দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে তো বটেই, এ দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের ইতিহাসেও একটানা এতবার সভাপতি হওয়ার রেকর্ড কারো নেই। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আছেন। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে কেউ এতদিন সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের অবিসংবাদী নেতা, সেটা তার পুনঃ পুনঃ সভাপতি নির্বাচিত হওয়া থেকে প্রমাণিত হয়। দলের এক গভীর সংকটকালীন সময়ে তার ওপর নেতৃত্বভার অর্পিত হয়। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও পারঙ্গমতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে সুগঠিত করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। তার নেতৃত্বে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসে। তিনি হন প্রধানমন্ত্রী। এর পর বিগত তিন টার্ম তার দল ক্ষমতায় এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী। এত বছর প্রধানমন্ত্রিত্বের রেকর্ডও এদেশে একমাত্র তারই। একই সঙ্গে এত বছর দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার কৃতিত্বও আর কারো নেই। দলে এবং সরকারে তিনি অপরিহার্য, অবিকল্প, সেটা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে। দশম বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেছেন: ‘আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বার বার আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিচ্ছেন। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করছি। দলকে সুগঠিত করা এবং দেশ পরিচালনা কঠিন কাজ। তবু আমি এই দায়িত্ব মাথা পেতে নিচ্ছি।’ দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্ববার নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এই নিয়ে তিনি টানা তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। পর পর তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়াও রেকর্ড। এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান ছাড়া আর কারো এই রেকর্ড নেই। ছাত্রজীবন থেকেই ওবায়দুল কাদের আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি একদা ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও পেশায় তিনি ছিলেন সাংবাদিক। তিনি ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। সাধারণ সম্পাাদকের দায়িত্ব লাভ করেন ২০১৬ সালে। সেই থেকে সাধারণ সম্পাদক আছেন এবং এবার আরো তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পেলেন। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো দলে অনেকেই আছেন। তাদের মধ্যে তিনিই যে শীর্ষে, সেটা তৃতীয়বারের মতো তার নির্বাচিত হওয়া থেকে বুঝা যায়। তিনি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে দেশের বৃহত্তম দলটির দু’ টার্ম দ্বিতীয় প্রধান পদের গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ও মান্যতা রয়েছে। আমরা তাকেও অভিনন্দন জানাই। আগেই এরকম ধারণা ও জল্পনা-কল্পনা বিস্তার লাভ করেছিল যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় রকমের কোনো পরিবর্তন হবে না। আসলে সেটাই হয়েছে। পরিবর্তন সামান্যই হয়েছে। কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলী থেকে তিনজন ও সম্পাদকমণ্ডলী থেকে দুজন সদস্য বাদ পড়েছেন। সম্পাদকমণ্ডলী থেকে একজনের পদোন্নতি হয়েছে। আরেকজনের দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো পরিবর্তন নেই। অবশ্য নির্বাহী সদস্য, সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কিছু পদ এখনো শূন্য আছে। অচিরেই সেসব পদ পূরণ করা হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, দলে ব্যাপক রদবদল এ জন্যই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। যাহোক, আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটিকেও আমরা অভিনন্দন জানাই।
যে কোনো রাজনৈতিক দলের জাতীয় সম্মেলন এবং দলীয় নেতা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ যেমন উজ্জীবিত হন, তেমনি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীও উজ্জীবিত হন। দলে নতুন প্রাণাবেগ সঞ্চারিত হয়। এই প্রাণাবেগই দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হওয়ার কথা। সেদিক থেকে সময়টা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বটে। দলের নতুন নেতৃত্ব দলকে সংগঠিত ও নির্বাচনমুখী করার ক্ষেত্রে অধিকতর জোর দেবে, এটাই স্বাভাবিক। নির্বাচনে জেতার জন্য দলের ঐক্য-সংহতি এবং নেতাকর্মীদের দলের প্রতি আনুগত্য খুবই জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশ এখন একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়ার একটি আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি আরো নাজুক অবস্থায় পতিত হতে পারে, এমন আলামতও স্পষ্ট। দারিদ্র, মূল্যস্ফীতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও অভাব, ব্যাংকব্যবস্থায় তারল্য সংকট, বাণিজ্য ঘাটতি ইত্যাদি বাড়ার আশঙ্কা প্রবল। এহেন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, ইতিবাচক মনোভাব এবং যথোচিত সিদ্ধান্তের বিকল্প নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সুরক্ষা, অর্থনৈতিক সংকট উত্তোরণ এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বিপুল বিস্তৃত উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়। বস্তুত তার স্বপ্ন, উদ্যম ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞারই প্রতিফলন আমরা সর্বত্র দেখতে পাচ্ছি। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের রাজনৈতিক সুস্থিরতা, অবাধ গণতান্ত্রিক চর্চা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনমঙ্গল তিনিই নিশ্চিত করতে পারেন। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বয়স হয়েছে। এই বয়সে দল ও রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন আল্লাহর অপার রহমত। সবার প্রত্যাশা, তিনি এমন কিছু করে যাবেন, রেখে যাবেন, যাতে দেশের সর্ব প্রকার অগ্রযাত্রা নিরাপদ ও অব্যাহত থাকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যুগ যুগ তাকে স্মরণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন