শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

এনজিওগুলোর চাপকে প্রাধ্যাণ্য ৭ দিনের মধ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের চেষ্টা

দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে- বিশেষজ্ঞদের অভিমত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:৩৬ পিএম

এনজিওগুলোর চাপকে প্রাধ্যাণ্য দিয়ে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আইনের খসড়া নিয়ে লিখিত বক্তব্য প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে ৭ দিনের সময় বেধে দিয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় এবং অপরিহার্য একটি আইনের সংশোধনী কার্যক্রমের লক্ষ্যে ৭ দিন সময় পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে অংশীজনদের মতামত উপেক্ষা করে আইনটির সংশোধনে এনজিওগুলোর চাপকেই আমলে নিচ্ছেন তারা। যা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত বলেও মনে করছেন তারা। একই সঙ্গে এই আইনটির সাথে জড়িত আছে দেশের অর্থনীতি, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা এবং টেকসই উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ।

সূত্র মতে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে আবারো সংশোধন আনতে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এনজিওগুলোর দাবির দিকেই নজর ছিল মন্ত্রণালয়ের। সভায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের খসড়া নিয়ে লিখিত বক্তব্য প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে ৭ দিনের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে চলছে নানমুখী সঙ্কট। এই সঙ্কটকালে এ ধরণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন সংশোধনীর লক্ষ্যে যে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য মতে, করোনা মহামারি পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দেশের অর্থনীতি টালমাটাল। সঙ্কটের পাশাপাশি অস্থির দেশের ডলারের বাজার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর মতে, বাংলাদেশ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য রফতানি করে গত বছর ১০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। একই সঙ্গে তামাক খাত থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করে যা এই অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালেও দেশের টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে অতীব জরুরী। তাই বলাই বাহুল্য এই রকম একটি অত্যাবশ্যকীয় এবং অপরিহার্য আইনের সংশোধনীর কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ৭ দিনের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এই রকম একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তাই ভবিষ্যতে কোন অবাঞ্চিত জটিলতার সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত থাকতে এই আইন প্রণয়নের কার্যধারাতে কিছুটা সময় বেশি দেয়াটাই সমীচীন হবে বলে মনে করেন নীতি নির্ধারকেরা।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি এনজিও’র প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বরাবরের ন্যায় এবারের সভায়ও উপেক্ষিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট অংশীজন বা স্টেকহোল্ডাররা। সংশ্লিষ্ট শিল্পের প্রতিনিধিরাতো উপস্থিত ছিলোই না, এমনকি এই সভাতে উপেক্ষিত হয়েছে এফবিসিআই, নাসিব এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক কিছু প্রতিষ্ঠানও।

এ বিষয়ে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গনী শোভন বলেন, দেশে প্রায় ১৫ লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের নিম্ন আয়ের খুচরা বিক্রেতা রয়েছেন। যার অধিকাংশই অস্থায়ী বা ভাসমান দোকানী। আইনটি সংশোধনে যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে এ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন ও জীবিকা জড়িত। যাদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা কাজ করি। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় আমাদেরকে আলোচনার জন্য রাখা হয়না, এটি বিস্ময়কর।

‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত)’ সংশোধনের খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি ও একটি সাবকমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এই কমিটি ও সাবকমিটিতে বিভিন্ন এনজিও’র উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি। কমিটির ১৯ জনের মধ্যে ১১ জন আর সাবকমিটির ১২ জনের মধ্যে ছয়জনই হচ্ছেন এনজিও ও বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। বাংলাদেশের মতো সদ্য মধ্যম আয়ের দেশের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ছাড়া এইরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন বাস্তবায়ন করা যুক্তিযুক্ত নয় কারণ স্বভাবতই বিদেশি এনজিও এবং কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা না করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করবে যা দেশের এইরূপ অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালে কোনভাবেই কাম্য নয়। ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে যখন আইন সংশোধিত হয় ও ২০১৫ সালে যখন বিধি চ‚ড়ান্তকরণ করা হয় তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তামাক খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও অ্যাসোসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ মতামত নিয়ে তা প্রণয়ন করে এবং পরে বাস্তবায়ন করে। যে কারণে পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ধূমপায়ীদের সংখ্যা ২০১০ সালে থেকে ২০২০ সালে ৪৪ শতাংশ থেকে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আপাতদৃষ্টিতে যেন তামাক নিয়ন্ত্রণ নয়, যেন তামাক নিষিদ্ধকরণ আইন নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অভিযোগ উঠেছে, নিজস্ব কোন গবেষণা এবং তথ্য উপাত্তের বহুমুখী যাচাইকরণ ছাড়াই বাস্তবর্জিত এই আইনের সংশোধনের তোড়জোড় করছেন। বৈঠকে গণশুনানি থেকে প্রাপ্ত মতামতের সারসংক্ষেপে পছন্দসই কিছু মতামতই গুরুত্ব পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

সংশ্রিষ্ট অংশীজনদের মতে, বৈঠকটি যদি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকই হয় তাহলে এখানে বিদেশি এনজিওদের কেন আমন্ত্রণ করা হলো। আর যদি এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের থাকতেই হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগ, সংশ্লিষ্ট সেক্টরের প্রতিষ্ঠান/অ্যাসোসিয়েশন, শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন, ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অগ্রাধিকার অনস্বীকার্য। নীতি প্রণয়নের চেয়ে এনজিওগুলো যদি নীতি বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিত তাহলে বরং দেশ ও জনগণের জন্য পদক্ষেপটি বেশি ভালো হত। উদাহরণস্বরূপÑ তামাক পণ্যের গায়ে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদর্শনের আইনটি সিগারেট ছাড়া অন্যান্য তামাক পণ্যের জন্য এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়নে গুরুত্ব না দিয়ে, তড়িঘড়ি করে নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়টি হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষ কোন গোষ্ঠীর চাহিদাকে মাথায় রাখা হলে বাস্তবায়নযোগ্য আইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। আইন সংশোধনের সময় সাধারণ মানুষের জীবিকা, ব্যবসা বাণিজ্য, বিশেষত বৈশ্বিক মন্দার এ সময়ে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর দিকে যৌক্তিক মনযোগ না দিয়ে আইনটি করা হলে, এটি হবে বাস্তবায়ন অযোগ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ একটি বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধি বলেন, দেশের এই অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালে এইরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনের সংশোধনী খসড়া চূড়ান্তকরণে এত অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত/মতামত প্রদান করা খুবই কষ্টসাধ্য। তাড়াহুড়ো করে এমন তাৎপর্যপূর্ণ, দেশ এবং জনস্বার্থ জড়িত আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিলে তা ত্রæটিপূর্ণ রয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এই ত্রæটিপূর্ণ আইনের অপপ্রয়োগ হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায় যা মাঠ পর্যায়ে হয়রানি এবং নকল পণ্য বৃদ্ধির উদ্বেগ সৃষ্টি করবে। ফলশ্রæতিতে এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এবং রাজস্ব আহরণের উপর বিরূপ প্রভাব বয়ে আনবে যা আমাদের মতো সদ্য মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করা এই স্পর্শকাতর মুহূর্তে কোনভাবেই কাম্য নয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ফারহানা ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪১ পিএম says : 0
এই বিশেষজ্ঞ কারা? জাতি তাদের দেখতে চায়। যে পন্যটি মানুষকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের পক্ষে যারা সাফাই গায়, তারা কোন স্বার্থের জন্য এভাবে কথা বলছেন, সেটা মানুষকে বুঝতে হবে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন কখনো কি ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়ে মরনব্যাথিতে আক্রান্ত মানুষগুলোর কষ্ট দেখেছেন? হয়তো দেখেননি, সেজন্যই এমন একটি মরনপন্যের পক্ষে সাফাই গাইছেন। আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত দিন।
Total Reply(0)
ফারহানা ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪২ পিএম says : 0
এই বিশেষজ্ঞ কারা? জাতি তাদের দেখতে চায়। যে পন্যটি মানুষকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের পক্ষে যারা সাফাই গায়, তারা কোন স্বার্থের জন্য এভাবে কথা বলছেন, সেটা মানুষকে বুঝতে হবে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন কখনো কি ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়ে মরনব্যাথিতে আক্রান্ত মানুষগুলোর কষ্ট দেখেছেন? হয়তো দেখেননি, সেজন্যই এমন একটি মরনপন্যের পক্ষে সাফাই গাইছেন। আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত দিন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন