এবারের ২৭তম আসরের কিন্তু পূর্বাচল নতুন শহরের বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের প্রবেশ ফটক তৈরি হয়েছে মেট্টোরেলের আদলে। গতবারে পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি ফটকের এবার স্থান পেল মেট্টোরেল প্রকল্পের রেল সম্বলিত নকশায় দৃষ্টি নন্দন কারুকাজে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। যদিও গত ২৬তম আসর করোনা পরিস্থিতির কারনে ভার্চ্যুয়াল উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। এবার আয়োজনেও আসছে নতুন মাত্রা। এমনটাই জানালেন মেলার পরিচালক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচীব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রাজউকের অধীনে নির্মাণাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৪ নং সেক্টর এলাকায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন নামীয় স্থায়ী প্যাভিলিয়নে চলছে স্টল নির্মাণ ও সাজসজ্জার কাজ। মেলার প্রধান ফটকের প্রবেশ ও বাহির পথের উপরাংশে রাখা হয়েছে মেট্টোরেলের সড়ক ও রেল নকশা। আর এর ভেতরেই প্রবেশ করতে দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানী তাদের স্টল বুঝে পেয়ে ইতোমধ্যে তাদের স্টল দাড় করিয়েছেন। এখন করছেন রঙসহ সাজসজ্জার কাজ। সংশ্লিষ্ট স্টল পাওয়া ব্যবসায়ীদের দাবি, গতবারের চেয়ে এবার মেলায় বাড়বে দর্শনার্থী। কেনাকাটাও হবে আগের তুলনায় দ্বিগুন। এবার তাদের প্রত্যাশার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি হওয়ার আশা করছেন তারা।
সূত্র মতে, বৈশি^ক মহামারি করোনা পরিস্থিতির পর এবার ২য় বারের মতো বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মেলাকে প্রাণবন্ত করতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ। এবার ৩২৫টি স্টলসহ শিশুদের জন্য বিনোদন, খাবারের মানে রাখা হয়েছে বিশেষ নজরদারির আয়োজন, যাতায়াত ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এ মেলাকে ঘিরে তৈরি হতে যাচ্ছে উৎসব মুখর পরিবেশ। ইতোমধ্যে ঝলমল আলোয় আর ডিজিটাল সাজসজ্জায় সেজেছে বাণিজ্য মেলার বেশ কিছু স্টল। ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করার পরই বাড়বে কেনাকাটা। তাই আগে ভাগেই স্টলগুলো প্রস্তুত হতে যাচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বরের আগেই সব সাজসজ্জা শেষ হবে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে মেলা ও এর আশপাশের নিরাপত্তায় মেলার নিয়োজিত বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্য ছাড়াও ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর জেলা পুলিশরাও কাজ করবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে।
রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা আগত দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয় দেখভাল করবেন। সাদা পোষাকেও বিশেষ টিম নিরাপত্তায় কাজ শুরু করেছেন। ফলে নিরাপদ পরিবেশে এ মেলা পুরোপুরি জমে উঠবে।
বাণিজ্যমেলার ফটক ঠিকাদার মনিরুজ্জামানা ভূইয়া বলেন, দেশের উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে বরাবরই বাণিজ্যমেলার ফটকে রাখা হয় ভিন্নতা। এবারও তাই। পূর্বাচল নতুন শহর ও আশপাশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে আশপাশের বাসিন্দাদের অস্থায়ী ঘরবাড়ি ভাড়া নিয়েছেন ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীদের থাকার জন্য।
পূর্বাচলের আব্দুর রউফ মালুম বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে মেলা, তাই খুব আনন্দ লাগছে। প্রথম বছর হওয়ায় হয়তো প্রস্তুত গতে সময় নিচ্ছে। আশাকরি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে জমজমাট হবে এ আসর।
জাঙ্গীরের বাসিন্দা এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন রাজিব বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুত হচ্ছে। স্টল সাজাচ্ছেন,ক্রেতা বিক্রেতাদের ব্যস্ততা দেখছি। এটা যেমন আনন্দের। তেমনি প্রধানমন্ত্রী এখানে আসবেন তা সবচেয়ে বেশি আনন্দের। ইতোমধ্যে স্টলগুলোর ৯০ ভাগ প্রস্তুত হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ইপিবির সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইখতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রতিবছরই মেলা শুরুর দুই তিনদিন পর স্টল নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এখানে এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর বসেছে। তাও আমরা চেষ্টা করছি বাণিজ্যমেলাকে যথাসাধ্য সাজাতে। তবে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে আমাদের সব বিভাগ বিশেষ ব্যস্ত সময় পার করছি। ইতোমধ্যে মেলার সার্বিক দায়িত্বরতদের নিয়ে সভা করে সব পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশাকরি এবার মেলা অন্য যে কোন বছরের তুলনায় সুন্দর ও স্বার্থক হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন