালিকানা যেন হাতছাড়া হয়ে গেছে। একদলীয় পুলিশি নিপীড়ন ব্যবস্থা, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। একচ্ছত্র-একদলীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় এমনকি সরকারি দলের সমর্থকরাও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আগ্রহী নয়, গত দুইটি জাতীয় নির্বাচনে তা প্রমানিত হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ যেমন রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে অনেকটা অপাঙতেয় হয়ে পড়েছে। একইভাবে ক্ষমতাসীন দলের কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী নেতার কাছে দলের সাধারণ ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও অচ্ছুৎ-অপাঙতেয় হয়ে পড়েছে। প্রায় বিনা বাধায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে দেড় দশক ধরে দেশ পরিচালনার পর দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আওয়ামীলীগের সাধারণ নেতা-কর্মীদের অবস্থা দেখে সত্তুরের দশকের ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদের কথাই মনে পড়ছে। দেড়-দুই দশক পর অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিশৃঙ্খলা ও হতাশার চিত্র দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে হতাশ করেছে। একশ্রেণীর নেতাকর্মী হাইব্রিড বলে পরিচিতি পেলেও গত দেড় দশকে তারা কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছে। পক্ষান্তরে দলের দুর্দিনের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সব দিক থেকে বঞ্চনার শিকার হওয়ার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসছে। একটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী ও গণভিত্তিসম্পন্ন বড় রাজনৈতিক দলের উপর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় শাসনভার অর্পিত হলে এমনটা হওয়ার কথা ছিলনা। একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয়, ভিত্তি ও ক্ষমতার উৎস জনগন এবং দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। সে সব নেতাকর্মীরা ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভোগের জন্য দলকে সমর্থন করেননা। দলের আদর্শিক অবস্থান ও ত্যাগী নেতাদের প্রতি বিশ্বস্ততার কারনেই তারা দলকে সমর্থন করেন। দলের হাইব্রিড নেতাদের দখলবাজি-লুন্ঠনবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাস-খুন খারাবির দায় নি:স্বার্থ নেতাকর্মীরা বহন করতে রাজি না হলেও বিনা প্রতিবাদে সবকিছু দুর্বৃত্তদের হাতে ছেড়ে দিলে এক সময় তার দায় নিতেই হয়। এমন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণের কবলে পড়ে বাংলাদেশ এখন নজিরবিহিন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতিদমন কমিশনসহ প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এখন অকার্যকর হয়ে ক্ষমতাসীনদের দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদী শাসনের সাথে এই ধরণের পরিস্থিতির তুলনা করা চলে। দেশকে একটি অনিশ্চিত গন্তব্য ও অনিবার্য রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচাতে হলে রাাজনৈতিক সমঝোতা ও সাংবিধানিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।

‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা’? এটি একটি পুরনো প্রবাদ। শুধু সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র ও সমাজকে অবক্ষয়, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজ ও পরিবারিক গণ্ডির গভীরে হাত দিতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিমূলে গেঁথে যাওয়া ক্যান্সার সারিয়ে তোলা না হলে তা কেটে ফেলে দেয়ার জন্য সার্জারির উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষকের প্রাইভেট কারে পিষ্ট হওয়া নারীর ছিন্নভিন্ন দেহ এখন দুর্বৃত্তায়িত শিক্ষাব্যবস্থার কারণে ছিন্নভিন্ন সমাজ ব্যবস্থার প্রতকি হয়ে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে, এটা আশার কথা। রাজনৈতিক দল হোক, কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভেতর থেকে প্রতিবাদ ও পরিবর্তন না হলে বাইরে থেকে তা সম্ভব নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের নতুন মেরুকরণ চলছে। বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশকে পুরনো চেহারায় দেখা যাচ্ছে। একইসাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মুখেও পুরনো বোলচাল, হুমকি-ধামকি শোনা যাচ্ছে। গত চৌদ্দ বছরে সর্বক্ষেত্রে অনেক রেকর্ড ও নেতিবাচক ইতিহাস রচিত হয়েছে। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো অবকাঠামো খাতে চাকচীক্য বাঁড়ালেও তা দেশের মানুষের কল্যানে তেমন কোনো কাজে না আসলেও দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিভ’মি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাস বিরোধী নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নতুন করে আরো কিছু দাবি যুক্ত করে ২১ দফা দাবিতে নতুন আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ভারতের সাথে অসম চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় ছাত্রলীগ নেতাদের নির্যাতনে মেধাবী বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যু এ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা সম্পর্কে জাতিকে সম্যক ধারণা দেয়। যদিও এ সিরিজের দৈর্ঘ্য আরো লম্বা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বজিৎ হত্যা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎযাপন, ২০১২ সালে সিলেটের এমসি কলেজের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস আগুন দিয়ে ভস্মিভূত করা, ২০২১ সালে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের গণধর্ষণকাণ্ড ইত্যাকার ঘটনাগুলো দেশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ-সংক্ষুব্ধ করে তুললেও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের চেতনায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। গতমাসে আরো একজন বুয়েট শিক্ষার্থী অপমৃত্যুর শিকার হয়েছেন। সে হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন রাজনৈতিক ধূম্রজাল রচিত হচ্ছে। কিশোর গ্যাং, মাদক সিন্ডিকেট, র‌্যাবের অভিযানে সিটি শাহীনের মৃত্যু ইত্যাদি ঘটনাক্রম চলছে। ছাত্রলীগের অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। এতেও ছাত্রলীগের মধ্যে তেমন পরিবর্তন আসেনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন দমনে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আবারো দলবাজ পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগকেও মাঠে নামানোর ঘোষণা দিয়েছেন। একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক অবস্থান থেকে রাজনৈতিক অপতৎপরতার মধ্য দিয়ে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার আগে দেশের সকল রাজনৈতিক শক্তি ও রাষ্ট্রের মালিক সাধারণ নাগরিকদের জোরালো ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নিতে হবে।

bari_zamal@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন