বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

মুখের ক্যান্সার

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ মানুষ ওরাল বা মুখগহ্বর ও ঠোঁটের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। শতকরা হারে পাপুয়া নিউগিনির পরই আমারদের বাংলাদেশের অবস্থান। আমাদের দেশে প্রতি লাখে প্রায় ২১ জন এতে আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে ছেলেদের যত ক্যানসার হয় তার মধ্যে দ্বিতীয় ও মেয়েদের তৃতীয় স্থানে আছে এটি। ধীরে ধীরে এ ক্যানসারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। শুরুতে চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু অজ্ঞতা, রোগকে পাত্তা না দেয়ার কারণে যখন এ ক্যানসার ধরা পড়ে তখন কিছুই করার থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্যানসার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়েছে। ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা, পান-সুপারি, খয়ের, তামাক পাতা, হুঁকোও ঘাতক ক্যানসারের অন্যতম কারণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, ওরাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া প্রতি চারজনের তিনজনের মূল কারণ ধূমপান। যারা যতবেশি দিন ও পরিমাণে ধূমপান করেন তাদের এ ক্যানসার হওয়ার হার তত বাড়ে। মদ্যপান করলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ ধরে রোদে থাকলে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি এই ক্যানসারের কারণ হতে পারে।

সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসও এই ক্যানসারের সঙ্গে জড়িত। শুরুতে এই ক্যানসার আক্রান্তের মুখগহ্বরে যেমন জিহ্বা, মাড়ি, তালু বা ঠোঁটে সাদা বা লালছে প্রলেপ বা প্যাঁচ পড়ে। এটি ঘষলে উঠে না। মুখগহ্বরে ক্ষত বা আলসার দেখা দেয়। মুখে অনেকের প্রায়ই সাদা প্রলেপসহ ক্ষত হতে দেখা যায়। এ সময় খেতে কষ্ট হয়। ক্ষত সাতদিনের মধ্যে আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। একে আবার ক্যানসার ভেবে ভুল করবেন না। মুখের কোনও ক্ষত যদি দিনের পর দিন না সারে তবেই তা ক্যানসার হতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মুখগহ্বরে গোটা মাংসপিণ্ড হতে পারে। পরবর্তী সময়ে ক্ষত বা গোটা বড় হতে থাকে। মাড়ি ফুলে গেলে যারা আলগা দাঁত লাগান তাদের আলগা দাঁত ঠিকমতো লাগে না। জিহ্বা ও চোয়াল নাড়াতে কষ্ট হয়। খাবার গিলতে ও চিবোতে কষ্ট হয়। ওজন কমে যেতে থাকে। ক্ষতস্থান থেকে কোষকলা নিয়ে পরীক্ষা করে ক্যানসার কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়াও রোগের অগ্রগতি সন্বন্ধে জানার জন্য এন্ডোসকপি, এক্স-রে, এমআরআই, সিটিস্ক্যানের প্রয়োজন হতে পারে।

এই রোগের সাধারণত সার্জারির মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত অংশ ফেলে দিয়ে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। শুরুতে এ ক্যানসার নির্ণয় করে সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে পারলে ক্যানসারকে জয় করা সম্ভব। কিন্তু রোগীর ৮০-৯০ বছর বয়সে এ সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে থাকে। তারপরও গবেষণায় দেখা গেছে, দেরিতে রোগ নির্ণয় হওয়ার পরও যারা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কেমোথেরাপি ও রোডিওথেরাপি নিয়েছেন তাদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার ৬০ শতাংশ। এটাও কিন্তু কোনও অংশে কম নয়।

এ রোগের প্রতিরোধে ধূমপান বাদ দেয়ার কোনও বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, এ রোগ নির্ণয় করার পরও যদি ধূমপান ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে রেডিওথেরাপি ভালো কাজ করে। মদ্যপানকে না বলুন। রোদে বেশিক্ষণ থাকবেন না। বেশি রোদে গেলে ছাতা বা হ্যাট বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন। এ ক্যানসারের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হোন।

বিশ্বে শুধু ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মৃত ৭৬ লাখ মানুষের স্মরণে এই আয়োজন করা হয়। এসসিএস জানায়, ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এসব মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই অনুন্নত দেশের অধিবাসী। এসব দেশে ক্যান্সারের ব্যথানাশক চিকিৎসাও সুলভ নয়।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন