শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মহিপুরে মায়োপ্যাথি রোগে আক্রান্ত আল-মামুনকে বাঁচাতে বিত্তবানদের কাছে আকুতি।

কলাপাড়া(পটুয়াখালী) উপজেলা প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:৫৩ পিএম

পটুয়াখালীর মহিপুরে জন্ম থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল আল-মামুন (২৪) এর। হঠাৎ ১৩ বছর বয়সে দূরন্ত এ বালক ভুগতে শুরু করেন শরীরের বিভিন্ন ব্যথায়। কয়েক মাসের মধ্যে একটি পা অক্ষম হতে শুরু করে মামুনের। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে শুরু করেন মা আমসা বেগম। কিন্তু বরিশাল ও ঢাকায় বেশ কয়েক বছর চিকিৎসা শেষে জানতে পারেন ছেলে মায়োপ্যাথি রোগে আক্রান্ত। আর এই রোগের উন্নত চিকিৎসা দেশে নেই। তবে বিদেশ যাওয়া কিংবা দেশে আরো চিকিৎসা করার মত শেষ সম্বলটুকুও আর নেই তার।

মায়োপ্যাথি রোগে বিছানায় থাকা আল-মামুন কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুরের বাসিন্দা টুকু সিকদারের ছেলে। তবে পারিবারিক কারনে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় মায়ের সাথেই থাকেন আল-মামুন। শেষ সম্বল পর্যন্ত চিকিৎসা করিয়ে এখন নিঃস্ব মা আসমা বেগম। তবে সবার সহযোগিতা পেলে হয়তো প্রাথমিক ঐষধ ক্রয় ও উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সন্তানকে সুস্থ করার বাকি চেষ্টাটা করতেন এই হতভাগা মা। বাবা আলাদা থাকলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে চিকিৎসা করাতে পারছে না ছেলেকে।

বিছানায় শুয়ে বসে থেকে একটু সুস্থ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আল-মামুন বলেন, আমি গত ১১ বছর যাবৎ এই রোগে ভুগতেছি। প্রথম কয়েকবছর চিকিৎসা নিলেও এর পরে বিছানায়ই শুরু হয় আমার জীবন। অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয় আমার। এর পর থেকে শরীরের শক্তি কমে যাওয়া, পা ব্যথা হওয়া থেকে এই রোগের শুরু।
বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা শেষে আমার পরিবার নিঃস্ব এখন। আমি একা বিছানা থেকে উঠতে পারি না। তাই মা ওঠা, বসা খাওয়া, বাথরুম, গোসলে সহায়তা করেন। আমার নিজের শক্তিতে বিন্দুমাত্র কাজ করা সম্ভব না। দিন দিন পুরো শরীর ভিন্ন আকৃতিতে পরিনত হচ্ছে।
আমি টাকার অভাবে অনেকদিন যাবৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারি না। তবে অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্মে দেখেছি এই মায়োপ্যাথি রোগের কিছু ফিজিক্যাল থেরাপি রয়েছে যা ভারতে দেয়া যায়, কিন্তু সেই সম্বল কই পাবো। আমি সুস্থ হয়ে বাঁচতে চাই। সবারমত হাঁটতে চাই যে কারনে দেশবাসীর কাছে হাত পেতেছি। সকলে একটু সহযোগিতা করবেন।
ক্রন্দনরত কন্ঠে আল-মামুনের মা আসমা বেগম বলেন, স্বামী ছাড়া আমি এই ছেলের চিকিৎসা সহ ঔষধের খরচ মেটাতে গিয়ে আমি এখন পথে বসেছি। নিজের যতটুকু ছিল সব বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। এখন আমার ছেলেটাকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমাকে যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে ছেলেটাকে সুস্থ্য করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, আমি কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি তাতে ওরে প্রাথমিকভাবে ভারতে চিকিৎসা করাতে হলেও ২৫-৩০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এই টাকা এখন কই পাবো। তাই আমি দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চাই। যাতে ছেলেটাকে সুস্থ্য করতে পারি। অন্তত ও যেন একা একা বিছানা থেকে উঠতে-নামতে পারে। দেশবাসীর কাছে হাতজোড় করে একটু সহযোগিতা চাই।
রেদোয়ান নামের এক প্রতিবেশী জানান, ছোটবেলা থেকে পারিবারিক ভাবে আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল তাদের। কিন্তু ওর চিকিৎসা করাতে গিয়া তাদের এখন তিনবেলা খাওয়ার সামর্থ্যটুকু হারিয়েছে বলতে গেলে। তাই সবার কাছে অনুরোধ সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য।
আল-মামুনের চিকিৎস খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (পিজিটি) মেডিসিন বিভাগের ডাঃ তাকবির রহমান (এমবিবিএস) বলেন, এই রোগীর প্রেসক্রিপশনগুলো ও সার্বিকভাবে দেখে আমি তাকে প্রাথমিক একমাসের একটি চিকিৎসা দিয়েছি। এই একমাস ঔষধ খাওয়ার পরে যদি ১০ শতাংশ সুস্থ্য মনে হয় তাহলে দেশেই একটি দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা নিলে কিছুটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই রোগীর খুব ভালো চিকিৎসা সিংগাপুর বা ভারতের ভেলরে হয়ে থাকে। যার আনুমানিক খরচ ২৫-৩০ লক্ষ টাকা।
পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস বলেন, এসকল অসুস্থ্য রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপজেলা কার্যালয় অথবা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করলে আমরা বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নিবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন