২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার ৮৯১ জন শ্রমিক এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন। এ নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৯৩৫ জন কর্মী পাঠানো হয়। সে বিবেচনায় ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী পাঠিয়ে রেকর্ড করেছে সরকার।
দক্ষিণ কোরিয়ার চাহিদা অনুসারে পর্যায়ক্রমে এই শ্রমিক পাঠানো চলমান থাকবে।
২০২৩ সালের কোটায় প্রায় সাত হাজার কর্মী পাঠানোর প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি হয়। ২০০৮ সাল থেকে দেশটিতে দক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু হয়। বোয়েসেল ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস অব কোরিয়া (এইচআরডি কোরিয়া) স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইপিএসের আওতায় কয়েক ধাপে প্রার্থীরা নির্বাচনের পর চাহিদা অনুসারে দক্ষ কর্মীরা কোরিয়ার শিল্প খাতে যাওয়ার সুযোগ পান।
রাজধানীর কয়েকটি কোরিয়ান ভাষা শিক্ষার কোচিং সেন্টারে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার কিছু কারণ জানা গেছে। সেখানে ন্যূনতম এসএসসি পাস ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভাষা শিখতে দেখা গেছে। অনেকে (১৮-৩৯) অন্য চাকরি ও পড়াশোনার পাশাপাশি এই ভাষা শিখছেন।
তাঁরা বলছেন, দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জীবনমান উন্নয়নসহ স্বল্প সময়ে অধিক টাকা আয় করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। লটারিতে নাম এলে শুধু ভাষা শিখে স্বল্প খরচে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায় বলে তাঁরা এই পথে হাঁটছেন। তাঁদের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার সেরা।
রাজধানীর রামপুরা এলাকার ইউনিভার্সেল কোরিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটের (ইউকেএলআই) পরিচালক ও প্রশিক্ষক মোরশেদ আলম প্রিন্স কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৫ বছরের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতায় দেখছি, দিন দিন মানুষ দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বছর দুয়েক ধরে অনার্স-মাস্টার্স পাস, এমবিএ করা মানুষজন—এমনকি বেসরকারি খাতের অনেক চাকরিজীবীও ভাষা শিখছেন। এই সংখ্যা বাড়ছে। মূলত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় স্বল্প খরচে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারা, উচ্চমানের বেতন ও ভালো জীবনমানের জন্যই উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছি। লটারি ছাড়াও ২০২২ সালে শুধু ভাষায় পারদর্শী ব্যক্তিদের পরীক্ষার মাধ্যমে কোরিয়ায় যাওয়ার তালিকাভুক্ত করা হয়। এ জন্য লটারিতে নাম আসার অপেক্ষা না করে অনেকে আগে থেকে ভাষা শিখছেন।
দক্ষিণ কোরিয়া যেতে ইচ্ছুক রাহাত হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো চাকরি পাচ্ছিলেন না। এ জন্য আবেদন করেন। লটারিতে নাম আসার পর তিনি ভাষা শিখছেন।
রাহাতের মতো আরো অনেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি না পেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন বলে জানা গেছে।
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য বোয়েসেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় কাঠশিল্পে কর্মরত বাংলাদেশি সোহেল রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, শনি ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি, বাকি পাঁচ দিন কাজ করতে হয়। বাংলাদেশি কর্মীদের একজনের ন্যূনতম মাসিক আয় প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো। তবে ছুটির দিনসহ ওভারটাইমে কাজ করলে মাসে তিন লাখ টাকাও আয় করা সম্ভব। তা ছাড়া অনেক কম্পানি থাকা ফ্রি ও খাওয়ার জন্য বেতনের বাইরে টাকা দেয়।
বোয়েসেলের তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু দক্ষিণ কোরিয়া গেছেন পাঁচ হাজার ৮৯১ জন বাংলাদেশি কর্মী। আগামী বছরও প্রায় সাত হাজার কর্মী যেতে পারবেন বলে আশা করছে বোয়েসেল। বর্তমানে জামানতসহ সব কিছু মিলিয়ে নতুন কর্মীদের দুই লাখের মতো টাকা খরচ পড়ে।
বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, বোয়েসেল দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, যোগ্য কর্মী প্রস্তুত এবং তাঁদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস এবং ইপিএস সেন্টারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইপিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ নির্বাচিত ১৬টি দেশ থেকে মাঝারি ও স্বল্প-দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের রেমিট্যান্সপ্রবাহ ছিল ১৩৫.৪৬ মিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের রেমিট্যান্স আয়ের ১৫টি প্রধান উৎসর অন্যতম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন