আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসতে চায় না। আমরা রাজনীতিকে তাদের জন্য উপযুক্ত করতে পারিনি। চরিত্রবানদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। চরিত্রবানরা রাজনীতিতে না এলে রাজনীতি খারাপ হয়ে যাবে। গতকাল রোববার জাতীয় পার্টির (জেপি) ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অধিবেশনটি রমনার ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগে টানা তিনবার কেউ সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমার ১৭ বছরের মন্ত্রিত্ব বিরল। আওয়ামী লীগের মতো দলে তিনবার সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, অনেক পেয়েছি। তবে সবই উপরে আল্লাহ, নিচে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা নষ্ট রাজনীতির কাছে বারবার আত্মসমর্পণ করি। নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষের জন্ম দেয়। নষ্ট রাজনীতিবিদের জন্ম দেয়। নষ্ট রাজনীতিকরা নষ্ট রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে। বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছে ঠিক তাই। এজন্য তো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যে লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ সেই বাংলাদেশ কি আমরা রাখতে পেরেছি? আজ রাজনীতিতে ভালো মানুষ আসতে চায় না। আমরা রাজনীতিকরা রাজনীতিকে ভালো মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারিনি। ভালো মানুষেরা, শিক্ষিত মানুষেরা, সৎ মানুষেরা রাজনীতির ধারে কাছে আসতে চান না। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের স্বীকার করতেই হবে। একই অবস্থা আমাদের ছাত্ররাজনীতির। এটি সুনামের ধারায় আসতে পারেনি। ভাল রাজনীতি চাইলে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলও দরকার। তিনি আরো বলেন, খারাপ লোকদের কাছে রাজনীতি গেলে দেশটা খারাপ হয়ে যাবে। খারাপ লোকের কাছে রাজনীতি থাকলে তারা এমপি হবে, মন্ত্রী হবে, দেশ চালাবে। ভালো লোকদের রাজনীতিতে আনতে হবে। সৎ লোকদের আনতে হবে। মেধাবীদের রাজনীতিতে আনতে হবে। তা না হলে রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে যাবে। চরিত্রবানদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে রাজনীতি চরিত্রহীন হয়ে যাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৭৫ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। পৃথিবীতে এমন হত্যা আর হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের কারণেই ধীরে ধীরে রাজনীতির অঙ্গনে উঁচু দেয়াল সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ একদিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন করতে পারে। কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কোনও উঁচু দেয়াল সৃষ্টি করিনি। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কোনো হত্যাকাণ্ডে অবলা নারী, অবলা শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে টার্গেট করা হয়নি, যেটা হয়েছিল ১৯৭৫-এ। সেই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ উল্টোপথে যাত্রা শুরু করল। বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব হয়ে গেল। গণতন্ত্র শৃংখলিত হলো।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে দেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের রাজনীতিকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে হবে। এ দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে, এ দেশের উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বিজয় হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিজয়ও সুসংগঠিত নয়। বিজয়কে সুসংহত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ১৪ দলের জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ওয়ার্কাস পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক পাটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন