১০ বছরেও শেষ হয়নি নগরীর বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ লিংক রোডের নির্মাণ কাজ। এ সময়ে সময় বেড়েছে দুইবার। আর ব্যয় বাড়ানো হয়েছে চারবার। বর্ধিত ব্যয় সমন্বয় করতে তাই এবার সড়কটিতে চলাচলকারী যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। অথচ প্রথম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সড়ক ব্যবহারে টোল নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিলনা। ইতোমধ্যে টোলের হারও নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রায় এক দশক আগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রথম এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২ কোটি টাকা। আর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম দফায় মেয়াদ ২০১৬ সাল, দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সাল, তৃতীয় দফায় ২০২০ সাল ও চতুর্থ দফায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। তবে কাজ এখনো শেষ হয়নি।
গত বছর অক্টোবরে প্রকল্পটির দ্বিতীয় দফায় সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয় ৩৫৩ কোটি টাকা। পুরো কাজ শেষ না হলেও ২০১৯ সালে সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এর ফলে নগরীর উত্তর অংশে যানজট কিছুটা কমেছে। তবে এখন টোল আদায় শুরু হলে সড়কে যানবাহন চলাচল কমে যাবে। আর তাতে সড়কটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
সিডিএর সংশোধিত ডিপিপির তথ্য অনুযায়ী, এই সড়ক দিয়ে চলতে হলে মোটরসাইকেলকে টোল দিতে হবে ১০ টাকা। তিন চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ১৫ টাকা। প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা, পিকআপ ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৮০ টাকা। এছাড়া এ রোডে বড় বাস চলাচলে ১০০ টাকা, চার চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে ১২০ টাকা এবং ছয় চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা টোল দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি ২০০ টাকা টোল দিতে হবে ট্রেইলর বা কাভার্ডভ্যান চলাচলে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এটিই হবে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সড়ক, যা দিয়ে চলতে হলে দিতে হবে টোল। এর আগে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আসা সড়ক থেকে টোল আদায় করা হতো। যা মূলত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বহনকারী গাড়ি চলাচল করে। তবে টোল দেয়ার ভয়ে বেশিরভাগ যানবাহন ওই সড়কটি এড়িয়ে চলে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, যেহেতু প্রকল্প সংশোধনের কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে, তাই প্রকল্পের সড়ক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে টোল নেবে সিডিএ। প্রকল্পের বর্ধিত অর্থ দিতে সরকার রাজি না হওয়ায় এ সিডিএ এ পথে হাঁটছে বলে জানান তিনি। এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে ১৬টি পাহাড় কাটে সিডিএ। খাড়াভাবে কাটার কারণে এসব পাহাড় ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানাও গুণতে হয়েছে। এখন ধসের ঝুঁকি এড়াতে আরেক দফা পাহাড় কাটতে চায় সিডিএ। আর এজন্য ব্যয় হবে ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রকল্পে ধীরগতি এবং অপরিকল্পিত পাহাড় কর্তনের ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আর এর খেসারত দিতে হবে ওই সড়কে চলাচলকারীদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন