আওয়ামী লীগের ১০ বারের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াদের হাত আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
আগুন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগুন দিয়ে আবারো মানুষ পোড়াতে চাইলে তাদের হাত আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। কেউ দেশের ক্ষতি করতে চাইলে জনগণই তার উপযুক্ত জবাব দেবে। তারা (বিএনপি) নির্বাচন চায় না। ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি-জামায়াত মানবাধিকার লংঘন করেছে। জিয়াউর রহমান গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে তার স্ত্রী এবং ছেলে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই জনগণের পাশে আছে। এটি আওয়ামী লীগের নীতি। দেশবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে যা যা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সরকার সবই করে যাচ্ছে। শুধু সরকার নয়, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে আওয়ামী লীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তোলাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ১৪ বছরে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়নসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এসব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীও হবে স্মার্ট। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাস ও যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো থেকে প্রমাণিত হয়, দল সর্বদা জনগণের প্রতিটি দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকে। জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করে গেছেন কাজেই এদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও সবসময় মানুষের পাশে আছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের যে নতুন কমিটি হয়েছে আমাদের কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমাদের যা যা করণীয় তা আমরা করে যাব, তাদের পাশে আমরা চিরদিন থাকবো, চিরদিন আছি এবং মানুষের সেবা করাটাই আমাদের সব থেকে বড় লক্ষ্য। গত তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে এসে প্রতি নির্বাচনেই তার দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। আর সেজন্য আজকে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে। জাতির পিতার ৭ মার্চের যে ভাষণ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর এদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সেই ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। যে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান নিষিদ্ধ ছিল তাকে আমরা আজকে জাতীয় শ্লোগান হিসেবে ফিরে পেয়েছি এবং বাংলাদেশ আজকে আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের আর্থসামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আমরা পারি মানুষের জন্য দু’বেলা দ’ুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি। আর জাতির পিতা শেখ মুজিবের বাংলায় কোন মানুষ আর ভুমিহীন-ঘরহীন-ঠিকানা বিহীন থাকবে না, আমরা ঘর করে দিচ্ছি। যারা বাকী আছে তাদেরকেও ঘর করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি ঘরে আলো জে¦লে প্রতি ঘরকে আমরা আলোকিত করেছি। পাশাপাশি, সাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগ থেকে ৭৫ দশমিক ২ ভাগে উন্নীত করা, মানুষের আয়ুস্কাল ৬৪ বছর থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত করা, খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করণ, ১৮ হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানসহ চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং করোনা টিকা বিনা পয়সায় দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে আরো ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। আজকে উন্নত দেশও হিমসিম খাচ্ছে এবং নিজেদেরকে তারা অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এখনও সে পর্যায়ে যায়নি এবং তার সরকার এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির কলেবর বৃদ্ধি করে দিয়েছে। অতি উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে ক্রয় করতে হলেও ভর্তুকি প্রদান করে নিত্যপণ্য মানুষের মাঝে সরবরাহ করছে। এরমধ্যে মাত্র ১৫ টাকায় চাল ক্রয়, মধ্যবিত্তের জন্য টিসিবি’র বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে চাল ক্রয়ের সুবিধা, ভিজিডি-ভিজিএফ এর মাধ্যমে একেবারে হত দরিদ্রদের খাদ্য সাহায্য প্রদান, বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ততা ভাতা ও প্রতিবন্ধি ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা বর্ধিত হারে প্রদান করছে, যাতে মানুষের কোন কষ্ট না হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা যেমন এনে দিয়েছে তেমনি আর্থসামাজিক উন্নতিও এনে দিয়েছে। মাত্র ১৪ বছরে বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশে^ একটা মর্যাদা পেয়েছে। এই জাতিকে একটি আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাচ্ছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেই সঙ্গে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছি। সারা বাংলাদেশে আমরা যেমন হাইটেক পার্ক করছি, স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব করছি, প্রযুক্তি শিক্ষা এবং বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জমানতে ঋণ প্রদান, বর্গাচাষীদের বিনা জমানতে ঋণ দেয়া হচ্ছে, কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলে ভতুর্কির টাকা সরাসরি পাবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় ২ কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ ক্রয় করার জন্য কার্ড দেয়া হয়েছে। ২ কোটি ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শীতে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করার মাধ্যমে তার সরকারের যতটুকু সাধ্য তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবানদেরকেও জনগণের দুঃখ কষ্টে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের বছরে চ্যালেঞ্জ অনেক রয়েছে। তবে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন দল প্রস্তুত। বিএনপি কেন তত্ত্বাবধায়কের মতো মৃত ইস্যুকে জীবিত করতে চায়, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি। এটি একটি ডেড ইস্যু। সংবিধান পরিবর্তন ও সংশোধন করার প্রয়োজন নেই।
বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আসুন আমরা সবাই মিলে নির্বাচনে অংশ নেই। আন্দোলনের নামে কোনো অপতৎপরতা করে জনগণকে কষ্ট দেবেন না। যেভাবে পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে নির্বাচন হবে। সরকার নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু রুটি ওয়ার্ক করবে।
প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় ২৭টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও একটি উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় খুবই কর্মব্যস্ত দিন কাটান। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে আওয়ামী লীগের ২২তম কাউন্সিলে নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমাধিসৌধ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুসহ ১৫-আগস্টে নিহত শহীদের রূহের মাগফেরাত কামনা এবং দেশ ও জাতির অগ্রগতি কামনা করে পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া থানা-সংলগ্ন নিজের একটি জমি পরিদর্শনে যান। এরপর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। বিকাল সাড়ে ৪টায় দু’দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর সড়কপথে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্যাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমীর হোসেন আমু, ড. মশিউর রহমান, ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু, রমেশ চন্দ্র সেন, নূরুল ইসলাম নাহিদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহিউদ্দীন খান আলমগীর, ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ, সতীশ চন্দ্র রায়, অধ্যাপক আব্দুল খালেক, অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, অনুপন সেন, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মীর্জা আজম, অ্যাভোকেট আফজাল হোসেন, শেখ হেলালউদ্দিন আহমেদ, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাবুদ্দিন আজমসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন