বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জীববৈচিত্র্য রক্ষার চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। একের পর এক জীবের প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রোগ-ব্যাধি বাড়ছে! পরিবেশবিদরা তাই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য দাবি করে আসছেন বহু দিন থেকেই। এই অবস্থায় প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনফারেন্স অব পার্টিজের ১৫তম সম্মেলন বা কপ-১৫ সম্মেলন এবং কার্টেজেনা জৈব নিরাপত্তা প্রোটোকলে স্বাক্ষরকারীদের দশম সম্মেলন ও নাগোয়া প্রোটোকলের পক্ষগুলির চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৭-১৯ ডিসেম্বর কানাডার মন্ট্রিয়লে। তবে এটি দ্বিতীয় পর্ব (পার্ট ২)। প্রথম পর্বটি (পার্ট ১) অনুষ্ঠিত হয় ১২-১৩ অক্টোবর, ২০২১ চীনের কুনমিংয়ে। তাতে ১৮৮টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘বাস্তু তাত্ত্বিক সভ্যতা: পৃথিবীর সব রকম প্রাণের জন্য সম্মিলিত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা’। সম্মেলনে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি এবং ১৭ দফা প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়। দ্বিতীয় পর্বও চীনে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্মেলনটি মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত হয়। তবে, সম্মেলনের দু’টি পর্বেই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন চীনের পরিবেশমন্ত্রী হুয়াং রুনকিউয়ে। তাই কপ-১৫ সম্মেলন কুনমিং-মন্ট্রিয়ল সম্মেলন বলে খ্যাত হয়েছে। কপ-এর প্রথম সম্মেলন (কপ-১) অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে বাহামার রাজধানী নাসাইয়ে। ২০০০ সালের পর থেকে এটি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। মন্ট্রিয়ল সম্মেলনের প্রাক্কালে বন বাঁচাতে বিশ্বের ৬৫০ বিজ্ঞানী এক খোলা চিঠি লেখেন বিশ্ব নেতাদের কাছে। এ সম্মেলনে ১৯৬টি দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা, এক হাজার বিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের প্রায় ৬০০০ প্রতিনিধি অংশ নেন। উপরন্তু, সম্মেলনে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্যবিষয়ক কনভেনশনের সদস্য ১৯৬ দেশের জলবায়ু মন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করেন তাঁদের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয়গুলোর অন্যতম ছিল ‘পিস প্যাক্ট উইথ নেচার’ নামের একটি চুক্তি, যার লক্ষ্য ছিল, চলতি দশকের শেষ নাগাদ বনজঙ্গল, পানি ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। এ নিয়ে একটি খসড়া চুক্তিও হয়। তাতে ২২-২৩টি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, এ সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ধনী দেশগুলোর কাছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বা বৈশ্বিক জিডিপির ১% আর্থিক ভর্তুকি দাবি করে ব্রাজিল। আফ্রিকা মহাদেশ এবং ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ১৪টি দেশের পক্ষ থেকে এই দাবি করে দেশটি। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০২০ সালে তাদের বরাদ্দ করা সহায়তার পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি ডলার। ফরাসি প্রতিনিধি সিলভি লেমে সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা যদি আজ এক হাজার কোটি ডলারে থাকি, সেখান থেকে হুট করে ১০ হাজার কোটি ডলারের কথা তোলা সম্মেলনকেই অকার্যকর করে দেবে। অপরদিকে, এ সম্মেলনে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০% ভূমি ও সমুদ্র সংরক্ষণের ব্যাপারে শতাধিক দেশ দাবি জানায়। বর্তমানে ১৭% ভূমি ও ৭% সমুদ্র সংরক্ষিত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৩০% সংরক্ষণ খুব কঠিন কিছু নয়। অন্যদিকে, পরিবেশবাদীরা আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ করার প্রবল দাবি জানিয়ে বলেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হচ্ছে এমন ৮০% অঞ্চলে তাঁদের বসবাস। ফলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে তারাই এগিয়ে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে গিয়ে যেন আদিবাসীদের অধিকার পদদলিত না হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ভিডিওর মাধ্যমে দেয়া ভাষণে বলেন, মানবজাতি হলো অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি, শুধু সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। বাস্তুসংস্থান সমৃদ্ধ হলে সভ্যতা সমৃদ্ধ হবে। আমাদের উচিত যৌথভাবে মানুষ ও পরিবেশের সহাবস্থান তৈরি করা ও পৃথিবীতে অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পৃথিবী গড়ে তোলা। এই সম্মেলন নিয়ে টুইট করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, সহযাত্রীদের প্রতি আমার বার্তা হলো, ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখন নয়। বড় সিদ্ধান্ত নিন। জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক আইনি সংস্থা সিবিডির মহাপরিচালক এলিজাবেথ মারুমা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘বিলুপ্তির সারিতে দাঁড়ানো ১০ লাখ জীব প্রজাতির আর্তনাদ শুনুন, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগজনক আওয়াজ শুনুন, প্রাকৃতিক ওষুধের ওপর নির্ভরশীল ৪০০ কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর শুনুন, এগুলো শুনে-বুঝে কী করা উচিত, তা নির্ধারণ করুন।
এই অবস্থায় সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য জীববৈচিত্র্য রক্ষার চুক্তি নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এমনকি সম্মেলন একদিন বর্ধিত করারও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। কিন্তু না, প্রকৃতিপ্রেমীদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে শেষ দিন, গত ১৯ ডিসেম্বর শেষ সময়ে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান সুরক্ষায় একটি চুক্তি হয়, যা ঐতিহাসিক চুক্তি বলে খ্যাত হয়েছে। এই চুক্তিতে বিশ্বের ১৯১টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র জীববৈচিত্র্যসংক্রান্ত কনভেনশনের সদস্য না হয়েও এই চুক্তি প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এই চুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে: ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ভূমি ও সমুদ্রের ৩০% রক্ষা করা। আদিবাসীদের অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া। ধনী দেশগুলো জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি ডলার অর্থ দেবে। অর্থ বর্তমানে দেওয়া জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত সহায়তার দ্বিগুণ। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর কমপক্ষে তিন হাজার কোটি ডলার দিতে হবে, যা এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক সহায়তার তিন গুণ হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রজাতিগুলোর বিলুপ্তি ও ঝুঁকি ১০ গুণ হ্রাস করতে হবে। এই চুক্তিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে পরিবেশ ধ্বংসের বিপরীতে বড় ঐতিহাসিক অর্জন তথা ‘প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিচুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, এই চুক্তিকে ২০১৫ সালে প্যারিসে সই হওয়া জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন কানাডার পরিবেশমন্ত্রী স্টিভেন গিলবো। আর ক্যাম্পেইন ফর নেচারের পরিচালক ব্রায়ান ও’ডনেল বলেছেন, ভূমি ও সাগর রক্ষায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তি এটি। সর্বোপরি গত ১৯ ডিসেম্বর সম্মেলনে বিশ্বের জীববৈচিত্র্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের অধিবেশনে কুনমিং-মন্ট্রিয়ল বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামো গৃহীত হয়। এতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের জীববৈচিত্র্য প্রশাসনের চিত্র তুলে ধরা হয়।

মন্ট্রিয়ল কপ-১৫ সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য রক্ষার যে চুক্তি হয়েছে, তা ঐতিহাসিক চুক্তি নিঃসন্দেহে। কেননা, এ ধরনের চুক্তি আগে কখনো হয়নি। ফলে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে প্রকৃতির ব্যাপক কল্যাণ হবে। চুক্তি পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববাসীর একযোগে কাজ করা দরকার। ইতোমধ্যেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং গত ২০ ডিসেম্বর বলেছেন, ‘কুনমিং-মনট্রিয়েল বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামো’ আন্তর্জাতিক সমাজে প্রশংসিত হয়েছে। তাই আলোচ্য কাঠামোর আওতায় আন্তর্জাতিক সমাজ একসঙ্গে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে মানবজাতির সাথে প্রকৃতির সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্য পূরণে কাজ করবে। মন্ট্রিয়ল কপ-১৫ সম্মেলনে ৬০টিরও বেশি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে না পারলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যাবে না। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি। বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি রোধ হচ্ছে না। বেড়েই চলেছে। বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১৫ সালে প্যারিসে চুক্তি হয়েছে। তাতে সংস্থাটির প্রায় সব সদস্য দেশ স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু সে চুক্তি পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি এখনো। বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধির জন্য প্রধান দায়ী বায়ুদূষণ। আর এর জন্য সর্বাধিক দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, যার প্রধান দায় কয়লার। তবুও কয়লার ব্যবহার বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত আইইএয়ের তথ্য মতে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে ভারতে ১৪%, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৬% ও চীনে ০.১৪%। এতে বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার জন্য মিশরে অনুষ্ঠিত কপ-৭ সন্মেলনে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু এতে সাফল্য আসেনি ভারত ও চীনের প্রবল আপত্তির কারণে। তাই শেষাবধি বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা হ্রাসের ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি, যা এ সম্মেলনের চরম ব্যর্থতা! তবে, কপ-৭ সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠনের একটি চুক্তি হয়েছে, যা কার্যকর হলে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশের অনেক কল্যাণ হবে। এই চুক্তিও এক বিরাট সাফল্য। তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কত তা নির্ধারণ হবে আগামী সম্মেলনে। এই চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রখ্যাত জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তাই তাঁকে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচারে’র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০ জন জলবায়ু বিশেষজ্ঞের ২০২২ সালের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাহোক, হোহেনহেইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র পরিসংখ্যানবিদ এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. জোসেফ সম্প্রতি বলেছেন, পরিবর্তিত আবহাওয়া কেবল খাদ্য নিরাপত্তাকেই প্রভাবিত করছে না, এটি আরও বাস্তুচ্যুতি ও সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক। রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত যুব জলবায়ু সম্মেলনে গত ২৭ ডিসেম্বর বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়বেই। যতদিন যাবে, সংকট ততই বাড়বে। তাই এখন থেকেই এ-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য মানুষ এর শিকার হবে।

বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি রোধ করা না গেলে জীববৈচিত্র্যও রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি রোধ করা অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই শুধু জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে, তা নয়। সচেতনতার অভাবে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের সম্পদ লিপ্সার কারণে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। যেমন: ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণে দেশের অধিকাংশ নদী মরে গেছে। যেটুকু আছে তাও নাব্য সংকটে ভুগছে। এছাড়া, জীবিত নদীগুলোর বিরাট অংশ দখল হয়ে গেছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে বলেন, সারাদেশের নদীর অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ৬৫,১২৭ জন। এই দখলদারদের কারণে নদীগুলো জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া, নদীগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে ভরাট হয়ে গেছে। অপরদিকে, পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশে বন বিভাগের ২,৫৭,১৫৮ একর বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। দখলকারীরা বন বিভাগের জমিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি হাটবাজার, দোকানপাট ও ভারী শিল্পসহ ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। দখলকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১,৬০,৫৬৬ বলে গত ২২ ডিসেম্বর এক দৈনিকে প্রকাশ। অপরদিকে, প্রতিটি দেশে মোট আয়তনের ২৫% বনাঞ্চল থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এ দেশে আছে মাত্র ৭-৮%। এছাড়া, অবৈধভাবে পশু-পাখি শিকার ও হত্যার সংখ্যাও ব্যাপক। সর্বোপরি দেশের নদীদূষণ, বায়ুদূষণ, পরিবেশদূষণ, শব্দদূষণ বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। এসব নৈরাজ্য চলছে বহুদিন থেকেই। তাতে ক্ষতি হচ্ছে অপরিসীম। তবুও এর প্রতিকার হচ্ছে না সুশাসনের অভাবে। কিছু কম-বেশি এরূপ অবস্থা বহু দেশেই বিরাজ করছে। তাই বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা হ্রাস ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এবং এর ক্ষতিপূরণের জন্য সব কিছুই জাতিসংঘ ও ধনী দেশগুলো করবে, আর গরিব দেশগুলো ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করবে এবং নিজেরা ধ্বংস করবে, তা হয় না। পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করার জন্য তাদের নিজেদেরও কাজ করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন