শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

শীতে অ্যাজমার সমস্যা

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। ঋতুর পরিবর্তনে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হয়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে আমাদের অনেকেই স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাধারণত শীতকালীন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, কোল্ড এলার্জি বা শীত সংবেদনশীলতা। আমরা দেখে থাকি শীত আসলেই অনেক শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন বা সারা শীত জুড়ে অসুস্থ থাকেন। এর বেশির ভাগ হয়ে থাকে কোল্ড এলার্জির কারণে।
ঠাÐা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া, সুগন্ধি, তীব্র গন্ধ, পুরাতন পত্রিকা বা বইখাতার ধুলা যাতে মাইট থাকে, ফুলের রেণু, মোল্ড ইত্যাদি উপস্থিতি অনেকেই একেবারে সহ্য করতে পারেন না। এসবের উপস্থিতি স্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা এ্যাজমা, সর্দি ইত্যাদির দেখা দেয়।
এসব বিষয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এলারজেন বলা হয়। এসব এলারজেনজনিত উপসর্গকে আমরা এলার্জি বলে থাকি। সুতরাং প্রচÐ শীত ও অনেকের জন্য এলারজেন হিসেবে কাজ করে এবং এ কারণে সৃষ্ট উপসর্গকে কোল্ড এলার্জি বলা হয়।
কেন হয়? আমাদের নাসারন্ধ ও শ্বাসনালীতে ¯œায়ুকোষের কিছু রিসেপ্টর আছে। এই রিসেপ্টরগুলো আবার ভ্যাগাস নার্ভ (এই জোড়া নার্ভ যা শ্বাসনালী ও কণ্ঠনালীর মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণকে উদ্দীপ্ত করে) এর সাথে সংযুক্ত। ইতোপূর্বে উল্লেখিত এলারজেনসমূহ শ্বাসনালীর মাংসপেশীর সংকোচন ঘটে এবং শ্বাসনালী সরু হয়ে যায় তখন রোগীর শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি দেখা দেয়। কাদের বেশি হয়? সাধারণত খুব কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি দেখা দেয়, তবে যে কোন বয়সেই হতে পারে।
শীতকালে কেন বেশি হয়? শীতকালে কেন এ উপসর্গ বেশি হয় তা এখনো পরিপূর্ণভাবে জানা যায়নি তবে অনেক রোগীর সামগ্রিক অবস্থা পরীক্ষা করে কিছু জিনিস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে যেমন- আবহাওয়ার অবস্থা, দ্রæত তাপমাত্রা এবং বায়ুচাপের পরিবর্তন, উচ্চ আর্দ্রতা মোল্ড ও মাইট-এর বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী যা শীতকালীন রোগগুলোর কারণগুলোর অন্যতম।
উপসর্গসমূহ : নাক দিয়ে পানি পড়ে, নাক চুলকায়, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বাঁশির মতো আওয়াজ বের হওয়া, বুক চেপে আসা ইত্যাদি
কি করণীয়? যে কারণে এ উপসর্গগুলো দেখা দেয়, এলার্জি টেস্ট করে কারণ নির্ণয় করে তা পরিহার করে চলা উচিত। ঠাÐা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এক ধরনের মুখোশ (ফিল্টার মাস্ক) বা মুখবন্ধনী ব্যবহার করা যেতে পারে। যা ফ্লানেল কাপড়ের তৈরি এবং মুখের অর্ধাশসহ মাথা, কান ঢেকে রাখে। ফলে ব্যবহারকারীরা উত্তপ্ত নি:শ্বাস গ্রহণ করতে পারেন। শীত প্রধান দেশে সাধারণত তাদের শীতকালীন বিশেষ পোশাক-এর সাথে এই মাস্ক বা মুখোশ ব্যবহার করে থাকেন। সালবিউটমল ইনহেলার নেয়া যেতে পারে কারণ এ ওষুধ উপসর্গ নিসরণে প্রথম পছন্দনীয় ওষুধ। দীর্ঘমেয়াদি ভালো থাকার জন্য স্টেরয়েড ইনহেলার নেয়া যেতে পারে। যে এলারজেন একেবারেই পরিহার করা সম্ভব নয় অথচ শ্বাসকষ্টের জন্য বহুলাংশে দায়ী যেমন মাইট, মোল্ড, পোলেন বা পরাগ রেণুর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকা যায়। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকা যায়। ভ্যাকসিন পদ্ধতি-এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কটিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতিতে চিকিৎসাকে এলার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেন। এটাই এলার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার চিকিৎসা পদ্ধতি।
আগে ধারণা ছিল এলার্জি একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নীত হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে এলার্জি জনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। উন্নত দেশের সকল প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। তাই সময়মত এলার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ষ ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
দি এলার্জি অ্যান্ড এ্যাজমা সেন্টার, ৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা
ফোন : ৮১২৯৩৮৩, মোবাইল : ০১৭২১৮৬৮৬০৬

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন