মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা পেল সরকার

শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া অনুমোদন অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ এবং সমন্বয়ে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০২৩ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এছাড়া শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া অনুমোদন এবং জাতীয় কৃষি বিপণন নীতি ২০২২ এর খসড়ায়ও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এটি আগে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। তখন সংসদ অধিবেশন না থাকায় আমরা অধ্যাদেশ আকারে জারি করেছিলাম। এখন সংসদ চলমান আছে এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে এটি সংসদে উঠানোর। অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করার জন্য এটি আবার সাধারণ প্রক্রিয়ায় সংসদে নিতে হবে। সেজন্য মন্ত্রিসভায় ঠিক আগের অধ্যাদেশটাই সংসদে উপস্থাপনের জন্য নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এ অধ্যাদেশ বলে বিইআরসির পাশাপাশি সরকার চাইলেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়াতে বা কমাতে পারবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে সেখানে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুননির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা শিরোনামে নতুন একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ওই ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুননির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।
বিইআরসি আইন সংশোধনের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, আমাদের এখন বিইআরসি এগুলো (দাম সমম্বয়) হ্যান্ডেল করে। কিন্তু বিইআরসির কিছু কিছু জায়গায় একটু প্রবলেম হয়, যেমন ৯০ দিন পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকতে পারে। কারণ, আইনে বলা আছে বিইআরসি ৯০ দিনের মধ্যে এসব শুনানি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। অনেক সময় আমাদের ইমিডিয়েট প্রয়োজন হয়, অনেক সময় তারা ঠিকভাবে ইয়ে (সমন্বয়) করতে পারে না। সেজন্য বিইআরসির আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রয়োজন বোধে বিভিন্ন বিশেষ কারণে এই ট্যারিফ নির্ধারণ করতে পারবে।
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাভাবিকভাবে দাম সমন্বয়ের কাজ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনই করবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার এক্ষেত্রে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে। আইনটি ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর অধ্যাদেশ আকারে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছিলেন। এবার আইন আকারে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো। কারণ তখন সংসদ অধিবেশন চলমান ছিল না। বতর্মান আইন অনুযায়ী কোনো জ্বালানি বা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হলে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গণশুনানি করে দাম নির্ধারণের ঘোষণা দেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসি। যা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই নিয়ম মেনে চলা কঠিন।
তিনি বলেন, বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে ৯০ দিন অপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্য যেন দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে, সে জন্য বর্তমান আইনের ৩৪ ধারার সঙ্গে কিছু ধারা যোগ করা হয়েছে। সেখানে মূল বিষয় হলো সরকার প্রয়োজন বোধে বিশেষ কারণে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০২২ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন। এ বছরের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শরিয়তপুরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হবে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের নবম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে এবং দেশের ৫৪তম বিশ্ববিদ্যালয়। সে জন্য শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২২ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মূল বৈশিষ্ট্য অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রকম আছে অনেকটা সে রকমই। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৩টি। এটি নিয়ে ৫৪টি হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় কৃষি বিপণন নীতি ২০২২ এর খসড়ায়ও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশে যে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় তা বাজারজাত করতে কিছু কৌশল নির্ধারণ করা লক্ষ্য এই আইনের। কৃষি বিপণন নীতিমালা আছে কিন্তু কৃষি প্রক্রিয়াজাত করার নীতিমালা নেই। সবাই জানেন সারাবিশ্বে বাংলাদেশের একটি কৃষি বাজার তৈরি হয়েছে। সে জন্য এই পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে পদক্ষেপ নেওয়া। যেন এটি আন্তর্জাতিকমানের হয়।
তিনি বলেন, আইনটিতে কৃষি ব্যবসায় বাজার, বাজার তথ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী, কমিউনিটিভিত্তিক, গ্রুপভিত্তিক জোরদার, কৃষি পণ্যের গুদাম ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি ব্যবহার মাধ্যমে যুব উন্নয়ন সৃষ্টি করা। কৃষি ব্যবসার মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়ন করা, ডিজিটাল মার্কেট, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করতে ব্যবস্থা। আমদানি রফতানি ব্যবস্থায় সহযোগিতা, কৃষিভিত্তিক ব্যবসা ও শিল্প প্রসারে সহায়তা করা। সব মিলিয়ে ১৯টি বিষয় নিয়ে আইনটি কাজ করবে। তিনি জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাটের সম্ভবনা কাজে লাগাতে এখন থেকে পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে গণ্য হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন