সুনামগঞ্জের ছাতকের দুই ঘন্টা সড়ক অবোধ করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক কলেজের এক ছাত্রকে মারধর করে থানায় পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবোধ করে এ আন্দোলন করে কলেজ ছাত্রলীগ। ট্রায়ার জালিয়ে তারা গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে আন্দোলন করে। এতে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ছাতক সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দূর পাল্লার যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, কভার্ডভ্যানসহ সব ধরণের যানবাহন আটকা পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণ। অবশেষে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ স্থগিত করে নেয়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি কলেজ গেইট এলাকায় প্রবেশ করে কলেজের অনার্স এর শেষ বর্ষের ছাত্র রেজাউল ইসলাম। সে ওই কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী ও উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের মৃত আরব আলী ওরফে তেরাবুল্লাহর ছেলে। তার সাথে ছিল গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী নামের এক যুবক। এসময় তাদের সাথে কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের বাকবিতণ্ডার হয়। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে বের হয়ে আসলেও কলেজ অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের হাতে আটক হয় রেজাউল ইসলাম। আটকের পর তাকে মারধর করে দুপুরে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোব্দ হয়ে উঠে। তারা তাদের সহকর্মীর মুক্তি ও কলেজ অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের অপসারণের দাবীতে বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে ট্রায়ার জালিয়ে অবরোধ করে। আন্দোলনকারীদের মুখে শ্লোগান ছিল বিতর্কিত অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের অপসারণ চাই-আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।
এসময় সড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ছাতক-দোয়ারার সার্কেল রণজিত মল্লিক চন্দ্র, ওসি তদন্ত আরিফ সহ ছাতক থানা পুলিশ, সড়কের জয়কলস হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সেলিমসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ স্থগিত করে নিলে সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এসময় ছাতক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ওবায়দুর রউফ বাবলু, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আবদুল গফ্ফার, গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা পুলিশকে সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী ও পূনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের নামে বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি এবং লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখা-লেখি করেছেন অনেকেই। এতে দেখা দিয়েছে মিশ্র পতিক্রিয়া।
এদিকে, ছাত্রলীগ কর্মী আটকের প্রায় ৪ঘন্টা পর বিকেল ৪টার দিকে ছাতক থানা থেকে তার ভাইয়ের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে সহকর্মীকে পেয়ে গোবিন্দগঞ্জে আনন্দ মিছিল করে। মুক্তি পাওয়া ছাত্রলীগ কর্মী রেজাউল ইসলাম বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে তালাবদ্ধ করে হকিস্টিক দিয়ে মারধর করেছেন। কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের মোবাইলে ফোনে যোহাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক গোলাম ফাত্তাহ মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিলেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তাকে তার ভাই আবদুল মালিকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন