দু’ দিনের সফরে খুলনা ও গোপালগঞ্জ আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকালে ঢাকা থেকে সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহাপাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিবেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও পারিবারের সদস্যদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে তাঁর সড়কপথে খুলনা আসার কথা রয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পার হয়ে আড়ংঘাটা বাইপাস ধরে দিঘলিয়া ঘাটে পৌঁছাবেন। ঘাট পার হয়ে তিনি দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় তাঁর মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে কেনা পাট গোডাউন পরিদর্শন করবেন। রাতে তিনি গোপালগঞ্জ ফিরে যাবেন।
আগামী শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে নবগঠিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহাপাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এরপর টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নবগঠিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবা সকালে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড সুজিত অধিকারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফর রাষ্ট্রীয় নয়। সে কারণে তাঁর সঙ্গে আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মীর সাক্ষাৎ হবে কিনা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিঘলিয়ার নগর ঘাট এলাকায় একটি জমি কেনা ছিল। জমির ওপর পাট গোডাউন ছিল। নেত্রী দীর্ঘদিন সেখানে আসেননি। আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৮২ সালে একবার এসেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা দেখা করতে পারবেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩ মার্চ খুলনায় এসেছিলেন।
সূত্র জানায়, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে দিঘলিয়ার ভৈরব নদের কোলঘেষে নগরঘাট এলাকায় ১ একর ৪৪ শতক জমিতে পাট গোডাউন ও এক কক্ষ বিশিষ্ট ঘরসহ জমি কেনেন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ছোটভাই শেখ আবু নাসের এ জমি দেখাশোনা করতেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী এ জমির মালিক হলেও জমিটির কথা জানতেন না তিনি। ২০০৭ সালে তিনি তার ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে এ জমির খোঁজ পান। বঙ্গবন্ধুর পুরাতন সেই পাট গোডাউন ভেঙে সেখানে আধুনিক গুদামঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে রেস্ট হাউজ। গোডাউন সংলগ্ন পাকা রাস্তার নামকরণ হয়েছে শেখ রাসেলের নামে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নবগঠিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের খুলনা ও গোপালগঞ্জে আগমনকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রিয় নেত্রীকে বরণ করে নিতে নেতা সব ধরণের কর্মীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন।
গোপালগঞ্জে যে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হলো, মধুমতি নদীতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং র্যাম্প, টুঙ্গিপাড়া লঞ্চঘাটে বাঘিয়ার নদীর পাড়ে বোট ল্যান্ডিং র্যাম্প, পাটগাতি ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস, পাটগাতি শ্মশান উন্নয়ন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, কুশলী জাট জিসি-ধারাবাশাইল ভায়া মিত্রডাঙ্গা-সোনাখালী সড়কে ১৩০৪০ মিটার চেইনেজে তারাইল খালের উপর ৪৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, তারাইল জসি-টুঙ্গিপাড়া হেড কোয়ার্টার ভায়া নারায়ণখালী সড়ক ইউনি বøক দ্বারা উন্নয়ন চেইনেজে ০০-৪৩৪০ মিটার, বান্ধাবাড়ী ইউপিসি-জহরেরকান্দি বাজার সড়কে ৫ মিটার চেইনেজে ৩০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, হরিণাহাটি বাজার-রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে ১০ মিটার চেইনেজে ৬০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, পিঞ্জুরী-সোনাখালি ভায়া চেয়ারম্যান বাজার সড়কে ১০১০০ মিটার চেইনেজে ৪২ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, পিঞ্জুরী-সোনাখালি ভায়া চেয়ারম্যান বাজার সড়কে ৮৫৫০ মিটার চেইনেজে ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, কলাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড-রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়-কালিগঞ্জ বাজার সড়কে ৫০০ মিটার চেইনেজে ৪৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মাঝবাড়ী আরএইডি-রাধাগঞ্জ বাজার সড়কে ২১০০ মিটার চেইনেজে ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, কোটালীপাড়া পারকোনা শ্রী শ্রী গনেশ পাগল মন্দির, মাঝবাড়ী ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস, ত্রিপল্লী শেখ আবু নাসের উচ্চ বিদ্যালয় টুঙ্গিপাড়ার একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ, রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় কোটালীপাড়া ৪ তলা একাডেমিক ভবন, টুঙ্গিপাড়া পৌর বাস টার্মিনাল, জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন, ৬ তলা বিশিষ্ট পৌর সুপার মার্কেট, কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, মেরামত এবং নবরুপায়ন, শেখ লুৎফর রহমান গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র, পূর্ব উত্তর কোটালীপাড়া দারুছুন্নাহ সালেহিয়া ফাজিল মাদরাসার ৪ তলা একাডেমিক ভবন, স্বাধীনতা সদর ডাক বাংলো, পাটগাতী জিসি হতে বাঁশবাড়িয়া জিসি সড়কের ৫০১৪ মিটার চেইনেজে ২২৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ, বাঁশবাড়িয়া ঝনঝনিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা মসজিদ কমপ্লেক্স, টুপুরিয়া আরএন্ডএইচ- ধোরার জিপিএস সড়কে শুণ্য মিটার চেইনেজে ৪৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মাঝবাড়ী আরএন্ডএইচ-রাধাগঞ্জ বাজার সড়কে ৬৭০০ চেইনেজে ৯০ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ। ২৮টি প্রকল্পের মধ্যে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। বাকি ৯টি প্রকল্প শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগ এবং টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা বাস্তবায়ন করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন