শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মাদরাসার ‘ধর্ম ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে সকল ধর্মকে আঘাত করা হয়েছে

জাকারিয়া শাহীন | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্র্তৃক প্রণীত ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মাদরাসার দাখিল ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে মানব সৃৃষ্টির উৎস সম্পর্কে ডারউইনের বিবর্তনবাদের আদলে ধারণামূলক ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে। এই ইতিহাস ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের হাজার হাজার বছর ধরে লালন করা বিশ্বাসের উপর আঘাত করছে। ইতঃপূর্বে ২০১৩ সাল থেকে স্কুলের নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিসহ অনার্স ও মাস্টার্স স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন পাঠ্য বইয়ে বিবর্তনবাদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা ইসলামী শিক্ষা ও মানব ইতিহাসের চরম বিকৃতি। বিবর্তনবাদ মানুষ ও বানরের পূর্ব পুরুষ একই সাব্যস্ত করে, যা মুসলমানদের ঈমান বিরোধী একটি কুফরি মতবাদ। এই বিবর্তনবাদ বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না। বিবর্তনবাদ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার ধারণা থেকে মানুষকে বের করে নিয়ে আসা। পৃথিবী থেকে সকল ধর্মের অস্তিত্বকে বিনাশ করা। বিবর্তনবাদ শুধু মানব সৃষ্টির উৎসকে অস্বীকার করে না, বরং আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রসহ সকল সৃষ্টিরাজিকে মহান আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেনÑ এই বিশ্বাসকেও অস্বীকার করে। কারণ, ডারউইন বা নব্য ডারউইনদের বক্তব্য হলো, ‘সবকিছু প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি হয়। কেউই তার ¯্রষ্টা নয়’।

‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় ‘মানুষ ও সমাজ এলো কোথা থেকে?’ শিরোনামে মানব জাতির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে শুধু কঙ্কাল, ফসিলনির্ভর করে ধারণামূলকভাবে বিবর্তনের তথ্য ও পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। এই আলোচনার মূল কথা হচ্ছে, মানুষ ও বানরের পূর্ব পুরুষ একই ছিল। (নাউযুবিল্লাহ)। পাঠ্য বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠায় এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক মানব প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। এই বিবর্তন পৃথিবীর নানা অঞ্চলে নানা সময়ে ঘটেছে। আমাদের প্রথমে মনে রাখতে হবে যে, আধুনিক মানুষ ও বানর... একটি সাধারণ প্রাইমেট জাতীয় প্রজাতি থেকে যাত্রা শুরু করেছে। প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিম্পাঞ্জি, গরিলা (বানরের প্রকার) ... ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অন্যদিকে বানর তৈরী হয়েছে। আর একটি ধারায় মানুষ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে নানান পর্যায়ে।... মানুষ, শিম্পাঞ্জি আর বানরের বিভিন্ন প্রজাতি একই ধরনের প্রাইমেট প্রজাতির প্রাণী থেকে বিকশিত হয়েছে। এই বিকাশে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লেগেছে। মানুষের এই বিবর্তন বা রূপান্তর হতে লক্ষ লক্ষ বছর লেগেছে।’ (নাউযুবিল্লাহ)।

পাঠ্য বইয়ে উল্লিখিত এই থিওরিটি পবিত্র কুরআন ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের ইতিহাসের বিপরীত এবং পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। এমন মতবাদ পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা নিঃসন্দেহে সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের উপর চূড়ান্ত পর্যায়ের জুলুম। এর চেয়ে বড় জুলুম হলো, যে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় আল্লাহর প্রতি ঈমান-আকিদার ভিত মজবুতের জন্য, সেই মাদরাসার পাঠ্য বইতে আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস লালনের জন্য অনুমানভিত্তিক থিওরি উল্লেখ করা, নাস্তিক্যবাদের বীজ বপন করাÑ এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও মুসলমানদের সাথে উপহাস করার নামান্তর।

ইসলাম বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের বিরোধী নয়। বরং মানব কল্যাণে এগুলোর প্রতি উৎসাহিত করে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান হলো মানুষের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান। তা কখনো আসমানী জ্ঞান বা হাজার হাজার বছরের প্রমাণিত ইতিহাসের বিপরীত সত্য হতে পারে না। মানুষের গবেষণালদ্ধ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো সাধারণত দু’ধরনের। একটি প্রাক্টিক্যাল (প্রমাণিত সত্য) অপরটি থিওরিটিক্যাল। প্রাক্টিক্যাল আবিষ্কারগুলো কুরআন মাজিদের সাথে বা প্রাচীন কোনো ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না। যেমন; বিমান, রকেট, জহাজ, ইত্যাদি। আর থিওরিটিক্যাল গবেষণাগুলো সাধারণত কোনো কিছুর উপর ভিত্তি করে ধারণামূলক হয়ে থাকে। এটি কখনো সত্য হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। আমরা অনেকেই বিজ্ঞানের এই থিওরিটিক্যাল তথ্যকে প্রাক্টিক্যাল তথ্য বা আবিষ্কারের মতো চূড়ান্ত জ্ঞান মনে করি, যা ভুল চিন্তা ও মানসিকতা। এর উত্তম দৃষ্টান্ত হলো, মিশরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লডিয়াস টলেমি বলেছিলেন, ‘সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে।’ অর্থাৎ, পৃথিবী স্থির আর সূর্য তার চারপাশে ঘোরে। আজকের বিজ্ঞান কি তা বিশ্বাস করে? কক্ষনো না। অথচ, ২৫০ বছর ধরে পৃথিবীর মানুষ এই মিথ্যা তথ্যকে বিশ্বাস করে আসছিল। যাদের মধ্যে আবার বড় বড় বিজ্ঞানী, গবেষেকও ছিল। তারাও এই বিশ্বাসই করতো। পরবর্তীতে তার ঠিক বিপরীত থিওরি প্রকাশ করেন নিকোলাস কোপার্নিকাস, ‘পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে’। অর্থাৎ, সূর্য স্থির আর পৃথিবী তার চারপাশে ঘোরে। সূর্য ঘোরে না। তার এই থিওরিও বিজ্ঞান মহলে প্রায় ৫০ বছর টিকে ছিল। আজকের বিজ্ঞান কোপার্নিকাসের এই তথ্যকে ভুল প্রমাণিত করে। বর্তমান বিজ্ঞানীরা বলে, পৃথিবী ও সূর্য উভয় তাদের নিজস্ব কক্ষপথে ঘোরে।

মানব জাতির ইতিহাস সম্পর্কে বিবর্তনবাদের এইসব ধারণামূলক তথ্য চূড়ান্তভাবে বর্জিত। কারণ, এই তথ্য মানব সৃষ্টির প্রকৃত ইতিহাসের বিপরীতÑ যা মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন। ইতিহাস শাস্ত্রের মূলনীতিমূলক কথা হলো, ইতিহাস কখনো ধারণানির্ভর হতে পারে না। প্রাচীন ও আধুনিক জ্ঞান সম্ভারের একটি মৌলিক উৎস হচ্ছে ইতিহাস। কেউ ইচ্ছে করলেই কোনো লজিক বা যুক্তি দিয়ে এই জ্ঞান উৎসের উপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। ধারণামূলক বা কল্পিত কোনো জ্ঞান এতে যুক্ত হতে পারে না। এই মহাবিশ্ব ও প্রাণিজগতের ইতিহাস দুটি অবস্থায় বিভক্ত; এক. মানব সৃষ্টির পূর্বের ইতিহাস। দুই. মানব সৃষ্টির পরের ইতিহাস। উভয় অবস্থার প্রকৃত ও চূড়ান্ত ইতিহাস এই মহাবিশ্ব ও সমস্ত প্রাণীকূলের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তাআলা সঠিকভাবে জানেন। হ্যাঁ, মানব সৃষ্টির পরের ইতিহাস প্রত্যক্ষদর্শী কোনো ব্যক্তি বা দল থেকে যুগ শতাব্দির ক্রমবিকাশে বংশ পরম্পরায় আমাদের কাছে পৌঁছতে পারে। কিন্তু মানব সৃষ্টির পূর্বের ইতিহাস চূড়ান্তভাবে আমাদের নিকট মহান সৃষ্টিকর্তার সংবাদ ব্যতীত পৌঁছতে পারে না। (চলবে)


লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
hassan ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:২৫ পিএম says : 0
ইসলাম বিদ্বেষী সরকার এ দেশ থেকে ইসলাম বিদায় করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে কত যে আলেমদেরকে জেলের মধ্যে ভরে রাখা হয়েছে সেটার সঠিক তথ্য আমরা জানি না এখনও যদি আমরা মুসলিমরা জেগে ওঠে তবে আমাদের দেশ পুরাপুরি কাফের হয়ে যাবে শুধু লেখালেখি করে কাজে আসবেনা নবী সালাম তলোয়ারদিয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন
Total Reply(0)
jack ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:৩২ পিএম says : 0
যারা ডারউইনের মতবাদ প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছেন তারা সব থেকে নিকৃষ্ট জন্তু শুয়োরের থেকেও অধম কেননা শুয়োর জানে যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছে এবং শুয়োর সে আল্লাহকে 100% এবাদত করে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন