শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

কপ-২৭ : জলবায়ু ন্যায্যতা এবং মানবাধিকার সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই

গোলটেবিল আলোচনায় নাগরিক সমাজের বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:৫৩ পিএম

জলবায়ু ন্যায্যতা এবং মানবাধিকার সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই বলে মনে করছে নাগরিক সমাজ। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জলবায়ু সমঝোতা সম্মেলন ২৭ (কপ-২৭) এর প্রাপ্তি সমূহের বিশ্লেষণ এবং আগামীর কর্মকৌশল নির্ধারন করার উদ্দেশ্যে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গোলটেবিল বৈঠকটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা এবং সভা পরিচালনা করেন সি.পি.আর.ডি’র নির্বাহী প্রধান মো. শামসুদ্দোহা, আলোচক হিসাবে উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন পিকেএসএফ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহম্মেদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও বন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক। এছাড়া আলোচনা করেন ডিয়াকোনিয়া’র কান্ট্রি ডিরেক্টর খোদেজা সুলতানা লোপা, এসডিএস এর নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিনুল হক সহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী আয়োজক ২৩ টি সংগঠনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা সমঝোতা সম্মেলনের আগে কয়েকটি কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। এই আয়োজনগুলোর সাথে সরকারের উদ্যোগগুলোকে সমন্বয় করাটা জরুরি, এটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা সমঝোতা সম্মেলন যে আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম আজকের জায়গায় এসে দেখছি আমরা সেখান থেকে অনেক দূরে সরে গেছি, এটি আমাদের জন্য হতাশা ব্যঞ্জক। এখন আমরা কি এই কাঠামো থেকে বের হয়ে আসবো, উত্তরটি হচ্ছে না, আমাদের এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ বা বিকল্প নেই বরং আমাদের এই প্রক্রিয়ার ভেতর থেকে নিজের আকাঙ্খাগুলোর প্রতিফলন ঘটাবার চেষ্টা করে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আমরা আরও কী কী করতে পারি সেটাকেও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। আমরা বৈশি^ক মঞ্চে ‘নেচার বেইজড’ সমাধানের কথা বলব অন্য দিকে বাংলাদেশে ইট ভাটা, চামড়া শিল্প ইচ্ছামতন দূষণ করে যাব এটা পরিষ্কার দ্বিচারিতা। আমরা যদি সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় না নেই তাহলে বর্তমান পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন হবেনা।

আমরা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির কথা বলছি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে এটি অর্জন অসম্ভব। বাংলাদেশে বর্তমান যে সব ক্ষয় ক্ষতি হয় সেটি হচ্ছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি বৃদ্ধির ফলে, এই বৃদ্ধি যদি ২ বা ২ দশমিক ২ হয় তাহলে এটি ডাবল না হয়ে চার গুণও বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কাজগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। যখন একই বিষয়ে একাধিক মন্ত্রনালয় কাজ করে তখন অনেক সঙ্কট তৈরি হয়, তাই এই কাজগুলোকে একটি মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসলে সঙ্কট কমে আসতে পারে।

বৈঠকে মূল বক্তব্য তুলে ধরে মো. শামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে উন্নত রাষ্ট্র সম‚হ এখন পর্যন্ত তাদের কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন করেনি। আমরা আশা করেছিলাম এ বারের সমঝোতা সম্মেলনটি অঙ্গীকার বাস্তবায়নকারী সম্মেলন হবে। আমরা সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে নাগরিক সমাজের পক্ষে থেকে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করে ছিলাম। আমরা বলেছিলাম, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্তÍ রাষ্ট্র এবং অঞ্চল সম‚হের ক্ষয়-ক্ষতির ক্ষতিপূরণ প্রদানের একটি আনুষ্ঠানিক মেকানিজম তৈরি করতে হবে এবং ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় অভিযোজন স্বল্পতার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি কমাতে জলবায়ু অর্থায়নের প্রবাহকে বাড়াতে হবে। আমরা জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য ঠিক করার দাবি সহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিলাম।

আমরা বলেছিলাম বৈশি^ক কার্রন উদগীরণ শ‚ন্যে নামিয়ে আনার নিদিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে যেন বৈশি^ক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। কিন্তু সমঝোতা সম্মেলন ২৭ ভোগক্তভোগী মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি বৈশি^ক জীবাশ্ম জ্বালানী কোম্পানী এবং মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ জলবায়ু ন্যায্যতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অধিকার সহ মানবাধিকার রক্ষার পথে নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এলএনজি, প্রাকৃতিক গ্যাস সহ কয়েকটি কার্বন উদগীরণকারী জ্বালানীকে “ক্লিন এনার্জি” হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছে যেটি আমাদের কাছে অনাকাঙ্খিত ছিল। তিনি আরও বলেন, সমঝোতা সম্মেলন ২৭ থেকে আমাদের বেশ কিছু আর্জনও আছে।

আমরা দীর্ঘ দিন থেকে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ক্ষতিপ‚রণ প্রদানে একটি স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক কাঠামোর দাবি করে আসছিলাম এবং এই বিষয়টিকে ‘প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্টে’র আলোচনায় সংযুক্ত করতে হবে, সমঝোতা সম্মেলন-২৭ ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ অর্থায়নকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে এবং জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় আরও কাজ করে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন শামসুদ্দোহা।

ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহম্মেদ বলেন, নাগরিক সমাজের এই আলোচনা থেকে আমরা আজকে অনেক বিষয় ভালোভাবে বুঝতে পারলাম। ইউএনএফসিসিসি অনেক ধীর প্রক্রিয়া কিন্তু আমাদের এই প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়ারও সুযোগ নেই, ফলে আমাদেরকে কার্যক্রমগুলোর গতি বৃদ্ধি করার পথ খুঁজতে হবে। তিনি আরও বলেন লস এন্ড ড্যামেজ অর্থায়নের পথ উন্মোচন হয়েছে কিন্তু লস এন্ড ড্যামেজ পরিমাণের সাথে সাথে যথোপযুক্ত অর্থায়নের দিকটিতেও খেয়াল রাখতে হবে।

জিয়াউল হক শুরুতেই বৈঠক আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং বলেন এ ধরণের আয়োজনগুলো নাগরিক সমাজ এবং সরকারের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করে, এ কাজগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন সমঝোতা সম্মেলন ২৭ কে নিয়ে অনেকের মাঝে হতাশা থাকলেও আমাদের কিন্তু সম্মেলনের অর্জনগুলোকে ছোট করে দেখা ঠিক হবেনা, লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি আমাদের অনেক বড় অর্জন।

ধরিত্রী কুমার সরকার বলেন, বাংলাদেশকে তার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অভিযোজনে সব থেকে বেশি মনযোগ দিতে হয়, এবারের সমঝোতা সম্মেলনেও আমরা এটা নিয়ে কাজ করেছি এবং আমরা অভিযোজন বিষয়ে সম্মেলন থেকে বেশ কিছু সফলতাও পেয়েছি। দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে, আগামীদিনে অভিযোজনের মত আর্লি-ওয়ার্নিং সিস্টেমেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভ‚মিকা রাখবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় নাগরিক সমাজ, নীতি নির্ধারক এবং সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। তিনি সিপিআরডি সহ আয়োজক প্রতিষ্ঠান সম‚হকে ধন্যবাদ জানান এবং আহবান জানান এ ধরণের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার। গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজন করে এ্যাকশনএইড, অ্যাওসেড, ব্রেড ফর দি ওয়ার্ল্ড, ক্যানসা বাংলাদেশ, কেয়ার, সিসিডিবি, সিডিপি, ক্রিশ্চিয়ান-এইড, কোস্ট ফাউন্ডেশন, কনসার্ন ওয়ার্লড-ওয়াইড, সিপিআরডি, ডোর্প, ডিয়াকোনিয়া, হ্যাক্স এপার, হ্যালভেটাস, ইক্যাড, ইসলামিক রিলিফ, এমজেএফ, নেটজ, প্র্যাকটিকাল এ্যাকশান, এসডিএস, ওয়াটার এইড, ইপসা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন