শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ভাঙছে নদী

মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, ঝালকাঠি থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

স্রোত নেই, ঢেউ নেই- তবুও ভাঙছে নদী। বিলীন হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরের মানুষ। ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদেরকে। বর্ষা মৌসুমের আগেই ভাঙন রোধে পদক্ষেপ ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
নদীতীরের বাসিন্দারা জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। শুধু দিনে নয়, রাতেও চলছে ড্রেজার মেশিন। চোখের সামনে মানুষের সহায়-সম্পত্তি বিলীন হতে দেখেও তারা বালু উত্তোলন থেকে বিরত থাকছে না। বসত ভিটা, জলাশয় ও মাঠ ভরাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে এসব বালু। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা ও বিষখালী নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। নদীতে ভেঙে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ফসলি জমি ও বসতঘর। একদিকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন, অন্যদিকে ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে মাটি কেটে ব্যবসা করছে এক শ্রেণির অসাধু লোক। এতে নদীতে অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষখালী নদীর তীরবর্তী দেউরী, ভাটারাকান্দা, সাচিলাপুর, দিয়াকুল, কিস্তাকাঠি, সুগন্ধা নদী তীরের কৃষ্ণকাঠি, কুতুবনগড়, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সিকদারপাড়া, ষাইটপাকিয়া, বারইকরণসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অসংখ্য পরিবার ভিটেবাড়ি হারিয়েছে। বর্ষা শুরুর আগেই নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনিকভাবে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলছে বালুর ব্যবসা। অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধের জন্য দফায় দফায় অভিযান করেও থামানো যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ঝালকাঠি জেলায় সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙনে স্বাধীনতার পর থেকে বিলিন হয়েছে শত শত একর জমি। আর সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে অভিযান চালিয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত গত দুই মাসে ২৫ ড্রেজার মালিককে জেল জরিমানা করেছেন।
সুগন্ধা নদী তীরের কিস্তাকাঠি মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা শাকিউর রহমান সাকিল বলেন, সুগন্ধা নদীতীরে গড়ে ওঠা ঝালকাঠি শহর ও আশেপাশে গ্রাম নদীতেই ভাঙছে। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে দিন রাত অবাধে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। তাদের কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন ২০-২৫টি ড্রেজার দিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন করায় ভেঙে যাচ্ছে নদী। অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়েছে। শুধু জরিমানা করেই এদের ঠেকানো যাবে না। ড্রেজার জব্দ করে মালিককে বেশিদিন কারাদণ্ড দিলে বালু উত্তোলন থামানো যেতে পারে।
নলছিটির মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা শাহ ফরিদ বলেন, নদীতে আমাদের বাড়ি-ঘর কয়েক দফায় ভেঙে গেছে। স্থান পরিবর্তন করে এখন যে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাও ঝুঁকির মধ্যে। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে সারাদিন বালু উত্তোলন করা হয়। কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। প্রশাসনের লোকজন আসার খবর পেলে বালু কাটা বন্ধ করে। আবার তারা চলে গেলে শুরু হয় বালু উত্তোলন। এটা বন্ধ করা জরুরি, তা নাহলে কিছুদিনের মধ্যেই নলছিটি-দপদপিয়া সড়কের মল্লিকপুরের অংশ সুগন্ধা নদীতে বিলিন হয়ে যাবে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অং ছিং মারমা বলেন, গত তিন মাসে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় ২৫টি ড্রেজার মালিককে জেল-জরিমানা করা হয়। এরপরেও তারা বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। অনেক সময় দিনে প্রকাশ্যে না কাটলেও গভীর রাতে বালু উত্তোলন করে। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখছি।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, ড্রেজার দিয়ে দিনের বেলায়ই নয়, প্রশাসনের নজর এড়াতে রাতেও বালু তোলা হচ্ছে নদী থেকে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যাতে নদী থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করতে না পারে, সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হাসান বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই ভাঙনকবলিত বেশকিছু এলাকায় কাজ শুরু হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন