দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময় বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক)। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নূর খানের উপস্থাপনায় বছরের শেষদিনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক এই প্রতিবেদন বছরের প্রথমদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বছরের প্রথমদিন মানবাধিকার পরিস্থিতির বিভীষিকাময় অবস্থা তুলে ধরার মধ্য দিয়ে নতুন বছরের জন্য সরকারকে একটি খারাপ বার্তা দেয়া হয়েছে। আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় এবং বিদ্যমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা রয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও পরিস্থিতি উন্নয়নে যে ধরণের সামাজিক-রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত এক নম্বর পরাশক্তি ও উন্নয়ন সহযোগীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অসন্তোষ ও নেতিবাচক বার্তা প্রকাশিত হওয়ার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে থাকা ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক বাক-বিতন্ডার পাশাপাশি দেনদরবারের নানা রকম তৎপরতা দেখা গেলেও কোনো সমঝোতা বা সন্তোষজনক সমাধানের অগ্রগতি হয়নি। উপরন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় গুমের শিকার হওয়া একটি পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে সরকারি দলের সমর্থকদের দ্বারা বিড়ম্বনা ও নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হন। রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে আবারো সরকারের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের রির্পোটে বছরের কয়েকবার সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, গুম বা ফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সের অসংখ্য ঘটনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলায় বিরোধীদলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে হয়রানি, গণগ্রেফতার, হুলিয়া ও বিচারের সম্মুখীন করার বাস্তবতায় দেশে এক ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। কোনো সভ্য-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরণের পরিস্থিতি কল্পনা করা যায় না। দেশে চলমান বিচারহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান ঘটনার পেছনে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারীদলের ক্ষমতা স্থায়ী করার কারসাজি এখন কোনো গোপণ বিষয় নয়। দেশের প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এতদিন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করতে থাকা দেশীয় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মত মানবাধিকার সংস্থাও এখন সরব হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রসংশনীয় ভূমিকা থাকলেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে তারা আরো আগে থেকে এমন সরব ভূমিকায় থাকলে তা ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে হয়তো আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। উল্লেখ্য, বিগত ওয়ান-ইলেভেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল আসকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আসকের পক্ষ থেকে এ ধরণের রিপোর্ট কখনো প্রকাশিত হয়নি।
আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতায় অগ্রগতির মূল লক্ষ্য এবং উপজীব্য হচ্ছে, মানবাধিকারের সংরক্ষণ। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানবাধিকারের ব্যাপ্তিও অনেক বেড়েছে। অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভাসমাবেশ করার স্বাধীনতা, জনমত গঠনের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিশ্চয়তা ইত্যাদি সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো এখন মানবাধিকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর এসব অধিকারের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালিত হয়, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। বিশ্বে অনেক অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক অধিকার সীমাবদ্ধ থাকলেও মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করে থাকে। পতিত অবস্থা থেকে দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন, ইতিহাসে এমন একনায়ক-স্বৈরশাসকের অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবার জার্মানীর নাৎসী নেতা এডলফ হিটলারের মত গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও দেশকে ধ্বংসের প্রান্তে ঠেলে দেয়ার দৃষ্টান্তও বিরল নয়। কিন্তু আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন আর কখনো ঘটেনি। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বেশ কয়েকবার সামরিক হস্তক্ষেপ ও স্বৈরশাসনের ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে সত্তুরের নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছিল বলেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় লাভে সক্ষম হয়েছিল। এরশাদের আমলেও সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে এমন গায়েবি মামলা, গণগ্রেফতার, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্তা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি। শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে একতরফাভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গিয়েই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ সুগম করা। কিন্তু ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে কাক্সিক্ষত রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকায় তা একটি একদলীয় নির্বাচনে পরিনত হয়। নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনযন্ত্র ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কাজ করে সে নির্বাচনকে কলুষিত করার অভিযোগ উঠেছিল। ২৯৩টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয়ী আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে ১১টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। এমন একটি প্রতিদ্বন্দিতাহীন নিরঙ্কুশ বিজয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের অগ্যস্তযাত্রা নিশ্চিত করেছিল। এর ফলে দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারী কোনো রাজনৈতিক সংলাপ বা বিরোধীপক্ষের মতামত ছাড়াই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। বিরোধীমত দমন করে একদলীয় ব্যবস্থা কখনোই গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। এক জটিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল প্রতিষ্ঠার পেছনে কিছু সদিচ্ছা ও সরল যুক্তি থাকতে পারে। তবে স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে এসে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপানে আসীন বাংলাদেশ কেন, কোন স্বার্থে একদলীয় নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েছিল তা এখন আর কোনো গোপণ বিষয় নয়।
তিহাত্তরের নির্বাচনে ১১টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলনা। এর ৪১ বছর পর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলনা। দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিলে প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্র সচিবের হস্তক্ষেপ ও দূতিয়ালির ঘটনা ঘটে। সুজাতা সিংয়ের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে নির্বাচন না করার ঘোষণায় অটল থাকা এরশাদকে নির্বাচনে বাধ্য করার ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়ে ওঠার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচনের কথা বললেও সে সুর পাল্টে যেতে বেশি সময় লাগেনি। ভারতের প্রতিনিধি সুজাতা সিং এরশাদকে বলেছিলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না গেলে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির উত্থান হবে। এরশাদ এর জবাবে বলেছিলেন, এ সরকারের কোনো জনসমর্থন নেই, এ অবস্থায় নির্বাচন হলে শতকরা ২ ভাগ মানুষও ভোট দিতে যাবে না। কারা ক্ষমতায় আসবে তা দেখার বিষয় আমার না। জামায়াত-শিবিরের উত্থান হলে তার দায় সরকারের।’ এরশাদ যথার্থই বলেছিলেন। বেশিরভাগ দলের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং ভোটচিত্রে দেখা গেছে, যে সব আসনে নামকাওয়াস্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সেখানেও এমনকি সরকারি দলের সমর্থকরাও ভোট দিতে যায়নি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকারে ঝাপিয়ে পড়া মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চারদশক পেরিয়ে এসে বাংলাদেশে এমন একটি কলঙ্কজনক নির্বাচন গণতান্ত্রিক বিশ্বকে হতবাক করেছিল। এরপরও একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে পরবর্তী চার বছর ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক কাঠখড় পোড়ানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রেখে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলেও অসমতল, একতরফা নির্বাচনী ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। মাঠের বাস্তবতা আঁচ করে সরকারি প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ভোটের আগের রাতে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্স ভরে রাখার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সরকারী দলের নেতারা আবারো একই ধরণের আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতির সংকল্পের কথা বলছে। সম্প্রতি জাপানের সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রশাসনের সহায়তায় ব্যালটে সিল মেরে বাক্স বোঝাই করা প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বের আর কোথাও এমন ঘটনার কথা তিনি কখনো শোনেননি। গত বছর নভেম্বরের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ব নির্ধারিত জাপান সফর হঠাৎ করে স্থগিত হয়ে যাওয়া নিয়ে বেশকিছু কূটনৈতিক কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল। আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অভিন্ন অবস্থানে দেখা যাচ্ছে। জাপানি রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে জাপানের অবস্থানও অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও জাতিসংঘসহ পশ্চিমাবিশ্ব অভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান বিপরীতমুখী। তারা নানাভাবে অভিযোগ অস্বীকার করার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মত উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদারদের সাথেও অনেকটা চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে নিষেধাজ্ঞার আওতা আরো বর্ধিত করার আশঙ্কার কথাও নানা মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রশ্নে সরকারের ক্ষমতাকেন্দ্রিক একগুঁয়েমিপূর্ণ অবস্থান দেশকে বড় ধরণের সঙ্কটে ঠেলে দিতে পারে। কেউ কেউ শ্রীলঙ্কার মত পরিস্থিতির আশঙ্কা করলেও বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা ভিন্ন। তবে ইতিমধ্যে রাশিয়া-আমেরিকার পাল্টাপাল্টি বিবৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ সিরিয়া বা ইউক্রেনের মত প্রক্সি ঠান্ডাযুদ্ধের কবলে পড়ে যাওয়ার সমুহ আশঙ্কা বিদ্যমান। আপাত দৃশ্যে মনে হচ্ছে, আমাদের ক্ষমতাসীন সরকার পশ্চিমা পরাশক্তির প্রভাবকে তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। দেশের সরকারের এমন ভূমিকা যদি ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের দ্বারা প্রমানিত হতো, তাহলে তা দেশের মানুষের কাছে গর্বের সাথে সমর্থনযোগ্য হতো। পশ্চিমারা দেশে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। এ সত্য অস্বীকার করে নিজেদের পরিবর্তিত সংবিধানের দোহাই দিয়ে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের কুপ্রভাব মোকাবেলার শক্তি দেশের নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্র তাদের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টে দেশের ভয়ঙ্কর মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণে ১৪ দফা সুপারিশমালা পেশ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এই আইনে মামলা ও গ্রেফতার না করা এবং নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে সভা-সমাবেশ করার অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের যেকোনো অভিযোগের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ পর্যন্ত সংঘটিত সব বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে বিচার নিশ্চিত করা এবং যেকোনো নাগরিককে আটক বা গ্রেফতারের উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে চলার সুপারিশ করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা বিশ্বের তরফ থেকেও বিভিন্ন সময়ে এ ধরণের দাবী করা হয়েছে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে রাজনীতির বাইরে রেখে রাষ্ট্রের মৌলিক অঙ্গিকার ও সাংবিধানিক নিশ্চয়তা হিসেবে এসব বিষয়ের সমাধান করতে হবে। গুম, খুন, হামলা-মামলা ও ভয়ের সংস্কৃতির সাথে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দুস্তর ব্যবধান রয়েছে।
bari_zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন