শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত আমেরিকায় মৃত বেড়ে ৬৫

বরফ গললে আটকেপড়া গাড়িতে বহু লাশ পাওয়ার শঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

উত্তর আমেরিকা জুড়ে বয়ে যাওয়া ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ে এ পর্যন্ত ৬৫ জন মারা গেছে এবং এর মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যেই ৩২ জন মারা গেছে। বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে বাফেলোতে। উত্তর আমেরিকা জুড়ে এ তুষার ঝড় শুরুর পর থেকে কয়েক হাজার মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। বাফেলো শহরের কর্মকর্তারা বলছেন শহরটিতে গাড়ী চালনা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে মিলিটারি পুলিশ আনা হয়েছে। তুষার ঝড়ের কারণে দেয়া জরুরি অবস্থার মধ্যেই বেশ কিছু জায়গা থেকে লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে নিউইয়র্ক রাজ্যের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক মানুষ দুদিনের বেশি সময় ধরে তাদের গাড়িতেই আটকে পড়েছিলেন তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝড়ের মুখে পড়ার পর। আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, নিউ ইয়র্কে আরো প্রায় নয় ইঞ্চি তুষারপাত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিউ ইয়র্ক রাজ্যকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সহায়তা দেয়ার জন্য একটি জরুরি ঘোষণা অনুমোদন করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘যারা এ ছুটির মধ্যে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা’।
নিউ ইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হচুল এ ঝড়কে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তুষার ঝড় বলে বর্ণনা করেছেন। বাফেলো হচ্ছে ক্যাথি হচুলের নিজের শহর। ‘এখানকার অবস্থা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো, রাস্তার ধারে যত গাড়ি আটকে পড়েছে, তা দেখলে আঁতকে উঠতে হয়’। তিনি বলেন, অনেক জরুরি সেবা সংস্থার গাড়ি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে পারেনি, অথবা নিজেরাই তুষারের মধ্যে আটকে পড়েছে।
একটি স্থানীয় পরিবার, যাদের দুই হতে ছয় বছর বয়সী শিশু সন্তান আছে, তারা তুষারের মধ্যে আটকে পড়ার ১১ ঘণ্টা পর ক্রিসমাসের দিন গভীর রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়।

জিলা সানটিয়াগো পরে সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘আমি আশা একদম ছেড়ে দিয়েছিলাম’। তিনি গাড়ির ইঞ্জিন চালু রেখে নিজেকে উষ্ণ রেখেছিলেন। যে ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্যে তারা ছিলেন, সেটি থেকে বাচ্চাদের মন অন্যদিকে সরাতে তিনি গাড়িতে তাদের সঙ্গে গেম খেলে সময় কাটান। মেরিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গের বাসিন্দা ডিটজাক ইলুঙ্গা সিবিএস নিউজকে জানান, তিনি মেয়েদের নিয়ে অনটারিওর হ্যামিলটনে তার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। পথে তার গাড়িটি বাফেলোর কাছে তুষারে আটকে পড়ে। গাড়ির ইঞ্জিন চালু রেখে সেখানেই বহু ঘণ্টা তারা অপেক্ষা করেন। কিন্তু তারপর ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের মধ্যেই হেঁটে তারা কাছাকাছি এক আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার মরিয়া সিদ্ধান্ত নেন।

ডিটজাক ইলুঙ্গা তার ছয় বছর বয়সী কন্যা ডেসটিনিকে পিঠে নেন, আর তার ১৬ বছর বয়সী কন্যা সিন্ডি তাদের পোষা কুকুরকে কোলে নেয়। এরপর তারা পায়ে হেঁটে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে রওনা দেন।
‘আমরা যদি গাড়ির মধ্যে থেকে যেতাম, বাচ্চাদের নিয়ে সেখানেই হয়তো আমাদের মরতে হতো’ বলছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত পরিবারকে নিয়ে তিনি যখন আশ্রয় কেন্দ্রে ঢুকতে পারেন, তখন তিনি কাঁদছিলেন। ‘এ ঘটনার কথা আমি জীবনে ভুলবো না’।
ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন ১৮ লাখ মার্কিন নাগরিক। প্রায় দেড় লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শোচনীয় অবস্থা আমেরিকার প্রতিবেশী কানাডাতেও। এক লাখের বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। ঝড়ের পরে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়েছে আমেরিকায়। হিমাঙ্কের ৪৩ ডিগ্রি নীচে নামতে পারে দেশের তাপমাত্রা, এমনটাই অনুমান স্থানীয় আবহবিদদের।

এহেন পরিস্থিতিতে ভয় ধরাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের অনুমানও। জানা গেছে, মেরু বলয়ের শীতল বাতাসের সঙ্গে ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ হাওয়া মিলে গিয়েই বম্ব সাইক্লোনের মতো ঝড় তৈরি হয়। ক্রমাগত বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এই দুই ধরনের বাতাস মিলে যাওয়ার অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি হয়। ২০১৯ সালেও একইরকমের বম্ব সাইক্লোন তৈরি হয়েছিল, যদিও তার তীব্রতা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু আগামী দিনে একাধিক বম্ব সাইক্লোন তৈরি হবে এবং তার জেরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সূত্র :স্কাই নিউজ ও বিবিসি বাংলা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন