রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জমি নিয়ে এ ধরনের ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দ্রুত যাতায়াত ও জরুরি পণ্য পরিবহনে বিমান পরিবহনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে বিমান বন্দরের উন্নয়ন-সম্প্রসারণের কাজ অপরিহার্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। প্রয়োজনের নিরিখেই এখন দেশের ৭টি বিমানবন্দরের উন্নয়ন, নির্মাণ ও সম্প্রসারণে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের বিশাল কাজ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এর প্রথম পর্যায়ের সম্প্রসারণ, এক্সপোট কার্গো এপ্রোস বর্ধন, জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার ও হ্যালি পোর্ট নির্মাণের কাজ। এছাড়া রয়েছে শাহ আমানত ও ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তিবৃদ্ধি, কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন, টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ এবং সৈয়দপুর যশোর ও রাজশাহী বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের চলমান কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সন্দেহ নেই, তখন বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা ও সেবা প্রদানের যোগ্যতা অনেক বেশি বাড়াবে। বিমানভ্রমণ ও মালামাল পরিবহনে আরো বেশি সহজতা ও স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। ৭ বিমানবন্দরের উন্নয়ন, নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতি আমাদের জন্য একটি সুখবর। এক্ষেত্রে দুঃখজনক খবরও আছে বৈকি। যেমন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার কাজ এখনো জমি অধিগ্রহণের নোটিশের মধ্যেই আটকে আছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, চার বছর পার হয়ে গেলেও রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণে মালিকদের বরাবরে নোটিশ দেয়া ছাড়া আর কিছু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ২০১৯ সালে বিমানবন্দর উন্নয়নে সীমানা চিহ্নিতকরণসহ ভূমি জরিপ শুরু হয়। একই বছর জরিপ শেষ হয়। বিমানবন্দরের বর্তমান পরিধির সঙ্গে আরো ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। চিহ্নিত জমির মধ্যে সরকারি সংস্থার জমি যেমন আছে, তেমনি আছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির মালিকদের যথারীতি নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু আজো টাকা দেয়া হয়নি। প্রকল্পের কাজও শুরু হয়নি।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ার সম্পূর্ণ উপযুক্ত। দেশের উত্তরাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে এর অবস্থান। অন্যদিকে নেপাল-ভুটানের কাছাকাছি। এছাড়া ওপারেই তো ভারত। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ নিলে চার দেশের মানুষই এর সুবিধা পেতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এ বিমানবন্দর রাখতে পারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। কেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও এতদিনে এর উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়নি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই তার জবাব দিতে হবে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত জমির মালিকদের নোটিশ দিয়েও টাকা না দেয়া। জমির মালিকদের কথা: সরকার টাকাও দিচ্ছে না; তারা জমি অন্যত্র বিক্রি বা হস্তান্তরও করতে পারছে না। গত চার বছর তারা এভাবে ঝুলে আছে। সরকার উন্নয়ন কাজের জন্য, নির্মাণে জন্য, অবকাঠামো তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করে থাকে। জমির মালিকরা সরকারকে জমি দিতে বাধ্য। বিনিময়ে তারা জমির উচিত মূল্য পাওয়ার হকদার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই জমির মালিকরা যথাসময়ে টাকা পায় না। টাকা পেতে হয়রানির শিকার হয়। ঘুষ বা কমিশন দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার বলেছেন, অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের পাওনা টাকা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিতে হবে। অথচ, তার এ কথা গ্রাহ্যে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ। জমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এর স্পর্শকাতরতা সহজেই অনুমেয়। কারো হয়তো এক খণ্ড জমি আছে, যেখানে তার বসবাস। কারো হয়তো সামান্য কিছু জমি আছে, যা তার খাদ্যসংস্থান করে। এধরনের জমি যখন হাতছাড়া হয়ে যায়, মানুষ তখন সম্পূর্ণ নিরূপায় বা অসহায় হয়ে পড়ে। ব্যক্তি মালিকানার যেসব জমি অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত হয়, তা বেশির ভাগই স্বল্প জমির মালিকদের জমি। এর ক্ষতিপূরণের টাকা যদি আগে বা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তারা অন্যত্র জমি কিনতে পারে। আগে বা সঙ্গে সঙ্গে টাকা দেয়ার সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে না ওঠায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হয়রানি ও দুঃখকষ্টের শেষ নেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এটা এক ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পর্যায়ে পড়ে, যার জন্য সশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একশ্রেণীর অযোগ্য, অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাই দায়ী।

জমি নিলে টাকা আগে দিতে হবে, সিদ্ধান্তটা এমনই হওয়া উচিত। জমির দাম ক্রমবর্ধমান। অধিগ্রহণের নোটিশ দিয়ে বছরের পর বছর জমি আটকে রাখা যাবে না। কোনো কারণে টাকা দিতে বিলম্ব হলে বাজারদর অনুযায়ী জমির মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যখন কোনো উন্নয়ন, নির্মাণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, তখন জমির জন্য টাকাও বরাদ্দ করা হয়। সেটা অবশ্যই যথাসময়ে ছাড় করতে হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। জানা গেছে, এজন্য প্রাথমিকভাবে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রশ্ন হলো, বরাদ্দকৃত এ টাকা গেলো কোথায়? কেন সে টাকা ছাড় করা হয়নি? এর জবাব এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আমরা আশা করবো, কালবিলম্ব না করে তাদের পাওনা টাকা দিয়ে দেয়া হবে। অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানে গড়িমসি বা বিলম্ব একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এব্যাপারে পরিকল্পনা ও অর্থমন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অধিগ্রহণের নোটিশ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন