যশোরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা। দিন ব্যাপী জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সাথে গোটা লাল দিঘি এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে এবিষয় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। অন্যদিকে এমন বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেও দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা শহরের বিক্ষোভ মিছিল করেন।
দলীয় কার্যালয়ে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সাংবাদিকদের বলেন, ১০ ডিসেম্বর দেশের জনগণ পাহাড় সমান বাধা-বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় কর্মসূচি সফল করেছে। সেই গণসমাবেশ থেকে বিএনপি জনগণের মুক্তির সনদ ১০ দফা ঘোষণা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ছিল প্রথম কর্মসূচি। গেল ৭ ডিসেম্বর পল্টন পার্টি অফিসে পুলিশ যে নৈরাজ্য চালিয়েছিল। সেখানে আমাদের মকবুল হোসেন নামের এক সহকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড.রুহুল কবির রিজভীসহ দলের সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত দেশের সকল মহানগর এবং জেলা পর্যায়ে আজকের কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচিতে নিয়ে আসা মাইক, চেয়ার পুলিশ নিয়ে গেছে। চেয়ার ও মাইক বহনকারী দুই ভ্যান চালকসহ একজন মহিলাদল নেত্রীসহ ৬জনকে আটক করা হয়েছে।
বিজয়ের মাস মহান স্বাধীনতার ৫১ বছর পর জনগণ তার সাংবিধানিক অধিকারের বিষয় কথা বলতে পারবে না। দাবি আদায়ের জন্য মাঠে নামতে পারবে না। তাহলে কি কারণে ৫১ বছর পূর্বে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা রক্ত দিয়েছিল? তিনি এমন ঘটনা তীব্র নিন্দা জানান। অবিলম্বে আটক নেতা কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত গ্রাম পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করে নিরীহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের সকল মৌলিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য জনগণ সাথে নিয়ে আমরা লড়াই করছি। সে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের অজস্র নেতা কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু এভাবে বাধা দিয়ে জনগণের ন্যায় সঙ্গত দাবি আদায় থেকে বিচ্যুত করা যাবে না। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বিজয়ের মাসে প্রশাসনের সদস্যদেরকে এই ধরণের কর্মকাডন্ত থেকে বিরত থাকার আহŸান জানান। একই সাথে তাদেরকে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের আগ্যাবহ না হয়ে নয় কিংবা বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মী কিংবা ক্যাডারের মত আচরণ না করে পেশাদারিত্বের দায়িত্ব পালনসহ জনগণের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করার আহŸান জানান।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন আমরা যশোরে শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালনের যে সাংস্কৃতি লালন করি। কিন্তু আজকে একটি বিচিত্র ঘটনা বল প্রয়োগ করে পুলিশের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বাভাবিক পরিবেশে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। ফ্যাসিস্ট সরকার জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে আছে। তারা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে সেটি প্রতিরোধ করতে তারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চায় না বলে পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহŸায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন। এদিকে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ এমন পরিস্থিতির মধ্যেও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরএনরোড থেকে মনিহার এলাকা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলি করে। এদিকে জেলা বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে জেলা বিএনপি কার্যালয় সহ লাল দিঘীর চারপাশ পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। লাল দিঘির প্রতিটি প্রবেশ পথ বলা চলে পুলিশ অঘোষিত কারফিউ দিয়ে আটকে দেয়। জনসাধারণ দুরে থাক গণমাধ্যমকে কর্মীদেরও প্রবেশে এক ধরণের বাধা সৃষ্টি করা হয়। জিম্মি হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। তবে শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হন। গোটা এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখার কারণে তাদের সারাদিনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এবিষয় কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের কাছে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন