প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আমি আবারো আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’ তিনি বলেন, দেশবাসী আওয়ামী লীগকে বারবার ভোট দিয়ে ভুল করেনি। আপনাদের ভোট বৃথা যায়নি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা এখানে কিছু করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। আপনাদের এলাকায় আজ ২৯টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। গতকাল বুধবার বিকেলে কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারকে বেশী ভালো বাসতেন। কারাগার থেকে বের হয়ে তাদেরকে নিয়ে কক্সবাজার আসতেন। তাই তিনি আন্তরিকতার সাথে কক্সবাজারে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভামঞ্চে দাঁড়িয়েই দেশবাসী ও কক্সবাজারবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জামায়াত সরকার অগ্নি সন্ত্রাস, খুন ও লুটপাট করেছে। তারা আন্দোলনের নামে মানুষ মেরেছে। হাজার হাজার মানুষ খুন করেছে। খালেদা তারেক দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তারা দেশের জন্য কিছু করেনি। তারা এখন আবারো দেশে সন্ত্রাস করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এখন বিশ্ববাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। বিশ্ব মন্দার কারণেও আমারা এখনো শক্তিশালী আছি। দেশের কোন কৃষি জমি বাদ না যায় মত তিনি সবাইকে প্রয়োজনীয় কৃষিজাত দ্রব্য চাষ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, আমার কিছু চাওয়া পাওয়া নেই। দেশের মানুষের জন্য আমার মা-বাবা প্রাণ দিয়েছেন। আমার জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমি আপনাদেরকে আমার মা-বাবা মনে করি। তাই দেশের মানুষের কল্যাণে আমি কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে তাঁর সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, রেললাইন, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাব্রাং এক্সক্লোসিভ ট্যুরিজম জোন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, মেডিকেল কলেজ, সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফুটবল স্টেডিয়াম, বিকেএসপি, খুরুশস্কুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, শেখ হাসিনা নৌঘাটি, হাইটেক পার্ক, জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনন্সিটিটিউট, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ প্রায় ৪০টি বড় ধরনের উন্নয়ন মেঘা প্রকল্পের সুফল দ্রুত কক্সবাজারবাসীসহ দেশবাসী ভোগ করতে পারবেন বলে জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভূমিহীন মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন, অশিক্ষিত ও অবহেলিত থাকবেনা। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের লবণ চাষীদের জন্য একটি লবণ বোর্ড স্থাপনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে লবণ চাষীদের উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত কার্যক্রম গুলো তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি বলেন, টেকনাফের ছয়টি এবং কুতুবদিয়া দুইটিসহ ৮টি অর্থনৈতিক জুন কক্সবাজারে গড়ে তোলা হবে। খুরুস্কুলে একটি আধুনিক শুটকির বাজার গড়ে তোলা হবে। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে শুটকি রপ্তানি সম্ভব হবে। এছাড়াও মহেশখালীতে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘আবার আসিব ফিরে এই সমূদ্র তীরে’ এই আশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইনানী সৈকতে একটি আন্তর্জাতিক নৌমহড়া উদ্বোধনকালে বলেন, আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। গতকাল সকালে কক্সবাজারে ইনানীতে আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ ২০২২ উদ্বোধন কালে তিনি একথা বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, যে কোনো যুদ্ধই মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশ কখনো যুদ্ধ চায় না। বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্র পথে হয়। অবাধ বাণিজ্যের স্বার্থেই এ পথকে নিরাপদ রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আরো বলেন, সমুদ্রের অপার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে সামুদ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তাঁর সরকার। গতকাল বুধবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী ইনানীতে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের নৌবাহিনী ও উপকূলীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৪ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ-২০২২ এর প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ছাড়া আইএফআর এ অংশগ্রহণকারী অন্য দেশগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, মিশর, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মলদ্বীপ, মিয়নমার, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, প্যালেস্টাইন, সুদান, সউদী আরব, সিংগাপুর, শ্রীলংকা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তুর্কি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব বেশী লাফালাফি করবেন না। ‘তত্বাধয়ক সরকার মরিগেইয়ে গৈ। আর নয়াইব।’ খেলা হবে, মাঠে ময়দানে। খেলা হবে রাজনীতির মাঠে। খেলা হবে আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। তিনি জনগণের উদ্দেশ্য বলেন, বিএনপিকে বিশ্বাস করবেন না।
জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এতে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব সাখাওয়াত মুন, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব জাহিদ ইমরান তোষার, এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, এমপি জাফর আলম, এমপি আশেকুল্লাহ রফিক, সাবেক এমপি এথিন রাখাইন, আওয়ামী লীগ নেতা সালাহ উদ্দিন সিআইপি, সাবেক কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল ফোরকান আহমদ, রেজাউল করিম, রনিজত দাশ, মেয়র মকসুদুল হক, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলম, পিপি ফরিদুল আলম, আব্দুল খালেক ও আবুল মনজুরসহ প্রমুখ নেতা।
জনসবায় প্রধানমন্ত্রীকে একটি নৌকা প্রতীক উপহার দেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। এদিকে জনসভাস্থলে চকরিয়ার একজন কর্মী হিটস্ট্রোকে মৃত্যু বরণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন