শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে

ড. অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

যেসকল অভিভাবকের বাসায় স্কুলে যাওয়ার উপযোগী সন্তান আছে, বছরের শেষে সন্তানের স্কুলে ভর্তি নিয়ে এসব অভিভাবকের খাওয়া-ঘুম একরকম উদাও হয়ে যায়। নিজের আত্মীয়-পরিজন, সহকর্মী বা পরিচিত বন্ধুবান্ধব সবার মধ্যেই বাচ্চার স্কুলে ভর্তি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা খেয়াল করেছি। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি নিয়ে সব বাবা-মা চিন্তামগ্ন বা উদ্বিগ্ন থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজকালকার বেশিরভাগ বাবা-মা সন্তানের ভবিষ্যতের চেয়ে নিজেদের স্ট্যাটাসকেই বেশি প্রাধান্য দেয় বলে আমার মনে হয়। সেকারণে দেখা যায়, সন্তানকে নামি-দামি স্কুলে ভর্তি করানো বা বাসায় সেরা শিক্ষকের কাছে পড়ানো যেন প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় পরিবারের মহিলা সদস্যদের বেশি অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। সন্তানের বাবার চেয়ে মায়ের উদ্বিগ্নতা সবসময় যেন বেশি থাকে। সব পরিবারের জন্য এই ধারণা সঠিক না হলেও অন্ততপক্ষে শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ পরিবারের এই পরিস্থিতি লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তানের মা তাঁর সমকক্ষ বহুজনের নিকট থেকে বহু তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এরপর ভাবতে থাকে নিজের সন্তানকে সবার চেয়ে ভালো স্কুলে পড়াবেন। সবার চেয়ে ভালো গৃহশিক্ষক রাখবেন, যাতে করে কোনো প্রতিবেশী যেন বলতে না পারেন, আমার বাচ্চা আপনার বাচ্চার চেয়ে ভালো স্কুলে পড়ে। এভাবে অধিকাংশ অভিভাবকই নিজেদেরকে প্রতিযোগিতার শীর্ষে রাখার জন্য সচেষ্ট থাকেন।

সম্প্রতি বিষয়গুলো আমি খুবই ভালোভাবে খেয়াল করেছি। আমার মেয়ে এবার প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। তার মা এবং আমার বরাবরই ইচ্ছা ছিল বাসার পাশে, যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হবে তেমন কোনো একটি স্কুলেই তাকে ভর্তি করাব। ভর্তিও করিয়েছি তেমনই এক স্কুলে। খেয়াল করলাম, স্কুলে যেদিন বই দিল সেদিন তার সহপাঠীর মা-বাবারা বেশ গল্পে মশগুল। তাঁদের সন্তানদের এর আগে কোথায় কোথায় ভর্তির জন্য চেষ্টা করেছে সবার মুখে সেই গল্প। কেউ বলছে অমুক স্কুলে ৫০ হাজার টাকা ডোনেশন চেয়েছে, কেউ বলছে ৪০ হাজার টাকা চেয়েছে। এরকম ৪-৫ জনের মুখ থেকে বেশ মোটা অঙ্কের ডোনেশন বা স্কুলের উন্নয়ন ফিসের কথা জানতে পারলাম।

আমার মেয়ের সমবয়সী আমার এক নিকট আত্মীয়ের মেয়ের ব্যাপারে জানতে পারলাম, সে এক বিভাগীয় শহরের সবচেয়ে নামকরা স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। বিগত দুই বছরে প্লে ও নার্সারি সে ঐ একই স্কুলে শেষ করেছে। ঐ স্কুলের বিশেষত্ব হলো বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বই এবং সিলেবাসের বাইরে সেখানে অনেক বেশি বই পড়ানো হয় এবং সিলেবাস বহির্ভূত অনেক কিছু পড়ানো হয়। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কর্তৃক প্রকাশিত একটি বই এবার প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া সকল শিক্ষার্থীকে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। বোর্ড নির্ধারিত বইয়ের তেমন প্রাধান্য না দিলেও স্কুল থেকে কিনতে বাধ্য করা ঐ বইটিই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে আমার বেশ দ্বিমত আছে। একজন শিক্ষক, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করার পরেই শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হন। তাঁর প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যায়ের বই লেখার সামর্থ্য থাকতেই পারে। কিন্তু বাচ্চাদের সেসব বই কিনতে বাধ্য করা বা পাঠদানে উৎসাহিত করা মোটেই উচিত নয়। বিষয়টি এমন যে, ঢাক পিটিয়ে নিজের বিদ্যা নিজেই জাহির করা। অবশ্য এসকল বিষয়কে অনেক অভিভাবক খুবই ভালো হিসাবে দেখেন। ঐ স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন, নৃত্য, সঙ্গীত ইত্যাদি শেখানো হয়। অথচ স্কুলের কোনো খেলার মাঠ নেই। পড়ালেখার পাশাপাশি যেমন কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিসের দরকার ঠিক, তেমনি খেলাধুলারও দরকার আছে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা ঐ স্কুলটিতে নেই। অর্থাৎ যেটা থাকার দরকার সেটি না থাকলেও বহু অপ্রয়োজনীয় জিনিস স্কুলটিতে আছে। একটি বহুতল আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে নির্দিষ্ট ফ্লোর পর্যন্ত স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম চলে। যেখানে প্লে-নার্সারি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ আছে। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন স্কুলের সংখ্যা কম নয়। যেগুলো প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে প্রতিবছর নিত্যনতুন লোভনীয় অফার দিচ্ছে। অভিভাবকদের আকৃষ্ট করতে অবলম্বন করছে নানান কৌশল।

এসব কৌশলে যেসব অভিভাবক আকৃষ্ট হচ্ছে তাঁদের সবসময় সন্তানের শিক্ষা নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। যেমন, তাঁরা সর্বদা ভাবেন, একজন প্রথম শ্রেণির বাচ্চা একসাথে সব শিখবে। অর্থাৎ কোন স্কুলের নিজস্ব প্রণীত প্রথম শ্রেণির সিলেবাসে যদি দ্বিতীয় শ্রেণির সামান্য কিছু যুক্ত থাকে বা শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আছে এমন কিছু পড়ানো হয় তাহলে অভিভাবকদের মতে, সেই স্কুলই সেরা স্কুল। কেননা সেখানে প্রথম শ্রেণির সিলেবাসের বাইরে অনেক কিছু শেখানো হয়। আবার অনেকে ভাবে, ঐসব স্কুলে একজন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি পড়লে দ্বিতীয় শ্রেণিতে তার আর কিছুই পড়া লাগবে না। আমার মতে, এতে একজন শিক্ষার্থীর মেধাকে বিকশিত হওয়ার আগেই নষ্ট করা হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর ধারণ ক্ষমতার উপরে অতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সেটা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিতে পারলেও তার ব্রেনের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে। অভিভাবকরা এই জিনিসটা একবারও ভাবেন না। তাঁরা ভাবেন না, যখন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠবে তখন তার জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির বই আছে। সেটা প্রথম শ্রেণি শেষ করার আগে নয়, অবশ্যই পরে। অভিভাবকদের ধারণা, যে স্কুলে যত বেশি শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া হয় বা সিলেবাস যত বেশি দীর্ঘ থাকে সেই স্কুলই তত বেশি ভালো। তাঁদের ধারণা প্রথম শ্রেণির সিলেবাসে যদি মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়া অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহলে সেই স্কুলই সেরা স্কুল। তাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, একটি বাচ্চার ধারণ ক্ষমতা নিয়ে। যেখানে শিশুদের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে সরকার বিস্তর গবেষণা করে, বহু অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে পরিপার্শ্বের অবস্থা বিবেচনা করে তবেই প্রতিটা শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, প্রতিবছরে সেগুলোর সংস্করণ, পরিমার্জন, প্রয়োজনে সংযোজন ও বিয়োজন করেন। এরপর অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে সিলেবাস প্রদান করেন। যে পাঠ্যপুস্তকে একজন শিক্ষার্থীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে কীভাবে তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে সেভাবেই হিসাব করে প্রণয়ন করেছেন।

আবারো আসি আমার সেই নিকট আত্মীয়ের মেয়ের প্রতিদিনকার রুটিন নিয়ে। প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর স্কুলের ক্লাস শুরুর আগেই ঐ স্কুলের শিক্ষকের কথা অনুযায়ী কোচিং এ ভর্তি করানো হয়েছে। খুব সকালে ওর বাসায় পড়ানোর শিক্ষক আসে। একরকম ঘুম থেকে জোর করে টেনে তুলে তাকে শিক্ষকের সামনে নিয়ে হাজির করা হয়। ছোট মানুষ, ঘুম থেকে তুললে কান্নাকাটি করবে, সেটাই স্বাভাবিক। ওর ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়। প্রতিদিনের সুন্দর সকাল তার শুরু হয় কান্নাকাটি আর মায়ের বকুনি দিয়ে। কেননা, ও উঠতে না চাইলে মা তো বকবেই। বাসার শিক্ষকের কাছে পড়ার পরপরই তার স্কুলের সময় হয়ে যায়। কোনরকমে হালকা পাতলা খাওয়া শেষে সে স্কুলে যায়। দুই ঘণ্টার স্কুল শেষে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হয় নাচের ক্লাসে। এদিকে বাসায় গানের শিক্ষক এসে বসে থাকেন। তারপর আছে কোচিং এ যাওয়া। সন্ধ্যায় আবার মা তাকে নিয়ে পড়াতে বসেন। মায়ের দুশ্চিন্তা স্কুলের সব পড়া ঠিকঠাকভাবে হলো কিনা খতিয়ে দেখা। কেননা, খুব নামকরা স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়েছে। অনেক টাকা মাসিক বেতন দিতে হয়। তাছাড়া পরীক্ষার খাতায় যদি হাতের লেখা ভালো না হয় বা একটা বানান ভুল হয় তাহলে মেধাক্রম অনেকের নিচে নেমে যাবে। ঠিক তেমনটাই হয়েছিল গেলবারের পরীক্ষায়। একটা বানান ভুল করাতে বাংলায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯১ নম্বর পেয়েছে সে। আর তাতেই তার ক্লাস রোল হয়েছে ৫৩। এতে করে মেয়েটার মায়ের বেশ মন খারাপ। মায়ের বান্ধবি এবং প্রতিবেশীরা সবসময় মেয়ের রোল নম্বর কত হয়েছে সেটা জিজ্ঞাসা করছে। মেধাক্রম নিচে নেমে যাওয়ায় ওর মাকে একটু হলেও সবার কাছে ছোট হতে হয়েছে। তাই ওর মার এখন ওর প্রতি অতিরিক্ত কেয়ার নিতে হচ্ছে। আর সে উদ্দেশে ভালো শিক্ষকের কাছে দিয়েও ওর মা দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারছে না। সন্ধ্যায় মেয়েকে নিয়ে নিজের পড়াতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে আবার বেশ চড়াও হওয়া লাগছে।


এধরনের অভিভাবকরা সন্তানের লেখাপড়ার চেয়ে নিজের স্ট্যাটাস নিয়ে বেশি চিন্তিত। যেখানে নিজের স্ট্যাটাসকে ধরে রাখতে সন্তানের উপর যেকোন ধরনের বোঝা চাপাতে পিছপা হন না। এসব অভিভাবকের নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা এত বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন যে সন্তানের জন্য কি না করলে হয়। তাঁদের প্রত্যাশা থাকে তাঁদের সন্তান একসাথে নাচ, গান, চিত্রাঙ্কন, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রে সেরা হবে। বাচ্চাদের মেধা বিকাশের কোনরকম সুযোগ না দিয়ে তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একের পর এক চাপিয়ে দেন পাহাড় সম চাপ। প্রতিদিন সকাল থেকে এসবের পিছনে ছুটতে ছুটতে বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে যায়। এসব অভিভাবকের চাহিদা থাকে প্লে বা নার্সারিতে পড়ুয়া বাচ্চাদের বাসায় পড়ানোর জন্য দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম সারির ছাত্র-ছাত্রী।

আমার জানা মতে, দেশের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তার পাশাপাশি নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে আমি গিয়েছি। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরের এসব প্রতিটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাল্টি মিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদানের সুযোগ রয়েছে। খেলাধুলা শিশুদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি মনকে প্রফুল্ল করে। তাই প্রতিটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে খেলাধুলা করার জন্য বড় মাঠ রয়েছে। শিক্ষকদের বিভিন্ন ট্রেনিং শেষ করার পরে অভিজ্ঞ করার পর তবেই সরকারি স্কুলগুলোতে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এসব স্কুলে বিনা বেতনে কোনো কোনো শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ পায়। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকারের বৃত্তি এবং উপবৃত্তির ব্যবস্থা আছে। সার্বিক এসকল সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীর মেধাকে বিকশিত করতে কোনো অংশে কম নয় বলে আমি মনে করি।

এবার কাজের কথায় আসি। একটা অবুঝ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পারিবারিক শিক্ষা দিয়ে। যেখানে তার পরিবারই তার কাছে স্কুল। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সে প্রতিদিন সামান্য সামান্য শিখে নিজের মেধাকে বিকশিত করে। আমাদের সমাজের সকল পিতা-মাতার আশা, তাঁর সন্তান সবার চেয়ে ভালো করবে। ক্লাসের প্রথম হবে। সবাই যদি ক্লাসের প্রথম হয় তাহলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় কে হবে, সেটা নিয়ে কেউ ভাবে না। প্রতিবছর মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে লক্ষ লক্ষ জিপিএ ৫ পাচ্ছে। অনেকেই শতকরা ৯০ ভাগের বেশি নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু সবাই পরবর্তীতে ভালো করতে পারছে কিনা বা সবাই মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে যারা প্রকৃত মেধাবী তাঁরা ঠিকই তাঁদের জায়গা করে নিচ্ছে। ছোট থাকতে যে বাচ্চাটির বাবা মা এত প্রেসারে সন্তানকে বড় করেছে তাঁরা কি পেরেছে এই বড় হওয়া পর্যন্ত একইভাবে টেককেয়ার করতে? প্রতিটি সন্তান একটা সময় পর্যন্ত বাবা-মাকে অনুসরণ বা অনুকরণ করে শেখে। পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেখানে সন্তানের শিক্ষক হিসেবে কাজ করে। তবে বাবা-মায়ের উপরে কোনো শিক্ষক সন্তানের নেই যেখানে বাবার চেয়ে মায়ের ভূমিকা অনেক বেশি। মা যদি গান গায় তাহলে সন্তানও গান গাইতে চাইবে, প্রার্থনা করলে সেও করবে, মায়ের রান্না দেখে সেও রান্না করা শুরু করবে কিংবা অন্য কোনকিছু। এই শিক্ষাটা সারাজীবন থাকবে না, আবার থাকতেও পারে। এরপর সে বই পড়ে শিখবে, বন্ধুদের থেকে শিখবে এমনকি সিনেমা দেখেও শিখবে। এগুলো কন্ট্রোল করা যাবে না। ওইখানে বাবা বা মায়ের হস্তক্ষেপের খুব একটা দরকারও নেই।

তাই যে মোটা অঙ্কের টাকা আপনার সন্তানকে নামি দামি স্কুলে ভর্তির জন্য খরচ করতে চাইছেন কিংবা ডোনেশান দিতে চাইছেন কিংবা কোচিং বা গৃহ শিক্ষককে দিতে চাইছেন সেই টাকা আপনার হাতে রাখুন। বাচ্চাকে বাসার পার্শ্ববর্তী সাধারণ কোনো স্কুলে ভর্তি করান। এরপর ঐ টাকাগুলো বাচ্চার পড়াশোনাসহ সার্বিক কল্যাণের জন্য ব্যয় করুন। সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষা দিন। দেখবেন আপনার সন্তান অনেক নামি দামি স্কুলের সেরা ছাত্র-ছাত্রীর চেয়ে কোনো অংশেই খারাপ ফল করবে না। বরং তার ওপর চাপ কম থাকায় সে পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলার এক্টিভিটিসগুলোতেও ভালো করবে। তাদের শৈশব-কৈশোর হারিয়ে যাবে না। এখান থেকে ওখানে কিংবা ওখান থেকে এখানে যাওয়া-আসা করে যে সময় নষ্ট হয় সেই সময়টাও সে কাজে লাগাতে পারবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
ajoymondal325@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Biplab Kumar Biswas ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৯ পিএম says : 0
সহজ ,সরল ,প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্হাপন। লেখকের সাথে সহমত প্রেষন করছি।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন