পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। তিনি বলেন, বড় বড় অর্থনীতি সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দেশ হিসেবে বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। আশা করি আমরা বড় ধরনের ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি শামাল দিতে পারবো। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যভিত্তিক গ্রন্থ ব্যাংকিং অ্যালমানাক’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিব বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, এই গ্রন্থটি গবেষক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং দেশী-বিদেশী গবেষণা সংস্থা তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য এই ‘ব্যাংকিং অ্যালমানা’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই বইটিতে বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য একসঙ্গে পাবেন। যা তাদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পেতে সহায়তা করবে। শুধু তাই না এক গ্রন্থটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট গভর্নেন্সের জবাবদিহিতার বিষয়টিকে আরো শক্তিশালী করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি তৈরির কাজটি জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে যে দ্বিধা ও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে ব্যাংকিং অ্যালমানাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের রিয়েল (প্রকৃত) অর্থনীতির জন্য প্রকৃত তথ্য খুব প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজারে অনেক তথ্যই পাওয়া যায়, কিন্তু তথ্যের দ্বিধা ও বিঘ্ন দূর করতে প্রকৃত তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকিং অ্যালমানাক সেই কাজটিই করছে। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনীতি নিয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় সঠিক চিত্র উঠে আসছে না। এজন্য সব আলোচনার আগে প্রকৃত শব্দটি যোগ করার প্রয়োজন। ব্যাংকিংয়ের কথা বলি, প্রবৃদ্ধির কথা বলি, দারিদ্র্যের কথা বলি- প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এখন প্রকৃত শব্দটা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি ফুটপাতে ছিন্নমূল মানুষের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এই চিত্র আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে, প্রকৃত অবস্থা কী। এখানে অর্থনৈকি অনেক বিষয় চলে আসে। এছাড়া ব্যাংকের আমানতে ও ঋণ বিতরণে ৯ ও ৬ শতাংশ সুদ হার নিয়ে যা হচ্ছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্যাংকিং অ্যালমানাক গ্রন্থের এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি)- সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমানুল্লাহ, বিএলএফসির (বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন) সাবেক চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান, ব্যাংকিং আ্যালমানাকের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং ব্যাংকিং অ্যালমানাকের প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আর্থিক খাত নিয়ে গৃহীত সব কর্মকান্ড প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবকিছু প্রকাশ্যে আনলে কিছুটা আলোচনা হলেও তার বিপদ কেটে যাবে। আর গোপন রাখলে তো আরও সমস্যা বাড়বে। অর্থনীতি নিয়ে যত কাজ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কথা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসনের যা কিছু করণীয় তা দ্রুত দৃশ্যমান করা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতাদের মতো দেখছি, দেখবো-এ রকম চলবে না। বরং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে বলতে হবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নেবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন