চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনির আহমদ (৬৫)। পরে লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয় শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে। হাসপাতাল থেকে লাশ কর্ণফুলী উপজেলার বাড়িতে আনলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যায় কিন্তু লাশ দাফন হয় না। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার মৃত্যু হয়। রাতে লাশ বাড়িতে এনেই বাবার অবসরের টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। যে বিবাদ মীমাংসা হয়নি বৃদ্ধের মারা যাওয়ার ৩৪ ঘণ্টা পরেও।
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ ও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ।
জানা যায়, অবসরের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বৃদ্ধ মনির আহমদের (৬৫) লাশ সড়কে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে ফেলে রেখে শনিবার রাত থেকে বিরোধে জড়ায় তার সন্তানরা।
গতকাল রোববার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নে ওই বাড়িতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে কর্ণফুলী থানা পুলিশের সদস্যরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন। সন্তানদের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা।
মৃত মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসরে এসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন। আমার মেজ বোন বেবি আকতার আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এবি ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তোলেন।
ফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, বৃদ্ধের রেখে যাওয়া অবসরের টাকার জন্য তার সন্তানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের মাধ্যমে বৃদ্ধের সন্তানদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন করা হয়েছে। অবশেষে আজ সোমবার সকালে লাশ দাফন করা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় নেটিজনদের সোস্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা।
লেখক, গবেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মেহেদী হাসান পলাশ নামে একজন লিখেছেন, গত শনিবার মানুষটি মারা গিয়েছে, রবিবার সারাদিন রাতেও সন্তানরা পিতার দাফন দেয়নি। কারণ তার রিটায়ারমেন্টের টাকার ভাগাভাগি। অথচ এই সন্তানদের পৃথিবীতে আনা, বড় করা, সুশিক্ষিত করা এবং প্রতিষ্ঠিত করতে কী না করেছে এই লোকটি? হায়রে টাকা। যে টাকার জন্য সারাজীবন অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে গেছে মানুষটি, মৃত্যুর পর আজ সেই টাকা তার দাফনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে টাকার ভাগাভাগি, তারপরে বাবার লাশ দাফন! আমাদের কি এ থেকে শিক্ষনীয় কিছুই নেই?
তাহসিন আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, সুসন্তান তৈরি করতে পারে নাই উনি। চাকরি আর টাকার পিছনে ঘুরেছে মনে হয় সেই লোক। তাই সবাই সন্তাননের সুশিক্ষা দিন।
মাঈন উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, স্বার্থপর সন্তান তারা, আর হতভাগা পিতা উনি। কখনো কখনো এই স্বার্থপর লোভী হওয়ার জন্য পিতা-মাতাই বেশি দায়ি থাকেন। আজ এ সন্তানদের সুশিক্ষায় মানুষ করলে এমনটা হতো না।
সারোয়ার নামে একজন লিখেছেন, স্বার্থ আর অর্থ মানুষকে অমানুষ করে তোলে। এ থেকে সবাইকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
নূর উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, টাকা সঞ্চয় জীবনের সফলতা নয়। জীবনের সফলতা হচ্ছে নিজে সুশিক্ষিত হওয়া ও সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করা। টাকার পেছনে না ছুটে আগে নিজের সন্তানদের মানুষ করুন। তা হলে এমন ঘটনা ঘটবে না। নয়তো এর থেকে ভবিষ্যতে করুণ কাহিনীও ঘটতে পারে।
আওলাদ হোসেন নামে একজন লিখেছেন, অর্থই অনর্থের মূল। তারা সন্তান নামের কলঙ্ক। মহান আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
আসিফ নামে একজন লিখেছেন, সবার প্রতি অনুরোধ সন্তানের জন্য বাড়ি গাড়ি নয় ভালো একজন আলেম বানান। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক এবং নেক সন্তান জন্মদান করুক।
হাফেজ আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, যেমন শিক্ষা তেমন দিক্ষা। সময় থাকতে সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করুন। তা নাহলে এমন করুণ কাহিনী আরো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন