চকরিয়া ও পেকুয়ার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, সউদী আরবের সাথে আমাদের গভীর ধর্মীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। এই কারণে সউদী আরব সরকার বাংলাদেশের শিক্ষা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। আজকেও ৩টি ভবন ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে আমার দুইটি উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। জনাব জাফর আলম সোমবার চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ভবন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ প্রোগ্রাম ২য় পর্বের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে সিডর আক্রান্তদের জন্য ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক কর্তৃক নির্মিত ৩টি ভবন স্কুল/ মাদরাসা/সাইক্লোন শেল্টার হস্তান্তর কার্যক্রম সোমবার সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, পেকুয়ার রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ভবন এবং চকরিয়ীর পালাকাটা দাখিল মাদরাসা ও আনোয়ারুল উলুম কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসা ভবন।
এই ভবন উদ্বোধন হস্তান্তর উপলক্ষে সোমবার সকালে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ভবন কর্তৃপক্ষের নিকট হস্থান্তর করা হয়। একইভাবে দুপুরে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেপি দেওয়ানের কার্যালয়ে পৃথক এক সভার আয়োজন করা হয়। এখানে পালাকাটা দাখিল মাদরাসা ও চকরিয়া আনওয়ারুল উলুম কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসা ভবন কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সউদী আরবের মরহুম বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ইন্তেকালের আগে এই সকল শেল্টার নির্মাণের অর্থ অনুদান করে গেছেন।
অনুষ্ঠান সমুহে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ প্রোগ্রাম ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাঈদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শাখা-২ এর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব, সেলিনা কাজী। বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ প্রোগ্রাম ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক কর্মসূচী সমন্বয় অফিসের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর, মোঃ আরিফ শহিদ। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, মোহাম্মাদ রেজাউল করিম। সংশিষ্ট অধিদপ্তর এবং বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ প্রোগ্রামের সমন্বয়ক পল নরম্যান বার্ড। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, প্রকল্প পরিচালক, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধায়ন পরামর্শকগণ।
প্রকল্প ভবন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের স্থানীয় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি আয়োজনকে সফল ও সুন্দর করে তুলে।
ইতোপূর্বে এই কর্মসূচির ১ম পর্বে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মোট ১৭২টি স্কুল-কাম-সাইক্লোন শেল্টার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই কর্মসূচির ২য় পর্বের অধীনে মোট ১৩টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে ১টি এই অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে,এই ভবন হস্তান্তর কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হয় এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। এই প্রোগ্রামের প্রতিটি আধুনিক স্থাপনা ২৪০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদানে সহায়ক হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ২০০০ (দুই হাজার) মানুষ এবং ৫০০ গবাদি পশু একেকটি ভবনে আশ্রয় নিতে পারবে যা বাংলাদেশের জন্য প্রায়শই অতি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
উল্ল্যেখ্য, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ১৩০ মিলিয়ন (১০ কোটি) মার্কিন ডলার দান করার সময় বাদশা আবদুল্লাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ) অনুরোধ করেছিলেন যেন তাঁর নাম প্রকাশ করা না হয়। এই অনুদানের দুটি অংশের মধ্যে রয়েছে (i) ১১০ মিলিয়ন (১১ কোটি) মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় স্কুল-কাম-সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ। আর (ii) ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) মার্কিন ডলার ওয়াকফ্ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের কৃষিসহ অন্যান্য উদ্যোগে সহায়তা প্রদান করা।
স্কুল-কাম-সাইক্লোন শেল্টার ভবন এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা প্রতিঘন্টায় ২৬০ কিঃমিঃ বেগ পর্যন্ত বায়ুপ্রবাহ (ঘূর্ণিঝড়) প্রতিরোধে সক্ষম। ভবনগুলোতে পরিবেশবান্ধব ডিজাইন, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, বীকন লাইট, উন্নতমানের আসবাবপত্র ইত্যাদি সুবিধা সংযোজিত হয়েছে। এতে সুপেয় পানি সরবরাহ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, যা এই উপকূলীয় অঞ্চলে, দুর্যোগের সময় পানির অভাব অনেকটাই পূরণ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন