রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা জরুরি

| প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রিন্টু আনোয়ারনানা শঙ্কা ও বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে অবশেষে ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির গণসমাবেশ। গোলাপবাগ মাঠে এ গণসমাবেশ হলেও বিপুল সংখ্যক মানুষ ভয়-ভীতি, শঙ্কা, আতঙ্ক ও নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে যোগ দিয়েছে। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট না হলে জনসমাগম আরো বেশি হতো বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। অবশ্য ১০ তারিখের আগে থেকেই গণসমাবেশের স্থান নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের গ্রফতার, কেন্দ্রীয় কার্যালয় তছনচ, নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে ধরপাকড়, ঢাকা আসার পথে পথে তল্লাশিসহ অনাকাক্সিক্ষত নানা ঘটনা ঘটে। গণসমাবেশ নিয়ে নানা গুজবও রটে। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ হয়েছে। সমাবেশ শেষে যে যার মতো বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু অপরাজনীতির সংস্কৃতি আর বিতর্কিত কথাবার্তার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ থেকে দেশ কি রক্ষা পেল?

‘বিশ্বকাপ খেলা দেখি আর ভাবি, কবে আমাদের ছেলেমেয়েরা এই বিশ্ব আসরে খেলবে? বিশ্বকাপ চলছে কাতারের রাজধানী দোহায়। ১৯৩০ সালের প্রথম আসরের পর কাতার বিশ্বকাপকে সবচেয়ে ‘আঁটসাঁট’ বলছে ফিফা। স্বাগতিক কাতারসহ ৩২টি দলের একটি করে ‘টিম বেস ক্যাম্প’ আছে, সঙ্গে ‘টিম বেস ক্যাম্প হোটেল’। ৩২টি দলের শুধু থাকার জায়গা নয়, অনুশীলনেরও আলাদা আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করা। ৩২টি দলের মধ্যে ২৪টিই ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে। এই দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থকে ঘিরে শুধু কাতার নয়, পুরো বিশ্ব ভাসছে উৎসবের আনন্দে। জাঁকজমক বিলাসিতার অভাব নেই কাতার বিশ্বকাপে। চোখ-ধাঁধানো স্টেডিয়াম, বিলাসবহুল হোটেল, জাঁকজমক পুরো বিশ্বকে এরই মধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দেশে এ উৎসবের আড়ালে যে বেদনা, যে কান্না, যে মৃত্যু তা কি আমরা মনে রেখেছি?

প্রায় নিয়মিত সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। শাসনব্যবস্থা, নির্বাচন, ভোট, সরকারের লেজিটেমিসি নিয়ে হেন কোনো কথা নাই, বলা হচ্ছে না। এর বিপরীতে কেবল ক্ষমতাসীন দল নয়, পুলিশ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সুধীজন সরকারের বন্দনা করছে। এটি করতে গিয়ে অনেক অগ্রহণযোগ্য কথাও বলে ফেলছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষও অনেক সময় বেফাঁস কথা বলে থাকেন। ফলে মেধা-শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতা, সততার বিষয়টি প্রশ্ন হয়ে থাকছে।

নিম্নমানের ভাষায় কে কাকে কত খাটো করবেন সেই চেষ্টাও থাকে। একজন কিছু একটা বললে আরেকজনের যেন দায়িত্ব হয়ে পড়ে তার জবাব দেয়ার। পরস্পর বিরোধিতা চলছেই। একদলের কর্মসূচিকে আরেক দল নাটক বলতে বলতে এখন ঘটনাকেও নাটক বলতে মুখে বাধে না। আদালত চত্বর থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়াকেও নাটক বলতে দ্বিধা করছে না। আবার সব জান্তার ভাবও আছে। ফলে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সততা ও ভালো কাজের প্রতিযোগিতা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে অশালীনতা ঠাঁই নিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনীতিতে সঠিক সময়ে সঠিক চাল দিতে না পারলে সব থাকার পরও দাবার মতো সামান্য এক সৈন্য কিংবা এক ঘোড়ার কাছেও রাজাকে হেরে যেতে হয় শোচনীয়ভাবে। ক্যারম খেলায় এক ঘুঁটিতে চার-পাঁচ ঘুঁটিও ফেলে দেয়া যায়। রাজনীতিতে সাপ-লুডু, কাবাডি, ক্যারম, দাবা ধরনের খেলা বরাবরই চলে। এসব খেলায় ওপরে উঠতে থাকা পক্ষ নিজেদের শক্তি-মহাশক্তি ভাবতে থাকে। দাপটের শিখরে আজীবন থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতেও উঠে পড়ে লাগে। হালচিত্র আরও ভিন্ন। বৈশ্বিক পরাশক্তির দ্বন্দ্বে দেশে দেশে সরকার পরিবর্তনের ঢেউ বইছে। আফগানিস্তান, হাইতি, কিউবার মতো দেশগুলোতে অস্থিরতা চলছে। এর প্রভাব অন্যদেশেও পড়ছে। ছোট ছোট বিভিন্ন দেশে পছন্দের সরকার বসানোর খেলায় নেমে পড়ছে পরাশক্তির দেশগুলো। এর বাইরে আমাদের দেশও নয়। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সমঝোতা না হলে তার কুফল পড়তে পারে। কাতারেও যে শুধু ফুটবল খেলা হচ্ছে, তা নয়। সেখানে তেলের খেলাও চলছে। বিশ্ব জ্বালানির সংকটের এ সময়ে কাতারের সঙ্গে ২৭ বছরের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার চুক্তি করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে চীন। এদিকে রাশিয়ার জ্বালানিতে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিলেও চীন তার থোড়াই কেয়ার করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের খবর বলছে, চলতি বছর চীনে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক। এতে মস্কোরও রপ্তানি বেড়েছে, আবার চীনেরও লাভ হচ্ছে। কারণ, সে রাশিয়ার কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে কম মূল্যে জ্বালানি পাচ্ছে। এর পাশাপাশি ইকোনমিক টাইমসের সংবাদ হচ্ছে, রাশিয়া থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল পরিশোধন করে বাংলাদেশে রপ্তানির চিন্তা করছে ভারত। আন্তর্জাতিক এসব কর্মকাণ্ড ভেতরে ভেতরে গড়াচ্ছে অনেক দূর। সেদিকে নজর দেওয়া আমাদের জন্য সময়ের দাবী। বৈশ্বিক মহামারি করোনার পর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশ্বমন্দার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। বেড়ে গেছে জ্বালানি, খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম। রিজার্ভ কমেছে। এসব কারণে ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশে গুজব বাড়ছে।
এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট
rintu108@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন