বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমামুখি মুসুল্লিদের ঢল অব্যাহত

গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:৫৭ পিএম

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনে মুসুলিমরা এবাদত বন্দেগীতে মুশগুল রয়েছেন।

আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে মুসুল্লিদের ঢল অব্যাহত রয়েছে। মুসুল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত। বাদ ফজর থেকে ইজতেমা মাঠে আখলাক, ঈমান ও কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান চলছে। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আলেমরা বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করছেন। ইবাদত-বয়ানে মশগুল হয়ে রয়েছেন মুসুল্লিরা।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ জানান, প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হক। সকালের বয়ানে বলা হয়, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না। দাওয়াতের মেহনত হলো নবুওয়াতি মেহনত। খুলুসিয়াত ও আজমতের সঙ্গে যারা মেহনত করবে তাদের যেকোনও আমলের ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়।

সকাল ১০টায় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, পরে মাদ্রাসা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদ, আরব জামাতের জন্য বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট, বোবা ও বধিরদের জন্য বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সানোয়ার, বিদেশি জামাতের মুসুল্লিদের উদ্দেশ্যে ইংরেজিতে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ইফতার জামান। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ফারুক। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা যুহাইরুল হাসান এবং অনুবাদ করেন মাওলানা যোবায়ের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বয়ান।

ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

আজ রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বরাবরের মতো এবারও সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আখেরি মোনাজাতের আগে হেদায়েতি বয়ানের পর বিশ্ব তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

মোনাজাতে বিশ্বের সকল মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে। আয়োজকরা ধারণা করছেন, প্রায় ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) উপ-কমিশনার আলমগীর হোসেন জানান, মহাসড়ক আগের চেয়ে ফাঁকা থাকলেও ইজতেমামুখী মুসুল্লিদের স্রোত কমেনি। ট্রাফিক ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ থাকায় যানবাহন চলাচল ও মুসল্লিরা নির্দেশনা মেনে চলাচল করায় কিছুটা ফাঁকা দেখা যাচ্ছে।


আব্দুল্লাহপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস কামারপাড়া পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকবেঃ

 

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের জন্য শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস ও কামারপাড়া পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন,‌ ‘ট্রাফিক বিভাগকে ঢেলে সাজিয়েছি। যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে মোনাজাতে অংশগ্রহণের জন্য মুসল্লিরা আসবেন, সেহেতু আমরা রবিবার রাত ১২টার পর থেকে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রাখবো।’

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইজতেমা ময়দানের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমে (শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম) সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

জিএমপি কমিশনার জানান, কামারপাড়া, টঙ্গী থেকে ভোগড়া বাইপাস, আশুলিয়া অর্থাৎ অব্দুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে বাইপাইলের রোড বন্ধ থাকবে। সেক্ষেত্রে ভোগড়া থেকে তিনশ’ ফিট পর্যন্ত বাইপাস হয়ে চলে যাবে ঢাকাগামী লোকজন। যেসব মুসুল্লি বা লোকজন ময়মনসিংহ বা গাজীপুর যাবেন, তারা বাইপাইল থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে ময়মনসিংহের দিকে চলে যাবেন।

জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ইজতেমা মাঠে যারা সুরা সদস্য আছেন তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। চেষ্টা করছি যেন রবিবার বেলা ১১ টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। সবাই যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ইজতেমা সম্পূর্ণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে জিএমপি সহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিট এক যোগে কাজ করে যাচ্ছে।

এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ ইলিয়াস শরীফ, অতিরিক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি) আবু সুফিয়ান, জিএমপির উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন, অপরাধ বিভাগের উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

ইজতেমায় আরো ৪ মুসুল্লির ইন্তেকালঃ

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে আরও চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত বার্ধ্যক্যজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ইজতেমার প্রথম পর্বে মোট ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটায় সন্ধ্যায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মলমলিয়া গ্রামের মৃত মোবারক হোসেন খানের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন খান (৭০), ভোর ৪টায় ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার হাজী মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ হবি (৬৮), ভোর ৫টায় নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের মৃত রহমত উল্লাহর ছেলে হাবিবুর রহমান হবি (৭০) এবং সকাল সাড়ে ৬টায় চট্টগ্রাম সদর থানার রাউজান গ্রামের আব্দুল রশিদের ছেলে আব্দুল রাজ্জাক (৭০) মৃত্যুবরন করেন। তারা প্রত্যেকেই বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ভোগছিলেন। শনিবার ফজরের নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা সম্পন্ন হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের হেমুবটে পাড়া গ্রামের নুরুল হক (৬৩), গাজীপুর মেট্রো সদর থানার ভুরুলিয়া এলাকার আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মধ্য কামারপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী সিকদার (৫০) ইজতেমা ময়দানে মারা যান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন