থানা শহর হয়ে জেলা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে আমাদের গ্রামের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া পিচঢালা রাস্তাটি। কিছুদিন আগে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে রাস্তাটির। এ কারণেই রাস্তাটি এখন পর্যন্ত চকচকে ঝকঝকে। আর এই মসৃণ রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে অনবরত ছুটে চলে মোটরসাইকেল, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, ইজিবাইক, সাইকেল, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। সম্প্রতি গ্রামে কিছুদিন থাকার সুযোগ হয়েছিল। সেই সময়ে প্রায় প্রতিদিনই ভোরে উক্ত রাস্তায় হাঁটতে বের হতাম। ভোরের দিকে রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা থাকায় আমি ওই সময়টাকে হাঁটার জন্য বেছে নিই। যদিও আমার ভিতরে ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতে সবসময় একটা আতঙ্ক কাজ করত। কেননা, অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে ঐ রাস্তায় বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে তিনজন। আর আহত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের কারণে। এই ইঞ্জিনচালিত ভ্যানগুলোর কথা একটু না বললেই নয়। আকারে স্বাভাবিক ভ্যানের চেয়ে দ্বিগুণ এই ভ্যানগুলোতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন লাগানো, যেগুলোতে চালকের গতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো সুব্যবস্থা নেই। একরকম গ্রাম্য টেকনিশিয়ানদের দ্বারা তৈরি ভ্যানগুলো যখন শেষরাতে রাস্তায় বের হয়, তখন পূর্ণ গতিতে চলতে থাকে। অন্ধকারের রাস্তায় চালকের দেখার জন্য ভ্যানগুলোতে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই, আবার গতি রোধের তেমন কোনো সুব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও চালকের বেপরোয়া গতি রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা বা বসে থাকা ব্যক্তির শরীরকে শিহরিত করে। মাঝেমধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা, যার কবলে পড়ে কেউ হাত, পা এমনকি মহামূল্যবান জীবন হারাচ্ছে। মোদ্দাকথা, গ্রামাঞ্চলের মানুষও এখন বাড়ির বাইরে বের হয়ে মোটেও শঙ্কামুক্ত নন। কিছুদিন গ্রামে থাকার অভিজ্ঞতাতেই এমনটা উপলব্ধি হয়েছে।
ভোরে আমি যখন হাঁটতে বের হই তখন বহু দূর হতে কানে আসা সজোরে ইঞ্জিনের আওয়াজ বেশ আগেই এই ইঞ্জিনভ্যানের উপস্থিতি টের পাইয়ে দেয়। এরপর হাওয়ার বেগে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে পাশ অতিক্রম করে চলে যায়। কিছুদিন আগে রাস্তা হতে বেশ দূরে বসে গল্প করছিলেন তিনজন। বেপরোয়া গতির এক ইঞ্জিনভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনজনের দিকে ধেয়ে আসে। এতে করে একজন জায়গায় মারা যান, অন্য দুইজন আহত হন। এরকম ঘটনা দেশে অহরহ ঘটছে। আমার জানা নেই, রাস্তায় চালাতে এসব ইঞ্জিনভ্যানের আদৌ কোনো অনুমোদন লাগে কিনা। যদি অনুমোদন লাগে তাহলে অবশ্যই এদের রাস্তায় ওঠার আগে গতির নির্ধারিত সীমা, রাস্তায় চলাচলের ফিটনেস ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের যাচাই করে তবেই অনুমতি দেওয়া উচিত। আরও একটা জিনিস খেয়াল করেছি। এসব ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের অধিকাংশ চালক অপ্রাপ্তবয়স্ক, যাদের বয়সসীমা ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। এই বয়সের বাচ্চারা এমন বেপরোয়া গতিতে ইঞ্জিনভ্যান নিয়ে রাস্তায় নামতে পারে কিনা সেই বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত। যদি এগুলোর অনুমোদন না দেওয়া হয় তাহলে অচিরেই এধরনের যানবাহন বন্ধ করা উচিত। কেননা গ্রামাঞ্চলের অলিগলিতে এখন ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও ইজিবাইক পৌঁছে গেছে, যেগুলোর গ্রহণযোগ্য গতি ও আরামদায়ক ভ্রমণে মানুষ এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রেও কিছু যথোপযুক্ত নিয়মকানুন প্রয়োগ করে তবেই ব্যাটারি চালিত ভ্যান বা ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কেননা, এগুলোতে জনগণের আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত হলেও অহরহ যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য চালকের দক্ষতাসহ এসকল গাড়ির ফিটনেস অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।
মাস খানিক আগে ওই একই রাস্তায় এমন এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, যেটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। ৭ যুবকের একটি গ্রুপ রাস্তার পাশের একটি কালভাটের উপর বসে গল্প করছিল। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সরকারি চাকরিজীবী। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এমন সময় উচ্চ গতির একটি মোটরসাইকেল ওই সাতজনের উপর দিয়ে চলে যায়। এতে সবাই গুরুত্বর আহত হয়। একজন জায়গায় মারা যায়। সে ছিল সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। দুইজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কা মুক্ত নয়। রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী এই মোটরসাইকেলগুলোর গতি দেখলে যেকেউ বিস্মিত হবেন। রাস্তাটির দুই পাশ দিয়ে লোকালয়। যেকোন মুহূর্তে রাস্তায় মানুষ আসবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মোটর সাইকেল চালকদের এসব বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাছাড়া রাস্তাটি তুলনামূলক সরু হওয়ায় কোনো লেনে বিভিক্ত নয়। লেনের বিভক্তিকরণ কোনো রকম নির্দেশক চিহ্ন রাস্তায় না থাকায় মোটরসাইকেল চালকেরা ইচ্ছেমত চালাচ্ছে। রাস্তাটিতে যেহেতু সর্বোচ্চ কত বেগে গাড়ি চলবে তারও কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই, সেহেতু মোটরসাইকেলের চালকেরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ইচ্ছেমত গতিবেগ তুলছে। লোকালয়, ফাঁকা জায়গা, বাজারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ও তাদের গতির কোনো হেরফের নেই। বিশেষ করে, উঠতি তরুণেরা সবচেয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালায়। আরও ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায়, এসব তরুণের কারও তেমন সময়ের তাড়া নেই। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে বা হাতের দরকারি কাজ সারতে সময়ের তাড়া না থাকলেও শুধুমাত্র নিজেদের কারিশমা দেখানো এবং নিজেদের বাহাদুরি জাহির করতে তাদের বেপরোয়া গতিকে বেছে নেওয়া।
কর্তৃপক্ষের উচিত এসব মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া। যেটার ব্যত্যয় ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল, নির্দিষ্ট হারে জরিমানাসহ আরও কিছু গুরুদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা যেতে পারে। তাহলে সহজে এসব গাড়ির গতি কমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। এসব মোটরসাইকেলের অহরহ ঘটা দুর্ঘটনায় শুধুমাত্র যে পথচারীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক বা তার পাশে বসে থাকা ব্যক্তিও গুরুত্বর হতাহত হচ্ছে। অনেকেই না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে। তাই নিয়ন্ত্রিত গতি সকলের জন্য মঙ্গলজনক হবে। এ বিষয়ে অবশ্যই জেলা পর্যায়ের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের রাস্তাগুলোর লোকালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর গতিরোধক নির্মাণ করা যেতে পারে। তাহলে সহজেই সকল গাড়ির গতি কমে আসবে। আর এই গতিরোধকই একমাত্র যানবাহনের সহনশীল গতি এনে দুর্ঘটনার হার কমাতে পারে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কারও এত বেশি তাড়া থাকার কথা নয়, যেখানে রাস্তার গতিরোধকে মানুষের সময় অপচয় হবে, তাই এই ভ্রান্ত ধারণা ঝেড়ে ফেলা উচিত। ঢাকা হতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় দেখেছি, সমস্ত রাস্তায় গতিরোধক দেওয়া আছে। আর সেকারণে গাড়ির গতিও সহনীয় থাকে। ফলে দুর্ঘটনাও তুলনামূলক কম ঘটে। যদি মহাসড়কে গতিরোধকের ব্যবস্থা থাকে তাহলে গ্রামীণ এসব রাস্তায় কেন থাকবে না, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
এখানে শুধুমাত্র ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও মোটরসাইকেলের উদাহরণ টানলেও মাইক্রোবাস, বাস, ট্রাক এমনকি ট্রেনেও অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে বহু মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ০.৭৯ শতাংশ মোটরসাইকেলে, ০.৭৬ শতাংশ কার-জিপ মাইক্রোবাসে, ০.২১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণের মধ্যে বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক অভারটেকিং, রাস্তাঘাটের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাথ না থাকা বা ফুটপাথ বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো এবং দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই সবগুলো সমস্যা একসাথে সমাধান করা না গেলেও প্রধান কারণগুলো ধাপে ধাপে চিহ্নিত করে সেগুলোর দিকে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি দিলে সড়ক দুর্ঘটনা বহুগুণে কমে আসবে বলে সকলের বিশ্বাস।
সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বেপরোয়া গতি। আমাদের রাস্তাঘাটের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সীমাবদ্ধতা রয়েছে মাথাপিছু জনসংখ্যার তুলনায় প্রয়োজনীয় গণপরিবহনের। সেজন্য অধিক লাভের আশায় মালিক পক্ষ বা গাড়ির চালক সবসময় চায় অতিদ্রুত ট্রিপ শেষ করে নতুন ট্রিপ ধরতে। আর চালকদের এই মানসিকতা অনেকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। যেকোন কাজ যখন অতিদ্রুত শেষ করার তাড়া থাকবে, সেখানে ভুলত্রুটি হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। ঠিক যেমনটি হয় ঈদের সময়। এসময়গুলোতে শুধুমাত্র চালকের তাড়াহুড়ো এবং বেপরোয়া গতির কারণে অনেক বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। তবে ঈদের আগে যানজটের কারণে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনের গতি কম থাকে। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও বেশি থাকে। এ জন্য যাত্রী পরিবহন বেশি হলেও দুর্ঘটনার হার কমে যায়। কিন্তু ঈদের ফিরতি যাত্রায় সড়ক অনেকটাই ফাঁকা থাকার কারণে চালকেরা ইচ্ছেমতো গাড়ির গতি তোলেন। দ্রুত যাত্রী নামিয়ে পুনরায় যাত্রী ধরার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। এছাড়া ঈদের আগে থেকে একটানা গাড়ি চালান চালকেরা। ফলে তাঁরা বিশ্রামের সুযোগ পান না। চালকের ক্লান্তি দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ। সেইসাথে চালক-মালিক দুই পক্ষেরই বাড়তি আয়ের আশাতো আছেই।
একথা সকলে অকপটে স্বীকার করে যে, অদম্য অগ্রগতিতে উন্নয়ন অভিযাত্রায় সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এই সফল্যকে আরও বেশি নান্দনিক ও গতি এনে দিয়েছে পদ্মাসেতু এবং এর দুইপাশের সম্প্রসারিত এক্সপ্রেসওয়ের আদলে তৈরিকৃত সংযোগ সড়ক। যানজটে নাকাল হয়ে যাওয়া ঢাকাবাসীর মনে আশা জাগিয়েছে অতি সম্প্রতি চালু হওয়া মেট্রোরেল। এছাড়াও একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণাধীন নতুন নতুন প্রশস্ত সড়ক-মহাসড়ক, ট্যানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনে দেবে আধুনিক গতি। দেশকে বিশ্বপরিমণ্ডলে মর্যাদাসীন আসনে উপবেশন করার ক্ষেত্রে সরকারের এসকল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অতুলনীয় ও প্রশংসনীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এর বিপরীতে কঠিন এক জীবন সংহারের দৃশ্যপটও নির্মিত হয়েছে। সেটি হচ্ছে সড়কে প্রাণহানি। বেদনাদায়ক অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। বর্তমানে পরিবহন দুর্ঘটনা যেভাবে প্রতিনিয়ত মানুষের প্রাণ নিধনের দুর্বিষহ প্রতিযোগিতায় নেমেছে, সেখানে পুরো জাতি আজ চরম বিচলিত ও আশঙ্কাগ্রস্ত। বাসা থেকে বেরোনোর সময় কেন যেন এক অজানা মৃত্যুভয় সকলের পেছনে ছায়ার মতো হেঁটে চলেছে। কেউই আজ নিশ্চিত করে বলতে পারে না, দিনশেষে সুস্থভাবে বাসায় ফিরতে পারবে। দেশের পালে যেখানে উন্নয়নের হাওয়া লেগেছে, সেখানে পথিকের মধ্যে সর্বদা তাড়া করে বেড়ানো এই অজানা ভয় এখন আর শোভা পায় না। তাই জনগণ এই আতঙ্ক থেকে মুক্তি চায়। পথে বের হয়ে নির্ভয়ে চলতে চায়। যেখানে থাকবে জনগণের কর্মক্ষেত্রে বা গন্তব্যে রওনা দিয়ে নীড়ে ফেরার পূর্ণ নিশ্চয়তা।
সড়ক দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এর থেকে পরিত্রাণের তেমন কোনো সুফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে খতিয়ে দেখা হয় কী কারণে দুর্ঘটনা হলো। গঠিত হয় কথিত এক/তিন/পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পরে এক পক্ষ খুশি হলেও অন্য পক্ষ বেজার হয়। আবার বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বা সামাজিক সংগঠন সভা-সমাবেশ, প্রতীকী অনশনসহ অন্যান্য বহু কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পেপার-পত্রিকা, টিভি চ্যানেলগুলো বিভিন্ন নিউজ কভারেজ দেয়। রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে টিভি চ্যানেলগুলোতে টকশোর লাইভ প্রোগ্রাম চলে। চারিদিকে সরগরম অবস্থা শুরু হলেও সবকিছু সময়ের সাথে আবারো স্তিমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু যার চলে যায়, সে বুঝে প্রিয়জন হারানোর বেদনা। রোগ-ব্যধিতে মারা গেলেও মনকে বুঝ দেওয়া যায়। কিন্তু যখন অকালে তরতাজা প্রাণগুলো ঝরে যায়, তখন তাদের প্রিয়জন নিজেদের সামলাতে পারে না। মেনে নিতে পারে না দেশের নিয়মের বিভিন্ন অসঙ্গতি। তাই নীতি নির্ধারকদের বাচনিক বিভিন্ন অঙ্গীকার না দিয়ে প্রায়োগিক পন্থা অবলম্বনে এ সংকটের আশু সমাধান জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন