বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভিসি (উপাচার্য) প্রফেসর ড. লুৎফুর হাসান মন্টুর বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহার’সহ ৯টি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বাইরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থিত গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম একাংশের সভাপতি প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার ও সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাস স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনুপ্রবেশকারি, অসৎ ও আদর্শহীন ব্যক্তি দ্বারা প্রশাসন পরিচালনা করা, শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, ৬৬৯ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রফোজাল (ডিপিপি) বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, নিয়োগ বিধি লঙ্গন করে ক্যাম্পাসে ভিসির অনুপস্থিতি, ডিজিটালাইজেশন ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) তে পশ্চাদপদতা, বাসভবন ব্যবহারে ভিসির ক্ষমতার অপব্যবহার, বাসা বরাদ্ধে অনিয়ম, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামে বিভক্তি সৃষ্টি।
প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, অযাচিত হস্থক্ষেপ ও অদক্ষ প্রশাসনের কারণে ৬৬৯ কোটি টাকার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। অথচ এই পর্যন্ত কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৭ ভাগ কাজ। এখন তারা ব্যর্থতা আড়াঁল করতে রিভাইসের আবেদন করেছে, কিন্তু একনেকে তা পাশ হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ তুলে বলেন, আগের ভিসি এই বরাদ্ধ এনে দিয়েছিলেন। তিনি পরিকল্পনাও করে গিয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন এই ভিসি। অথচ দক্ষ প্রশাসনের কারণে একই ধরনের প্রকল্প এগিয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু, শেরে বাংলা, জাহাঙ্গীরনগর সহ দেশের অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়।
সেই সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নেই উল্লেখ করে প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষনা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয় চলছে। সেই সঙ্গে ভিসির ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে সীমাহীন।
একই ধরনের বক্তব্য গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম একাংশের সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলামের। তিনি বলেন, গত ৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের কোন নির্বাচন দেওয়া হয়নি। সব চলছে জুরুরী সভা দিয়ে। সময়মত পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান না করায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিগত পৌনে ৪ বছরে ক্যাম্পাসে ভিসির উপস্থিতি ছিল সর্বনিন্ম। টানা ৫ মাস ছিলেন দেশের বাইরে। অথচ ভিসি নিয়োগপত্রে ক্যাম্পাসে সার্বক্ষনিক উপস্থিতি অত্যবশ্যকীয়। এছাড়াও অদক্ষ প্রশাসনের কারণে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) তে সারাদেশের মধ্যে বাকৃবির অবস্থান বর্তমানে ৪০ এর পরে। এটা ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ নয়। আমাদের অভিযোগ অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় সরকারের উচ্চ পর্যায়েও লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি সরেজমিনে তদন্ত করলে এসবের প্রমাণ মিলবে।
তবে গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম অপর অংশের দাবি ভিসির পক্ষে। তাদের দাবি, ভিসির বিরুদ্ধে উত্থাপিত ৯ অভিযোগের পক্ষে সঠিক বা সুনির্দ্দিষ্ট কোন তথ্য নেই।
ফলে এই অভিযোগগুলো গুটি কয়েকজনের মনগড়া তথ্য বলে দাবি করেছেন গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম অপর অংশের সভাপতি প্রফেসর ড. আবু হাদী নূর আলী খান। তিনি বলেন, যারা এসব অভিযোগ করছে, তারা আগের ভিসির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোভনীয় পদের দ্বায়িত্বে ছিল। তারা রাজনৈতিক ভাবে বাম ঘরনার হলেও তাদের কর্মকান্ড সরকার বিরোধীদের মত। মূলত আসন্ন শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভরাডুব হবার ভয়ে তারা এসব করছে।
এ সময় তিনি ভিসির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, সহধর্মিনীর অসুস্থতার কারণে ভিসি স্যার ছুটি নিয়ে ৫ মাস ভারতে ছিলেন। এর আগে তিনি ক্যাম্পাসেই ছিলেন, তবে মাঝে মাঝে সরকারি কাজে ঢাকায় যাওয়া আসা করছেন। এটা স্বাভাবিক বিষয়। এছাড়া ভিসির বাসভবনটি ৫০ বছরের পরোনো। এর ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। বর্তমানে এই ভিসি ভবন মেরামত করতে টাকা প্রয়োজন ৪০ লাখ। এ কারণে ভিসি স্যার ওই ভবনে মাঝে মাঝে অফিস করেন। তবে বসবাস করেন একজন প্রফেসর হিসেবে বরাদ্ধ পাওয়া বাসায়।
তবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অভিযোগগুলো করা হয়নি বলে দাবি করেছেন গনতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম একাংশের নেতারা। তাদের দাবি, এসব অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে। এতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন বা জয় পরাজয়ের কিছু নেই। মূলত অভিযোগ ধামাচাপা দিতেই তারা উল্টাপাল্টা বলছে।
এসব অভিযোগ বিষয়ে বাকৃবির ভিসি (উপাচার্য) প্রফেসর ড. লুৎফুর হাসান মন্টু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে কোন অনিয়ম বা দূর্নীতি নেই, যতটুকু হয়েছে তা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। এছাড়া দুই ধাপে বিশ^বিদ্যালয়ে ৬৬জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধার ভিত্তিতে। এসব নিয়োগে আমার কোন স্বজন বা আত্মীয় নেই। তাছাড়া মিটিং বা ইউজিসিসির কাজ ছাড়া আমি কখনো ঢাকা যাই না। যেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে। তাদের বিশেষ অনুদানে ইতিমধ্যে সুলতানা রাজিয়া ও রোজি জামাল হল হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি নেই দাবি করে ভিসি আরও বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির নিয়মে আগামী ৩১শে জানুয়ারির আগে নবীণদের ক্লাস শুরু করার সুযোগ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন