গত ১৯ ডিসেম্বর সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রদত্ত ১৯ দফা ও বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিষণ-৩০-কে ভিত্তি ধরে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুুষের প্রত্যাশার সাথে সমন্বয় করে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনসহ ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে দলটি। আমরা জানি, স্বাধীনতার পরে দেশের সংবিধানকে বহুবার কাঁটাছেঁড়া করা হয়েছে। বিএনপির ঘোষণায় সংবিধানকে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তৈরি করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত সব অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত/সংশোধন করার জন্য একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে। কমিশন যদি দেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করতে পারে তাহলে দীর্ঘমেয়াদে বহু সাংবিধানিক সমস্যার সমাধান হবে। দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি সামাজিক, রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্য বিনষ্ট করে দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বিএনপি ঘোষিত রূপরেখায় প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক Rainbow-Nation প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন ধারার সহনশীল রাজনীতির সূচনা করবে। ধরণাটি নতুন হলেও তা তরুণ সমাজের মাঝে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করবে। কারণ, দেশের তরুণ সমাজ সংঘাত ও প্রতিহিংসার রাজনীতি মোটেই পছন্দ করে না। দেশে রাজনৈতিক বিভাজন প্রকট। এই বিভাজন দূরীকরণে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ঘোষণায় একটি National Reconciliation Commission গঠন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা রাজনীতির মাঠে পরমতসহিষ্ণুতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেশের রাজনীতি সুস্পষ্টভাবে দু’ভাগে বিভক্ত। ২০১৪ সালের ভোটার বিহীন নির্বাচন ও ২০১৮ সালের চরম বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বর্তমান সরকার বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থাকে দেশে বিদেশে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নির্বাচন কালে যে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ পদ্ধতির জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলো, যে লগি-বৈঠার আন্দোলন এখনো মানুষকে আতঙ্কিত করে, সেই দলই দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতকে অগ্রাহ্য করে বিচার বিভাগের একটি রায়ের ওপর দায় চাপিয়ে সেই প্রথা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের অধিকাংশ মানুষ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চায়। যেমনটি বিগত সময়ে সকল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে হয়েছে। একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবার কোনো নজির দেশে নেই। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি সাধারণ ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণে ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার যে কথা বলেছে, তা গণতন্ত্রমনা প্রতিটি মানুষকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী করেছে। দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়। তাই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করার সময়োপযোগী প্রস্তাব করা হয়েছে। পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না মর্মে বিএনপির প্রস্তাবটি সকল শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের প্রস্তাবটি রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজিক ক্ষেত্রে মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির শুভ সূচনা করবে সন্দেহ নেই। তবে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয়টি শুধুমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে বিষয়টি মোটেই যথেষ্ট নয়। ৭০ অনুচ্ছেদের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকলে ভালো হতো।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দেশে যে বিতর্ক চলমান তা নিরসনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ এর অধিকতর সংশোধন করার প্রস্তাব দেশের স্থায়ী নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবে দেশের সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করার কথা বলা হয়েছে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভোটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ প্রদান করার কথাও বলা হয়েছে, যা করা গেলে সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহকে দেশ গঠনের কাজে লাগানো সহজ হবে।
দেশের বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে। বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে বর্তমান বিচারব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিসিয়াল কমিশন’ গঠন করার প্রস্তাব হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী মানুষের মনে স্বস্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনে দলীয়করণ এবং ওএসডি ব্যবস্থা প্রশাসনকে অনেকটা দুর্বল করে দিয়েছে। দলীয় বিবেচনায় পদন্নোতি এবং ওএসডি যে শুধু এই সরকারের সময়েই হয়েছে তা কিন্তু নয়। সকল সরকারের আমলেই কমবেশি দলীয়করণ হয়েছে। তবে বর্তমানে তা সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করার যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে একটি মেধাসম্পন্ন দক্ষ প্রশাসন গঠনে গাইড লাইন হিসেবে কাজ করবে। আমরা জানি, মিডিয়াকে গণতন্ত্রের তৃতীয় চোখ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের রোষানলে পড়ে মিডিয়াকর্মীদের স্বাধীনতা আজ অনেকটা সীমিত। মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করার প্রস্তাব মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় পজেটিভ ভূমিকা রাখবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে কম বেশি সকল সরকারের আমলেই উন্নয়ন হয়েছে। তবে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও বেপরোয়া দুর্নীতি দেশে বিদেশে প্রিয় মাতৃভূমির ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। আর্থিক খাতের অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতি সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতার এত বছরেও দেশ থেকে দুর্নীতি রোধ করা যায়নি। টাকা পাচার অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস না করা, অর্থপাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করার ঘোষণা দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ায় বিএনপির অঙ্গীকার বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল (Ombudsman)’ নিয়োগ করার ঘোষণা রাষ্ট্রের সকল স্তরে সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।
সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব ও Universal Human Rights Charter অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখবে। জাতি সেটা প্রত্যাশা করে।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতির বেহাল দশা থেকে পরিত্রাণ পেতে এ খাতের বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করার প্রস্তাব দীর্ঘদিনের জনদাবির সামর্থক। এধরনের কমিশন গঠনের প্রস্তাব শুধু বিএনপি নয়, বরং দেশপ্রেমিক সকল মানুষের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে। ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকারের ঘোষণা সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে নিজ নিজ ধর্ম চর্চার নিশ্চিয়তা দিয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির যাঁতাকলে নিষ্পেষিত জনজীবন। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষের ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ কিন্তু সে তুলনায় আয় বাড়েনি। ফলে মানুষ জীবনধারণে সঞ্চয় ভেঙ্গে ব্যয় নির্বাহ করাসহ ব্যয় সংকোচন করতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সময়োপযোগী।
জ্বালানি সংকটে দেশের বিদ্যুৎ খাত। শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না দিতে পারার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলোতে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কোটি কোটি টাকা সরকার দলীয় কিছু ব্যবসায়ীকে প্রদান করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় করেছে। অথচ, আইন করে বিদ্যুৎ খাতে এসব অস্বচ্ছ ব্যয়ের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করার ঘোষণা এ খাতের দুর্নীতি রোধে কার্যকর অবদান রাখবে। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিএনপির বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত না করা এবং দেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়ার ঘোষণা বিশ্বব্যাপী চলমান সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের প্রতি বিএনপির সুস্পষ্ট অঙ্গীকার, যা বিশ্বদরবারে প্রশংসিত হবে। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। আমাদের সবারই জানা, সেনাবাহিনী আমাদের গৌরবের প্রতীক। দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলার জন্য বিএনপির রূপরেখায় অঙ্গীকার করা হয়েছে। এটি একটি ভালো দিক সন্দেহ নেই। ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, নাগরিক হিসেবে যা আমাদের আশান্বিত করেছে। যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা, এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি শিক্ষিত ও আধা শিক্ষিত যুব সমাজের অন্তরে স্থান করে নিতে পেরেছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। বেকারভাতা প্রদান একটি সাহসী উদ্যোগ। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দেশের অর্ধেক নারী। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা, জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়ার ঘোষণা জিয়াউর রহমান প্রদত্ত নারীনীতির প্রতি নতুন করে বিএনপির অনুসমর্থন হিসেবেই বিবেচিত হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লের চাহিদা মোকাবেলায় চাহিদাভিত্তিক (Need-based) ও জ্ঞানভিত্তিক (Knowledge-based) শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার ঘোষণা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী। স্বাস্থ্যই সুখের মূল ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের NHS এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করার ঘোষণা জনমুখী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অঙ্গীকার বিএনপিকে প্রশংসিত করবে। এখনও কৃষিই আমাদের অর্থনীতির মূলচালিকাশক্তি। কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রতিটি উপকরণের দামবৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু কৃষক অনেক সময় তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। তাই কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ঘোষণা কৃষিতে সুদিনের হাতছানি দিচ্ছে। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফার প্রতি ইতোমধ্যেই দেশের ক্রিয়াশীল ৩৩টি রাজনৈতিক দল সমর্থন জানিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে নির্বাচনের একবছর আগে বিএনপির এধরনের যুক্তিসঙ্গত জনমুখী ডকুমেন্টেড দলিল দেশে সুস্থধারার রাজনীতি চালু করার জন্য সহায়ক হবে। দেশবাসী আশা করে, বিএনপি জনসম্মুখে যে অঙ্গীকার করেছে তা ভুলে যাবে না।
লেখক: প্রফেসর, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
drhasnat77@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন