রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মশা নিধনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। মশার যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ। এতদিন এডিস মশার উপদ্রব বেশি ছিল। ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবহনকারী এ মশার কামড়ে এ বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হয়েছে। এখন এডিস মশা কিছুটা কমেছে। এর ফলে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু কমেছে। এডিস মশার জায়গা ইতোমধ্যে দখল করে নিয়েছে কিউলেক্স মশা। এ মশার এটাই প্রজনন মওসুম। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কিউলেক্স মশার বাড়বাড়ন্ত বহাল থাকে। এ তথ্য দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অজানা নয়। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় মশা নিধন ও দমন অভিযান পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযানের কোনো খবর নেই। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০-১২টি ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাসে মশা দমনে কোথাও ওষুধ ছিটানো হয়নি। এমতাবস্থায়, মশার সংখ্যা কী পরিমাণে বেড়েছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। ঘরে-বাইরে, অফিস-আদালতে কোথাও মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নেই। রাতে গোটা শহর মশার দখলে চলে যায়। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মানুষ কয়েল, স্প্রে, ইলেস্ট্রিক ব্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করছে। তাতেও তেমন কাজ হচ্ছে না। মনে হতে পারে, কয়েল, স্প্রে ও ইলেক্ট্রিক ব্যাট কোম্পানি ও দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন সূত্রে গোপন চুক্তি বা সমঝোতা হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক, সিটি করপোরেশন নিরব। ফাঁকে চুটিয়ে ব্যবসা করে নিচ্ছে কয়েল, স্প্রে ও ইলেক্ট্রিক ব্যাটের কোম্পানিগুলো। এ ধরনের অনৈতিক কারবার আমাদের দেশে মোটেই নতুন নয়।

মশা নিধন-দমন দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। এ জন্য প্রতি বছর মোটা অংকের অর্থ বরাদ্দ থাকে। এই অর্থে মশার উৎপত্তি বা প্রজননস্থল যেমন, নালা-নর্দমা, জলাশয়, ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ স্থান ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা এবং ওইসব জায়গায় এমনভাবে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো, যাতে মশা জন্মাতে না পারে। এছাড়া উড়ন্ত মশা নিধনে ওষুধ স্প্রে করারও কথা। দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, তারা মশার প্রজননস্থলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছে। উড়ন্ত মশা নিধনেও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তাদের এ দাবির পক্ষে বাস্তব প্রমাণ খুব একটা মেলে না। তাদের দাবি সত্য হলে মশার উপদ্রব এতটা কখনোই বাড়তে পারতো না। যখন এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটছিল, তখন দুই সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের কিছুটা নড়চড়া দেখা দিয়েছিল। মহল্লায়-মহল্লায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন দুই সিটি করপোরেশনের কোনো তৎপরতা নেই। নাগরিক সচেতনতাও উধাও হয়ে গেছে। আগে শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ মশা নিধন কার্যক্রমে বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও মহল্লার উৎসাহী তরুণসমাজকে অংশ নিতে দেখা যেতো। এখন আর এসব দেখা যায় না। এখন দুই সিটি করপোরেশনই ভরসা, যারা দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সক্রিয় ও আন্তরিক নয়। নাগরিকদের দুর্ভোগ ও যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ার এটাই প্রধান কারণ। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনাদের বেশির ভাগের কাজ যেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিশনবাজি ইত্যাদি। এসব ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। ওয়ার্ডের শান্তি-শৃংখলা-নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, উন্নয়ন ও মানুষের সুখ-সুবিধা দেখাই তো তাদের কাজ হওয়া উচিত। তারা সবাই কি এসব কাজ করে? ঢাকা শহর দিনকে দিন মানুষ বসবাসের উপযুক্ততা হারাচ্ছে। এমন কোনো দূষণ নেই, যা এখানে অত্যাধিক মাত্রায় নেই। এই শহরে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ঠিক মতো কাজ করতো, তাহলে কি বসবাসের অযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকা আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত হতো?

মশা ছোট প্রাণী বটে; কিন্তু এর উৎপাৎ-উপদ্রব মোটেই হেলাফেলার বিষয় নয়। ‘মশা মারতে কামান দাগা’ বলে একটি প্রবাদ আছে। এ প্রবাদ থেকেই মশার উপদ্রবের বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। মশা বিরক্তিকর এবং এর সংঘবদ্ধ ও উপর্যুপরি কামড় উপেক্ষা করা যায় না। শুধু তাই নয়, মশা, বিশেষ করে কিউলেক্স মশা ম্যালেরিয়া-ফাইলেবিয়ার মতো রোগের কারণ। অতীতে ম্যালিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যেতো। এখন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মশার কারণে সৃষ্ট রোগব্যাধীতে মৃত্যু ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ খরচ হয়, যা অধিকাংশের পক্ষে বহন করা কঠিন। মশা যেহেতু কারণ, কাজেই মশা নিধন ও দমন করতে পারলে মশাবাহিত রোগব্যাধি ও চিকিৎসা ব্যয় থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এ জন্য মশা নিধন-দমনে সকল প্রচেষ্টা কেন্দ্রীভূত করতে হবে। অবিলম্বে মশার প্রজননস্থলগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে। একই সঙ্গে উড়ন্ত মশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দুই সিটি করপোরেশনকে অবিলম্বে এই দুটি কাজ করতে হবে। শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজও জোরদার করতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনারদের এসব কাজে সক্রিয় ও তৎপর করতে হবে। নাগরিকদেরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বাড়িঘর ও বাড়িঘরের আশ-পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশার ব্যাপারে আরো সতর্ক ও সাবধান হতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন