প্রায় দুই বছর আগে হত্যা করা হয় তপু মালাকারকে (২৫)। দীর্ঘ তদন্তেও পুলিশ খুনিদের কাউকে ধরতে পারেনি। উদঘাটন হয়নি হত্যার রহস্য। অতঃপর তারা আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দায় সারেন। তবে আদালত তা গ্রহণ করেননি। অধিকতর তদন্ত দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে। প্রায় দুই মাসের মাথায় তিন আসামিকে পাকড়াও করে পিবিআই। উদঘাটন করে আলোচিত এ হত্যার রহস্য। গতকাল রোববার খুনিচক্রের দুই সদস্যের দেখানো মতে, উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাঠের বাটামসহ বেশকিছু আলামত।
বিগত ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি নিখোঁজ হন জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের মালাকার পাড়ার পবন মালাকারের পুত্র তপু মালাকার। এ ঘটনায় থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করা হয়। পাঁচ দিন পর মুকুন্দ চেয়ারম্যানের বাড়ির পেছনের পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থানায় রেকর্ড করা হয় অপমৃত্যু মামলা। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। থানা পুলিশ তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতার কিংবা রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রায় দুই মাস আগে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান ইনকিলাবকে বলেন, মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর দ্রুত সময়ে তিন আসামিকে গ্রেফতার এবং খুনের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। দুইজন আসামি খুনের দায় স্বীকার করেছেন। আজ সোমবার তারা আদালতে জবানবন্দি দিতেও রাজি হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তদন্তের একপর্যায়ে গত ৭ ডিসেম্বর বসু কুমারকে (৩৩) গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সে বেশকিছু তথ্য দেয়। এ তথ্যের ভিত্তিতে ৯ ডিসেম্বর সুবল মালাকার ওরফে সপে মালাকারকে (২৭) মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন রাঙ্গুনিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় বাপ্পা চৌধুরী (৩২) নামে আরও একজনকে। তাদের তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, নিহত তপু মালাকার ওই তিনজনের বন্ধু ছিল। তারা একসাথে বসে মাদক সেবন করত। মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক বিক্রির সাথেও জড়িত ছিল তারা। তাদের অপর সহযোগী জনি মালাকার তপু মালাকারের কাছ থেকে মাদক বিক্রি বাবদ ৩০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। এ টাকা নিয়ে দুইজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে জনি মালাকার তপু মালাকারকে হত্যার উদ্দেশে ইয়াবা সেবনের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কাঠের বাটাম দিয়ে তার মাথার পেছনে আঘাত করে। অন্যরা তার হাত-পা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
খুনের পর গুমের উদ্দেশে পুকুরে পানিতে গাছের শিকড়ের নিচে রশি দিয়ে লাশ বেঁধে রাখে। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিমতে ওই পুকুর থেকে গাছের শিকড়ে বাঁধা রশি এবং মাথায় আঘাত করা কাঠের বাটামসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন