ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ দুই সেতু মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতু। এ সেতু দুটিতে সন্ধ্যার পর জ্বলছে না সড়ক বাতি। ফলে দিনের আলো নিভে যাওয়ার পরপরই এই দুই সেতুতে নেমে আসে আঁধার। এতে অন্ধকার সেতুতে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তিতে বাড়ছে।
জানা গেছে, এই মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। চার লেনের মহাসড়কে ৬০-৮০ কিলোমিটার গতিবেগের গাড়ি মেঘনা-দাউদকান্দি সেতুর ওপর ওঠার সময় সেতুর টোল প্লাজার কারণে গতি ১০ কিলোমিটারে নেমে আসে। তখনই মহাসড়কের ওই অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর মাঝে যুক্ত হলো সেতু দুইটির আলোহীন বাতি। দু’পাশেই সোডিয়াম বাতির জন্য ‘পোল’ থাকলেও বাতিগুলোই অকেজো হয়ে আছে বছরের পর বছর। সেতুর বাতিগুলোর নিস্ক্রিয়তার কারণেই ভয় আর আতঙ্ক নিয়েই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলরত গাড়ির আলো দিয়েই চলে যানবাহন। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে অত্যন্ত ২০ হাজার যানবাহন। আর অন্ধকারের কারনেই প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা, বাড়ছে দুর্ভোগ।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের কারণে দ্রুত গতিতে গাড়ি এসে স্বাভাবিকভাবেই মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা সেতুর টোল প্লাজার সামনে গতি কমিয়ে দেয়। আবার টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে একটি গাড়ি সেতুতে উঠতে উঠতে পেছনে লম্বা সারির সৃষ্টি হয়। এতে এই সারি দীর্ঘ হতে হতে তীব্র জটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পৌঁছায় অসহনীয় অবস্থায়। তবে যানজটে আটকে থাকা বিভিন্ন প্রাইভেট ও গণপরিবহনের যাত্রীদের মতে, দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব ও উভয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে না থাকায়, টোল প্লাজায় টোল দিতে সময় বেশি লাগে। এছাড়া কিছু চালক উল্টো পথে চালান বলেন বলেই যানজট বেশি হয়। তার ওপর দাউদকান্দির টোলপ্লাজায় বসানো হয়েছে ট্রাক ওয়েট মেশিন। এর ফলে শুধু ট্রাক নয় কোনো গাড়িই এখন ওয়েট মেশিনের প্রক্রিয়া শেষ না করে টোল প্লাজা পার হতে পারছে না। রাতে দালালেরা টাকা আদায়ের জন্য ওজন কম এমন গাড়িও স্কেলে ঢোকাতে বাধ্য করেন। এ নিয়ে চালকের সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডায় স্বাভাবিকভাবেই যানজট দীর্ঘ হয়। দালালদের ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিলে নিস্তার পাওয়া যায়। রাতে মালবাহী যানের চাপ বেশি থাকায় দালালদের অত্যাচারও বেড়ে যায়। যেখানে আগে যে সময়ে তিন থেকে চারটি গাড়ি টোলপ্লাজা পার হতে পারতো এখন সে সময়ে একটি গাড়ি পার হচ্ছে। এর ফলেই ব্রিজের টোল প্লাজার উভয় পাশে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। যাত্রী এবং সাধারণ মানুষের দাবি, যেহেতু টোল প্লাজায় শুধু ট্রাক পরিমাপ করতে হয়, তাই ট্রাকের জন্য আলাদা লাইন বা আলাদা স্থান নির্ধারণ করা উচিৎ।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিন মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত চারলেনের প্রায় ৯শ’ মিটার দীর্ঘ নতুন ও পুরাতন সেতু দুটি ঘুরে দেখা যায়, সেতুটিতে বাতি না থাকায় অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে হাজার হাজার যানবাহন।
জানা গেছে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়কপথে পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটিতে যানবাহনের চলাচলের জন্য মেঘনা নতুন ও পুরাতন সেতু দুটি শুরুর দিকে এ সেতুগুলো উদ্বোধনের পর সেতুর দু’পাশে সোডিয়াম বাতি লাগানো হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে এসব বাতি জ্বললেও প্রায় কয়েক মাস ধরে আর আলো দিচ্ছে না। সবগুলো বাতিই অকেজো হয়ে আছে। অপরদিকে গোমতী নদীর উপর নির্মিত প্রায় ১৪শ’ মিটার দীর্ঘ দাউদকান্দি নতুন ও পুরাতন সেতু দুটি উদ্বোধনের পরে সেতুটি আলোকসজ্জাও করা হয়। পরবর্তীতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেতুটির সোডিয়াম লাইটগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। অথচ প্রতিদিন এই দুটি সেতুর ওপর দিয়ে গড়ে পঁচিশ হাজার বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। এ হিসাবে প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকারও বেশি টোল আদায় হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই সেতুদিয়ে চলাচলরত এশিয়া পরিবহনের ড্রাইভার তোফাজ্জল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সড়কবাতিগুলো না জ্বলার কারণে প্রতিনিয়তই নিরাপত্তাহীনতায় পথ চলতে হয়। টোল আদায় করে কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরলেও এদিকে কারো খেয়াল নেই। অন্ধকারাচ্ছন্ন সেতুতে মাদকাসক্তরা ছিনতাইয়ে নামে। নষ্ট হওয়া বাতি ঠিক করলেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে, মনে করেন এ চালক। এসব বিষয়ে সেতু দুইটির রক্ষাবেক্ষণ কাজের জন্য নিয়োজিত নারায়নগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছে, সেতুগুলোতে বাতি জ¦লে না বিষয়টির ব্যাপারে আমরা অবগত নই। সেতুগুলোর ইজারা নেওয়া কর্তৃপক্ষ এই লাইটগুলো দেখাশোনা করার দায়িত্ব বলে জানান। এ প্রসঙ্গে ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মকবুল হোসেন বলেন, খুব শীঘ্রই সড়কবাতি গুলো মেরামতের উদ্দ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন