শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এ মৃত্যুর দায় কার?

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি স্পা সেন্টারে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের সময় ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক নারী কর্মীর। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কর্মকান্ড বন্ধে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশন গুলশানের ওই বাড়ীতে অভিযান চালায়। খুলনার বটিয়াঘাটার ফারজানা নামের মেয়েটি নাকি ওইদিনই প্রথম সে স্পা সেন্টারের চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে আরো কয়েকজন ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে। তাদের মধ্যে ফারজানার মৃত্যু হয়েছে এবং আরেক তরুণী গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন অসংখ্য চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। শহরের শত শত স্পটে মাদক বেচা-কেনা হচ্ছে। চোর, ছিনতাইকারি, পকেটমার, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি ও প্রতারক চক্রের হাতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। সেখানে পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এতটা সক্রিয় দেখা না গেলেও আবাসিক ভবনে বিউটি পার্লার বা স্পা সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা দু:খজনক ও অনভিপ্রেত।
দশকের পর দশক ধরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নগরীকে দুর্ভোগমুক্ত ও তিলোত্তমা করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও দিনে দিনে যানজট ও জনদর্ভোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। যানজটের পাশাপাশি পানিজট, ময়লাজট দূর করতে সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার কারণে শহরে মহামারী আকারে ডেঙ্গু জ্বর দেখা দিয়েছে। দুই বছর আগে উচ্চ আদালত থেকে এর জন্য সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত বছরও ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের আশপাশে ময়লার স্তুপ-ভাগাড়। নাগরিক অসচেতনতা, সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দায়িত্বহীনতার কারণে যত্রতত্র ময়লা ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এসব নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হলে অবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি হত। অভিজাত এলাকার বিউটি পার্লার বা স্পা-সেন্টারে অভিযানের নামে ফটোসেশন করার অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে ভীতি ছড়িয়ে ফারজানার মত নিরীহ কর্মীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেও মূল ব্যক্তিরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়। ফুটপাত দখল, চাঁদাবাজি, যানজট, নাগরিক বিড়ম্বনা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো নিয়ে সিটি কর্পোরেশন ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান বৃদ্ধির বদলে স্পা সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ভীতি ও মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনার জন্মদান কাঙ্খিত নয়।

পুলিশ বাহিনী জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার রক্ষক হিসেবেই বিবেচিত। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জনগনের ট্যাক্সের টাকায় নিরাপত্তা ও বেতনসহ সুযোগ-সুবিধা ভোগ থাকেন। আইনগত প্রক্রিয়ায় অভিযান পরিচালিত হলে পুলিশি অভিযানে এমন ভীতির সঞ্চার হওয়ার কথা নয়, যেখানে স্পা সেন্টারের কর্মীকে পুলিশের ভয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে হয়। এখানে ভিকটিম তরুণীরও ভুল থাকতে পারে। তবে পুলিশের অভিযানে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা হরহামেশাই ঘটতে দেখা যায়। গত বছর আগস্টে পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, কুমিল্লার চান্দিনায় টাকা লেনদেন সংক্রান্ত এক পারিবারিক মামলায় অভিযুক্ত এক নারীকে ধরতে পুলিশের অভিযান চালানোর সময় পানিতে পড়ে জনৈক দিনমজুর নাছির উদ্দিনের স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। পুলিশের ধাওয়ায় পানিতে ঝাঁপিয়ে মৃত্যুর এমন অনেক খবর প্রায়শ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সন্দেহভাজন আসামী ধরতে গিয়ে এমন ভীতিকর পরিস্থিতির কারণ হচ্ছে, পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য, অহেতুক হয়রানি এবং আইনগত অস্বচ্ছতার কারণে নিরীহ মানুষের দুর্ভোগের শিকার হওয়ার বাস্তবতা। পুলিশের অভিযানে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সে থেকে উদ্ভুত মর্মান্তিক মৃত্যুর দায়ভার কাউকে না কাউকে নিতে হবে। দাগি, চিহ্নিত অপরাধী দমনে পুলিশকে অভিযান পরিচালনা করতে হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু নিরীহ-সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি, পানিতে বা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে হতাহত হওয়ার পেছনে রয়েছে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা। পুলিশ জনগণের বন্ধু, দুষ্টের দমন ও শিস্টের লালন ইত্যাদি অভিধা অনুসারে কাজ করতে পারলেই জনআস্থা ফিরে আসতে পারে। প্রতিটি জীবন মূল্যবান। প্রতিটি অপমৃত্যুর দায় সংশ্লিদের নিতে হবে। স্পা সেন্টারের কর্মী ফারজানার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে জবাবদিহিতা ও ক্ষতিপুরণ নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন