মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও তীর সংরক্ষণ বাঁধ

ধুনটে যমুনার বালু উত্তোলন

বগুড়া ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

টেন্ডার শিডিউলের বাইরে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় ঐ এলাকার জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রতিবাদে সম্প্রতি ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াজান গ্রামের যমুনা নদীর পাড়ে এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ এই মানববন্ধন কর্র্মসূচি পালন করে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চৈবের মৌজার ৩৬.৯৩ একর সরকারি খাস জমি ৬ মাসের জন্য বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়। ধুনট উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন ওই বালু মহালের ইজারাদার হিসাবে নিযুক্ত হন।
অভিযোগ উঠেছে ইজারাদার বেলাল হোসেন নির্ধারিত চৈবের মৌজা থেকে বালু উত্তোলন না করে নদীর পশ্চিমে শহড়াবাড়ী, শিমুলবাড়ী, বানিয়াজান, নিউ সারিয়াকান্দি ও কৈয়াগাড়ী মৌজা থেকে ১০-১২টি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে দিন-রাত বালু উত্তোলন করে আসছে। সেই বালু পার্শ^বর্তী শহড়াবাড়ি ও বানিয়াজান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে জমা রেখে বিক্রির পাশাপাশি নদী পথেও বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাত্র ১৫০ মিটার দূরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে ২০০২ সালে নদী ভাঙন রক্ষায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বানিয়াজান স্পার এবং ২০১৬ সালে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলনের ইজারাদার বেলাল হোসেন এবং সাব ইজারাদারদের যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সরকারি কোটি টাকার সম্পদ যেভাবে হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষদের বসতভিটা ও ফসলী জমি ফের ভাঙনের কবলে পড়েছে।
এবিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে বানিয়াজান গ্রামের আমিনুল ইসলাম পলাশ নামে এক ব্যক্তি লিখিতভাবে বগুড়া জেলা প্রশাসক, ধুনট ইউএনও, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূমি মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে শতাধিক গ্রামবাসী যমুনা নদীর পাড়ে ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বানিয়াজান গ্রামের আমিনুল ইসলাম ও ইয়াকুব আলী জানান, বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বালুমহাল ইজারা নেন বেলাল হোসেন। কিন্তু ইজারাকৃত জমিগুলো চর পড়ে যাওয়ায় বেলাল হোসেন অন্য মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। গত ১৫ দিনেই তারা প্রায় এক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছেন। এভাবে বালু উত্তোলন করা হলে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের জমিজমা, ঘরবাড়ি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই স্থানীয় এলাকাবাসী বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
তবে এবিষয়ে বালুমহালের ইজারাদার যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন বলেন, ইজারা মূল্যের থেকে অনেক বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করতে সমস্যা হওয়ায় অন্য পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এলাকার কোন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন তিনি।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে প্রায় ১৬ বার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাসহ জেল-জরিমানা করা হয়। কিন্তু তারপরও তারা রাতের আধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল। একারণে দুই মাস আগে যমুনা নদীর চৈবের মৌজা সরকারিভাবে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়। তবে ইজারা যদি নির্ধারিত মৌজা ছাড়া অন্য কোথাও থেকে বালু উত্তোলন করে থাকেন, তাহলে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন