সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রী যথার্থ বলেছেন

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ডিজিটাল বাংলাদেশের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির সামনে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন। যানজটের শহর ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার শুভ সূচনা হয়েছে। এমআরটি ও মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমে আসার সাথে সাথে দেশের মানুষ বিশ্বমানের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন স্মার্ট গণপরিবহণের সুযোগ সুবিধার অভিজ্ঞতা ও অংশীদারিত্ব লাভ করবে। তবে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই হবে না, দেশের প্রশাসন ও মানুষকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষ এবং সিভিল ডিসিপ্লিন ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মেট্রোরেল উদ্বোধনের শুরুতেই এর টিকিট ভেন্ডিং মেশিন অকেজো হয়ে পড়া এবং অতি আগ্রহী যাত্রীদের বিশৃঙ্খল আচরণ ছিল হতাশাজনক। এ ধরণের বাস্তবতা কারোই প্রত্যাশিত নয়। এহেন বাস্তবতার আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করে এবং দূরদর্শী চিন্তা থেকে তার এ নির্দেশনা যথার্থ। প্রতিবেশী ভারতের কলকাতাসহ আধুনিক বিশ্বের নগর পরিবহনে মেট্রোরেল অনেক আগেই চালু হয়েছে। যাত্রীরাও এর ব্যবহার এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছে। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও এ বিষয়টি পুরোপুরি গ্রাহ্যতা পায়নি। প্রযুক্তি ও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে গন্তব্যে ছুটে চলার প্রত্যহিক রুটিনকে সফলভাবে সমাধান করতে হলে প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা থাকা অপরিহার্য। নাগরিক সমাজের শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকার যানজট নিরসনে গত দুই দশকে বেশ কিছু ফ্লাইওভার নির্মাণসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখনো ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য মেগাসিটির তালিকায় রয়েছে। ঢাকায় যান চলাচলের গড় গতি পায়ে হাঁটার গতির সমান। রাতারাতি এ অবস্থার পরিবর্তন হয়তো সম্ভব নয়। এর জন্য মেট্রোরেলের মত আধুনিক প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর পাশাপাশি পুরো নগর ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শহরের দুই কোটি মানুষকে এসব অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও নাগরিক জীবনের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেল চালুর সাথে সাথে এর প্রযুক্তি এবং এতে উঠা-নামার বিষয়গুলো জনসাধারণের জানা উচিৎ এবং এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। স্টেশনের গেট টপকে যাত্রীদের ভেতরে প্রবেশের দৃশ্য হতাশাজনক। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জনগণ এবং সংশ্লিষ্টদের প্রযুক্তি সচেতন, সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তী হওয়া আবশ্যক।

যানজট নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শুধুমাত্র ট্রাফিক লাইট সিস্টেমের পেছনে গত ১৫ বছরে ১১৯ কোটি টাকা ব্যয় করেও কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। এখন তারা ট্রাফিক সিগনালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নে এআই প্রযুক্তি বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে গতকাল প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়। তবে প্রযুক্তিবিদ ও নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তা প্রশ্বস্তকরণ এবং নাগরিক সচেতনতা ও নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে না চললে কোনো প্রযুক্তিই কাজে দেবে না। আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থার সাধারণ নিয়ম-শৃঙ্খলা ও আইনের প্রতি যথাযথ বাধ্যবাধকতা মেনে চলার নিশ্চয়তা না থাকলে ডিজিটাল সিস্টেম কার্যকর করা সম্ভব নয়। মেট্রোরেল চালুর শুরুতেই প্রযুক্তিগত জটিলতা এবং যাত্রীদের অজ্ঞতা ও অসচেতনতার বিষয়টি নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। প্রথমত: প্রকল্পের নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত বিষয় সম্পর্কে সরকারি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের গণপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ডিজিটাল মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর, টানেলের যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রযুক্তি ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচীতে তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। বিদ্যমান বাস্তবতায় রাস্তাগুলোকে যতটা সম্ভব প্রশস্ত করার পাশাপাশি ট্রাফিক আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, মেট্রোরেলসহ আধুনিক গনপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ঢাকার যানজট ও জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন সচেতন নাগরিক সমাজই হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পূর্বশর্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
আলি ১১ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
আ.লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে দুর্নীতি করে এগুলো যদি প্রধানমন্ত্রী নজর দেন বা তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনেন তাহলে দেশটা উন্নত হতো
Total Reply(0)
আমান ১১ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০২ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রীর মতো অন্যরা হলে দেশটা আরো উন্নত হতো
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন