বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি ইতোমধ্যে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ২৬ জুন দক্ষিণাঞ্চবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবার পরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটির ক্ষমতার তুলনায় যানবাহনের চলাচল কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন লাশের মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে।
এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা এখন নিত্যকার ঘটনা। ফলে প্রতিদিনই আহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি গত ২৭ জুন থেকে এ মহাসড়কে প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনায়ই একাধিক মানুষের প্রাণহানী ঘটছে। এমনকি দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলোও ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কিন্তু অপ্রশস্ত সড়কে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার বিবেকহীন প্রতিযোগিতায় জানমালের ক্ষতি বেড়ে চললেও তা নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ পুলিশ ও প্রশাসনের তরফ থেকেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। গত জুনের শেষভাগ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫টি করে দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনের চালক ও সহকারীর প্রাণহানীর ঘটনাও ক্রমশ বাড়ছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের মহানগরীর কাশীপুর এলাকায় দুটি বাসে মুখোমুখি সংঘর্ষে ১ চালক নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, গত জুনের শেষ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ মহাসড়কে অর্ধশতাধিক যাত্রীর প্রাণহানী ছাড়াও ৫ শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন।
পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল থেকে ১৬০ কিলোমিটার দুরের ঢাকায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীদের পৌঁছে দেয়ার নিশ্চয়তায় বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাসই বিবেকহীন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু বরিশাল থেকে ৯৫ কিলোমিটার দুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এ মহাসড়কটি মাত্র ১৮-২৪ ফুট প্রস্থ। উপরন্তু অনেক স্থানেই মহাসড়কটির অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই নড়বড়ে। ১৯৬০-৬৫ সালের মধ্যে মাত্র ৫ টন ক্ষমতার বহক্ষম ১২ ফুট প্রস্থ মহাসড়ক নির্মাণের পরে বিগত ৬০ বছরে দু’পাশে আরো ৬ থেকে ১০ ফুট প্রশস্ত করা হলেও বহন ক্ষমতা আর বাড়েনি। কিন্তু সে মহাসড়কেই এখন ৩৬ টন বহনক্ষম ভারী যানবাহন চলছে। ফলে বার বার মেরামত ও পুনর্বাসন করেও মহাসড়কটির স্থায়ীত্ব এক বছরের বেশি নয়।
অপরদিকে ২০১৫ সালে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা-বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্তের পরে ২০১৮ সালে এলক্ষে ভূমি অধিগ্রহণে সরকার ১৮শ’ কোটি টাকা ছাড় করে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত ৬ লেন মহাসড়কের সম্ভব্যতা সমীক্ষা ও নকশা প্রনয়ণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। কিন্তু পরামর্শক চূড়ান্ত নকশা জমা দিলেও তাতে বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়ায় বিষয়টির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ ২০২০ সালে নির্ধারিত থাকলেও ২০২২-এর শেষে এসেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
উপরন্তু দাতার অভাবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটির ভবিষ্যত খুব আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে নেই। ফলে এ মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করণের কাজ কবে শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কেউ।
আর অপ্রশস্ত ও নড়বড়ে মহাসড়কে সীমাহীন গতির অসম ও বিবেকহীন প্রতিযোগিতা দক্ষিণাঞ্চলের অগণিত মানুষে প্রাণ কেড়ে নেয়া থেকে শুরু করে জনমালকে ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুললেও তা থেকে উন্নয়নে কারো মাথা ব্যাথা নেই।
এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানান, আমরা ভূমি অধিগ্রহণে অনেক আগেই ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনকে প্রস্তাবনা দিয়েছি। তবে বিষয়টি খুব কাঙ্খিত গতিতে এতদিন না এগুলেও সম্প্রতি এ কাজে গতি এসেছে। চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই বেশিরভাগ ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের তরফ থেকে সম্ভব সবকিছু করার দাবি করা হলেও যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা ও হাইওয়ে পুলিশকে আরো আন্তরিক হবারও পরামর্শ দিয়েছেন নামপ্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন