শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নেছারাবাদে প্রচারবিমুখ গরীবের ডাক্তার আসাদুজ্জামান

নেছারাবাদ(পিরোজপুর)সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:২০ পিএম

নেছারাবাদ উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার মো: আসাদুজ্জামান। মা ও শিশু রোগ বিষয়ক অভিজ্ঞ ডাক্তার আসাদুজ্জামান সার্বক্ষনিক ব্যস্ত থাকেন অফিস সময়ের রোগী নিয়ে। অফিস সময় ছাড়াও কাজ পাগল এ মানুষটির কাছে বেশির ভাগ রোগীই আসেন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। যাদের মধ্য অধিকাংশই গরীব ও দিনমজুর। ওইসব রোগীদের কারো কারো নুন আনতে পানতা ফুরায় বলে অনেক রোগী দেখেন ফ্রীতে। তাদের মধ্য কাউকে আবার ফ্রী দেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনে দেন নিজের জমানো টাকায়। যে কারনে ডাক্তার আসাদুজ্জামান ওইসব গরীব দু:খি মানুষের কাছে এখন গরীবের ডাক্তার বলে পরিচিত। মানুষের জন্য এত কিছু করার পরও প্রচার বিমুখ তিনি। আর প্রচার বিমুখ হয়েই ফ্রীতে রোগী দেখা, ঔষধ কিনে দেওয়া, পাশাপাশি সাধ্যনুযায়ি নীরবে সাহয্য সহযোগীতা করেন অনেক গরীব দু:খি মানুষকে। মানুষের জন্য এত সব কাজ করেও তিনি কখনো গনমাধ্যমে ধরা দিতে চাননি তিনি।

ডাক্তার আসাদুজ্জামান পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার প্রধান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার। হাসপাতালের একমাত্র মা ও শিশু রোগে অভিজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তার তিনি। তিনি অফিসের দায়িত্বের পাশাপাশি অবসর সময়েও রোগী দেখেন হাসপাতালে বসে। তিনি নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন রোগীদের। তার কাছে আসা গরীব গর্ভবতী মায়েদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে সল্পমুল্যে সিজারিয়ান অপারেশন করেন নিজে। কখনো কখনো রোগীর স্বজনদের দুরবস্থা দেখে ফ্রীতেও করেন সিজারিয়ান অপারেশন। মন দিয়ে রোগীর কথা শুনে ঔষধ লিখেন রোগীদের। প্রয়োজনে রোগীর কথা শুনে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য ভাল ডায়গনস্টিক থেকে রিপোর্ট করিয়ে আসতে পরামর্শ তাদের।

স্থানীয় কয়েক যুব সংগঠকরা জানান, ডাক্তার আসাদুজ্জামান চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি একজন বড় ক্রীয়া সংগঠক। তার নেতৃত্বে অত্র উপজেলা সহ নিজ গ্রামের বাড়ীতে গড়ে উঠেছে একটি ক্রীয়া সংগঠন। তার সংগঠনের অনেক মেধাবী খেলোয়ার খেলায় উৎসাহ বাড়ানোর জন্য সাহয্য করে থাকেন তাদের লেখা পড়ায়। তিনি নিজ এলাকায় স্থানীয় কয়েকটি মসজিদ মাদরাসায় দান অনুদান করে যাচ্ছেন মাঝেমধ্য। তার টাকায় চলে এলাকার দুটি মাদরাসা।

কথা হয় উপজেলার সুঠিয়াকাঠি ইউনিয়নের বালিহারি গ্রামের চার বছর বয়সি একটি শিশু সন্তানের দিনমজুর অসহায় পিতার সাথে। তিনি বলেন, অসহায় আমার একটি চোখ নেই। একটি হোটেলে নিয়মিত মজুরির কাজ করি। তার একটি চোখ নষ্ট। কাজ করে যা পাই তা নিয়ে সংসার চালানোয় কষ্টকর। আমার আয়ে মা,স্ত্রী,এক সন্তান ও একটি ভাই নির্ভরশীল। তার উপরে সন্তানের চিকিৎসার খরচ ভাবাই যায়না। সন্তানটি ঠান্ডা,হাপানিতে আক্রান্ত। ডাক্তার দেখিয়ে সন্তানটির ঔষধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। উপায়ান্তু না পেয়ে নেমেছিলেন রাস্তায় সন্তানের চিকিৎসার জন্য। ডা: আসাদুজ্জামান স্যার তা টের পেয়ে নিজ খরচায় সন্তানের চিকিৎসা সহ সব ঔষধ কিনে দিয়ে আমাকে কিছু টাকাও দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না শর্তে উপজেলার একটি ক্লিনিকে সামন্য বেতনে কর্মরত তিন সন্তান সন্তনির জননী এক সেবিকা বলেন, ডাক্তার আসাদুজ্জামান স্যার একজন হৃদয়বান লোক। করোনা মহামারি সময় ক্লিনিকে কোন কাজ ছিলনা। তখন সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এমন সময় ডাক্তার আসাদুজ্জামান আমাদের ক্লিনিক সহ হাসপাতাল এলাকার দু'টি ক্লিনিকে কর্মরত সব অসহায় লোকদের তিনি চাল,ডাল,আলু দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনে দিয়ে সাহয্য করেছেন। সাধ্যনুযায়ি সব সময় খোজ নিয়েছেন আমাদের।

নেছারাবাদ উপজেলার পাশ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার গ্রামের একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ডা: আসাদুজ্জামান। তার এলাকার আব্দুস সোবাহান (৮২) নামে এক বয়োজেষ্ঠ্য লোক জানান, আসাদুজ্জামান একজন গরীবের ডাক্তারই নন। তিনি এলাকার অহংকার। তার উপার্জনে এলাকার দুটি মাদরাসা মসজিদ নির্ভরশীল। তিনি না থাকলে আমাদের খুব সমস্যা হত। তিনি এলাকার কয়েকটি মেধাবী ছাত্রের লেখাপড়া সহ সব ব্যায় ভার বহন নিজের কাধে নিয়েছেন। যা অনেক ধর্নাঢ্যবান লোকেরা এ জামানায় করেনা।

এ ব্যাপারে ডাক্তার আসাদুজ্জামান জানান, আমি যা করি এটা কোন প্রচারের জন্য নয়। মানুষের সেবা করা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি বলেন আমি গ্রামের মানুষ। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার আদর্শে আমি সবসময় অসহায় মানুষদের মধ্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আনন্দবোধ করি। এটা ঘটা করে কাউকে বলার কিছু নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন