ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। ঋতুর পরিবর্তনে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হয়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে আমাদের অনেকেরই স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আমারা দেখি শীত আসলেই অনেক শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন বা সারা শীত জুড়ে অসুস্থ থাকেন। এর বেশীর ভাগের জন্য দায়ী করা যায় কোল্ড এলার্জিকে।
ঠান্ডা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া, সুগন্ধি, তীব্র গন্ধ, পুরাতন পত্রিকা বা বই খাতার ধুলা যাতে মাইট থাকে, ফুলের রেনু, মোল্ড ইত্যাদিন উপস্থিতি অনেকেই একেবারে সহ্য করতে পারে না। এসবের উপস্থিতি শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা এ্যাজমা, সর্দি ইত্যাদি দেখা দেয়। এসব বিষয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এলার্জেন বলে। আর এসব এলার্জেন ঘটিত উপসর্গকে আমরা এলার্জি বলি।
সুতরাং প্রচন্ড শীতও অনেকের জন্য এলার্জি হিসাবে কাজ করে এবং একারনে সৃষ্ট উপসর্গকে কোল্ড এলার্জি বলা হয়।
কেন এমনটা হয়ঃ আমাদের নাকে ও শ্বাসনালীতে স্নায়ুকোষের কিছু রিসেপ্টর আছে। এলার্জেন সমূহ শ্বাসনালীর রিসেপ্টর নার্ভকে উদ্দিপ্ত করে। ফলে শ্বাসনালীর মাংশপেশির সংকোচনে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়, ফলাফল শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি।
কাদের বেশী হয়ঃ সাধারনত খুব কম বয়সি বাচ্চদের মধ্যে এর কোপ বেশী তবে সব বয়সেই এটি হতে পারে।
শীত কালে কেন বেশী হয়ঃ কেন বেশী হয় তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে অনেক রুগীর কিছু সামগ্রীক অবস্থা বিবেচনা করে কিছু কারন চিহিত করা সম্ভব হয়েছে যেমন-আবহাওয়ার অব¯থা, দ্রæত তাপমাত্রা ও বায়ুচাপের পরিবর্তন, উচ্চ আদ্রতা, মোল্ড ও মাইটের বংশ বিস্তারের জন্য উপযোগী শীতকালীন আবহাওয়া ইত্যাদি।
উপসর্গ সমূহঃ নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক চুলকায়, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বাঁশির মতো আওয়াজ বের হওয়া, বুক চেপে আসা ইত্যাদি।
কি করনীয়ঃ যে কারনে এ উপসর্গগুলো দেখা দেয়, এলার্জি টেষ্ট করে কারণ নির্ণয় করে তা পরিহার করে চলা উচিত। ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে একধননের মুখোশ (ফিল্টার মাস্ক) বা মুখবন্ধনি ব্যবহার করা যেতে পারে। যা ফ্লানেল কাপড়ের তৈরি এবং মুখের অর্ধাংশ ঢেকে রাখে। ফলে ব্যবহারকারী গরম নিঃশ্বাস আবার গ্রহন করতে পারেন। শীত প্রধানদেশে পোষাকের সাথে এই ধরনের মাস্ক সঙ্গেই থাকে। তবে সলবুটামল জাতীয় ইনহেলার ব্যবহার করে অনেকেই প্রাথমিক উপসর্গ থেকে পরিত্রান পান। দীর্ঘ মেয়াদে ভাল থাকার জন্য স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে । যে এলার্জেন একেবারেই পরিহার করা সম্ভব নয় অথচ শ্বাস কষ্টের জন্য দায়ী যেমন - মাইট, মোল্ড, পরাগ রেণুর জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকা যায়।
ভ্যাকসিন পদ্ধতিঃ এপদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকো স্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে এদের বহুল ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে এলার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেছে। এটাই এখন এলার্জিজনিত রোগের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
আগে ধারনা ছিল এলার্জি একবার হলে তা আর ভাল হয় না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথমদিকে ধরা পরলে এলার্জিজনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেকদিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। উন্নত দেশের সকল পরীক্ষা নিরিক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে দেশেই রয়েছে। তাই সময়মত এলার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন