রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোটির নীট মুনাফা সর্বকালের সর্বোচ্চ উন্নীত হলেও যাত্রীসেবা উন্নত করাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ রুট সমূহে বাস সার্ভিস সম্প্রসারণ হচ্ছে না। দক্ষিণাঞ্চলে বিআরটিসি’র একমাত্র এ বাস ডিপোটি গত ৪ মাসে ২ কোটি টাকারও বেশি নীট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হলেও এখনো অচল বাসের বাহিরে ডিপোটির সচল বাসের স্থান সংকুলন হচ্ছে না। দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার একমাত্র এ বাস ডিপোটি আগস্ট মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা থেকে সেপ্টেম্বরে ৩ কোটি টাকারও বেশি টার্ণ ওভারের বিপরীতে দেশের শীর্ষ মুনাফা অর্জকারী ইউনিটের মর্যাদা লাভ করে।
মুনাফার পুরো অর্থই সংস্থার সদর দফতরে জমা হলেও সচল বাসের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ রুটেও বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু সহ চলমান রুটে কাঙ্খিত যাত্রী সেবা প্রদান করতে পারছে না। দেশের শীর্ষ মুনাফাকারী এ বাস ডিপোটি নানা সীমাবদ্ধতায় এখনো দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ক্ষেত্রে যাত্রীদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছে না। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেনা বেসরকারি পরিবহন সংস্থাগুলোর সাথে।
বরিশালে সংস্থাটির বাস ডিপোটিতে বর্তমানে ৭০টি নতুন ও পুরনো বাসের মধ্যে গড়ে চালু থাকছে ৪০টি। এরমধ্যে এসি ও নন এসি মিলিয়ে নতুন গাড়ির সংখ্যা মাত্র ২০টির মতো। নতুন ও পুরনো এসব বাস দক্ষিণে সাগর পাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরবঙ্গের রংপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত বিআরটিসির বরিশাল বাস ডিপো যাত্রী পরিবহন করছে। এমনকি পদ্মা সেতু চালুর পরে বরিশাল মহানগরী ছাড়াও ভান্ডারিয়া ও কুয়াকাটা থেকেও ঢাকায় সরাসরি বাতানুকুল বাসে যাত্রী পরিবহন করছে বিআরটিসি। এছাড়াও ৫টি দোতালা ও ১টি একতলা বাসের সাহায্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহন করেছে সংস্থাটি। কিন্তু মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকা পরিচালন আয়ের এ ডিপোটিতে দীর্ঘদিন ধরেই আরো এসি বাস দেয়ার দাবির বিষয়টি সদর দফতর থেকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
বরিশালে এ ডিপোটির মাত্র ১৪টি এসি বাসের মধ্যে ১১টির সাহায্যে বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এমনকি ডিপোটিতে সচল ৪০টি এসি/নন এসি বাসের অন্তত কুড়িটিই দীর্ঘ দিনের পুরনো। দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ যাত্রীদের পক্ষ থেকে বরিশাল ছাড়াও কুয়াকাটাসহ এ অঞ্চলের প্রতিটি জেলা সদর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার পাশাপাশি খুলনা-যশোর-বেনাপোল এবং রাজশাহীসহ উত্তবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ জেলা সদরের সরাসরি বাতানুকুল বাস চালুর দাবি রয়েছে। কিন্তু দেশের শীর্ষ মুনাফাকারী এ বাস ডিপেটাটিতে বিগত দীর্ঘদিনেও কোনো গাড়ি বরাদ্দ নেই।
অথচ অতি সম্প্রতি বরিশালÑখুলনা/মোংলা মহাসড়কের বেকুঠিয়ায় কঁচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী’ চালুর ফলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে ফেরিবিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের সাথেও খুলনা, যশোর, বেনাপোল ও ভোমড়া বন্দরের সহজ সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাত্র দু ঘণ্টায় বরিশাল ও খুলনার মধ্যে ১০৫ কিলোমিটার দুরত্বের মহাসড়ক পাড়ি দিচ্ছে বেসরকারি যানবাহনগুলো।
কিন্তু প্রয়োজনীয় মানসম্মত বাসের অভাবে বেসরকারি বাস-মিনিবাসের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না রাষ্ট্রীয় বিআরটিসি। বর্তমানে বরিশাল থেকে সকাল-বিকেল এ রুটে মাত্র ৩টি ও কুয়াকাটা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনায় আরো দুটি বাস সার্ভিস পরিচালিত হলেও তার ৩টিই দীর্ঘদিনের পুরনো। এছাড়া নিকট অতীতের বরিশালÑখুলনাÑযশোরÑবেনাপোল রুটেও সংস্থাটির কোনো বাস সার্ভিস এখন অবশিষ্ট নেই।
অপরদিকে অক্টোবরে বরিশাল-গোপালগঞ্জ-নড়াইলÑযশোর মহাসড়কের কালনায় দেশের প্রথম ৬ লেনের ‘মধুমতি সেতু’ চালুর মধ্যে দিয়ে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল থেকে যশোর ও বেনাপোলের ফেরিবিহীন সংক্ষিপ্ত ও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ রুটেও যাত্রীবান্ধব সেবা প্রদানের মতো কোনো বাস রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির বরিশাল ডিপোতে অবশিষ্ট নেই। অথচ এ সেতুটি চালুর ফলে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে যশোর ও বেনাপোলের দুরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার হ্রাস পেয়েছে।
এসব বিষয়ে বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোর ব্যবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে, ‘সীমিত সাধ্যের মধ্যেও ঢাকা, খুলনা ও বেনাপোল সহ সব জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানের সাথে যাত্রীবান্ধব সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করার কথা জানান। এজন্য সদর দফতরের কাছে আগেই এসি বাস চেয়ে আবেদনের কথাও জানান তিনি। গাড়ির ব্যবস্থা হলে যাত্রী সেবা সম্প্রসারণসহ মান উন্নত করার লক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান তিনি। তবে অদুর ভবিষ্যতে তা সম্ভব হবে কিনা সে সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন