সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর প্রিয়জনকে মর্নিং বা গুড মর্নিং বলার সাথে যদি আপনার মুখে বা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ অনুভব করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে না। অনেক মানুষ মুখে দুর্গন্ধের সমস্যায় ভোগেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে তো বটেই, সারাদিনই অনেকের মুখে দুর্গন্ধ হয়। শরীরের জন্য প্রত্যক্ষভাবে এটি ক্ষতিকারক কিছু নয়, কিন্তু শরীরের অন্যান্য সমস্যার লক্ষন হতে পারে । কারো সাথে কথা বলতে গেলে মুখের দুর্গন্ধ অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। এখানে আমরা শুধুমাত্র মর্নিং ব্রেথ বা সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখে দুর্গন্ধের বিষয়ে আলোচনা করবো।
লালার উৎপাদন এবং প্রবাহ কমে যাওয়ার কারনে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম এবং বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। মর্নিং ব্রেথের কারন এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হলে লালার উৎপাদন এবং প্রবাহ কেন কমে যায় তা অবশ্যই জানতে হবে। রাতের বেলায় দীর্ঘ সময় আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ বন্ধ করে থাকি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই লালার প্রবাহ কমে যায় এবং মুখ শুষ্ক হয়ে যায়।
ঘরে বা নৈশ পার্টিতে এলকোহল সেবন করলেঃ এলকোহল তরল পদার্থ হলেও তা শুষ্ক মুখের সৃষ্টি করে থাকে। এলকোহল সেবনের ফলে লালার নিঃসরণ কমে যায়। লালার নিঃসরণ কমে গেলে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। তখন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে বিধায় সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মুখে দুর্গন্ধ বা মর্নিং ব্রেথ হয়।
করনীয়ঃ রাতের বেলায় পার্টি থাকলে বা বদ-অভ্যাসের কারনে এলকোহল সেবন করবেন না। আবার রাতের খাবার গ্রহনে সতর্ক থাকতে হবে। যে সব খাবার লালার প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে সেগুলো খাওয়া ঠিক নয়। যেমন, কফি বা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় রাতের বেলায় পান করলে প্রস্রাব বেশি হবে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে। মৃদু ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হতে পারে। ফলে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হবে। আর তখনই মর্নিং ব্রেথ দেখা দিবে যা কারো কাম্য হতে পারেনা।
সুগারের মাত্রা বেশি হলেঃ রাতের বেলায় আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হলে শুষ্ক মুখ দেখা দিতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসেও এমনটি হতে পারে। অতিরিক্ত সুগারের ক্ষেত্রে কিডনি আর কাজ করতে পারে না। তাই অতিরিক্ত সুগার প্রস্রাবের সাথে বের হওয়ার সময় পানিও বের করে নিয়ে যায়। ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ডিহাইড্রেশন হলে শুষ্ক মুখ দেখা দিবে। শুষ্ক মুখের কারনে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে। ফলে মর্নিং ব্রেথ দেখা দিতে পারে।
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলেঃ রাতের বেলায় মুখ দিয়ে শ্বাস নিলেও মুখ শুষ্ক হয়ে যায়। নাকে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে অথবা মুখ খোলা রেখে ঘুমালে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, ক্যান্সার চিকিৎসার সময় কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি গ্রহণ করলে শুষ্ক মুখ হতে পারে। আর শুষ্ক মুখ হলেই আপনার মর্নিং ব্রেথ দেখা দিতে পারে।
এগুলো ছাড়া ক্রনিক সাইনোসাইটিস, জিনজিভাইটিস, ওরাল আলসার, ফ্যারিজাইটিস, টনসিলাইটিস, নাক বন্ধ, নাকে ফরেন বডি, এসিড রিফ্লাক্স বা এসিড উদগীরন, লালাগ্রন্থির রোগ এবং অন্যান্য কিছু রোগের কারনে মর্নিং ব্রেথ হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু মর্নিং ব্রেথ নয় বরং সারাদিনই মুখে দুর্গন্ধ হয় অনেকের।
যদি ব্রাশ এবং ফ্লস ঠিকভাবে না করা হয় এবং জিহবা পরিষ্কার না করলে মর্নিং ব্রেথ হতে পারে। মুখের স্বাস্থ্য অবশ্যই ভালো রাখতে হবে। মর্নিং ব্রেথ অনেক সময় পেরিওডন্টাল রোগের একটি লক্ষন হিসাবে দেখা দেয়। তাই এক্ষেত্রে দ্রæত ডাক্তারের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে নবে। ঘুমানোর আগে রাতে দাঁত ব্রাশ করে নেয়া ভাল অভ্যাস। এছাড়া রাতে ঘুমানোর সময় এক থেকে দুই গøাস পানি পান করবেন। রাতে ঘুম থেকে জেগে ওয়াশরুমে গেলে পুনরায় শোয়ার সময় অবশ্যই এক গøাস পানি পান করবেন। তবে লালাগ্রন্থির কিছু রোগ এবং ঔষধের কারনে শুষ্ক মুখ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন