ঈদগাঁও উপজেলার ৯টি ইট ভাটায় হরদম পোড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত বনের গাছ। অথচ কিছুই জানেন না বন কর্মকর্তারা! এতে ধ্বংস হচ্ছে সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বনজ সম্পদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদগাঁওতে চলতি শুষ্ক মৌসুমের অন্ততঃ একমাস আগেই শুরু হয়েছে ইট তৈরী ও পোড়ানোর কাজ। কিন্তু কয়লার দাম গত বছরের চেয়ে তুলনামূলক বেশী থাকায় কয়লার পরিবর্তে এখানকার ৯টি ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য শুরু হওয়া ইট পোড়ানো মৌসুমে ঈদগাঁও'র ইট ভাটা মালিকরা সামাজিক বনায়ন ও রিজার্ভ বনের মূল্যবান কাঠ রাত-দিন পুড়িয়ে ইট তৈরি করছেন।
এর ফলে বন-পাহাড় ও বনজসম্পদ ধ্বংস হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে।
ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো আইনতঃ নিষিদ্ধ হলেও আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। আর এতে পরোক্ষ ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে এক শ্রেণীর অসাধু বন কর্মকর্তার।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ঈদগাঁও সদর ইউনিয়নে ৩ টি, ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ৩ টি, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নে ১টি ও জালালাবাদ ইউনিয়নের ২টি ইট ভাটায় প্রায় একমাস আগে থেকেই বনজ গাছ পোড়ানো হচ্ছে।
স্থানীয় ও দুরবর্তী বিভিন্ন বন থেকে গাছচোর সিন্ডিকেট এসব গাছ কেটে ইট ভাটায় সরবরাহ করে আসছে।
ঈদগাঁওর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রামু ও চকরিয়া উপজেলা এবং সুদূর লামা-আলী কদম থেকেও বনজ গাছ এনে এখানকার ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ প্যারাবন থেকে কেঁওড়া গাছ কেটে কার্গো ট্রলারযোগে ইসলামপুর শিল্প এলাকায় খালাস করে থাকে গাছ চোরেরা। এসব গাছ রাতের আঁধারে সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন ইট ভাটায়।
গাছ পাচারকারী সিন্ডিকেট থেকে গাছ সরবরাহ নিয়ে ভাটা মালিকরা বিভিন্ন গোপন স্থানে এসব কাঠ মজুদ করে রাতের আধারে দ্রুতগামী ডাম্পারযোগে ভাটায় সরবরাহ করে থাকেন স্বযত্মে।
চোরাই এসব বনজ গাছ মজুদ ও সরবরাহ করার সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ডজনখানেক অবৈধ ডিপো।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদগাঁও বাস স্টেশনের পূর্ব পার্শ্বে ১টি, স্টেশনের দক্ষিন পার্শ্বে গরুর বাজার এলাকায় ১টি, বাস স্টেশনের উত্তর পার্শ্বে ইসলামাবাদ খোদাই বাড়ীতে ২টি, ঈদগাঁও বাজার সংলগ্ন জাগির পাড়ায় ১টি, মেহের ঘোনায় ১টি, জালালাবাবাদ ফরাজী পাড়ায় ১টি, ইসলামাবাদ বোয়ালখালীতে ২টি ও চৌফলদন্ডীতে ২টিসহ প্রায় ১ ডজন অবৈধ কাঠের ডিপো গড়ে উঠেছে।
এসব ডিপোতে অনুমানিক ৩ হাজার টন চোরাই বনজ গাছ মজুদ করা হয়েছে। দ্রুতগামী ডাম্পারযোগে রাতের আঁধারে এ সব কাঠ সরবরাহ করা হয় ইট ভাটায়।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ঈদগাঁও রেঞ্জ কমকর্তা আনোয়ার হোসেন খাঁন বলেন, বনের গাছ পাচার ও বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কমকর্তা আনোয়ার হোসাইন সরকার বলেন, ঈদগাঁওর ইট ভাটায় গাছ পোড়ানোর বিষয়টি জানা ছিলনা। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন