উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ, শামসুল উলামা হযরত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (র.)-এর ১৫তম ওফাতবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে জকিগঞ্জের ফুলতলী ছাহেববাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে অনুষ্ঠিত হবে বিশাল ঈসালে সওয়াব মাহফিল। সকাল সাড়ে ১০টায় আল্লামা ফুলতলী ছাহেব (র.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে মাহফিলের কার্যক্রম। এরপর খতমে কুরআন ও দু‘আর মাধ্যমে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান।
এতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খতমে বুখারি, খতমে খাজেগান, দালাইলুল খায়রাত শরীফের খতম, জিকির মাহফিল, বিষয়ভিত্তিক বয়ান ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা। মাহফিলে তা’লীম-তরবিয়ত প্রদান করবেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব (র.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব ফুলতলী।
মাহফিল উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। লাখো মুসলিম জনতাকে বরণ করতে প্রস্তুত বালাই হাওর। সুষ্ঠুভাবে খাবার পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত সুপরিসর খাবার প্যান্ডেল। জকিগঞ্জ-আটগ্রাম রোডে রতনগঞ্জ বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে গাড়ি পার্কিং-এর জন্য বৃহৎ পরিসরে দশটি মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। রতনগঞ্জ বাজার থেকে ছাহেববাড়ি অভিমুখী রাস্তার মুখে মোটরসাইকেলের জন্য রয়েছে আলাদা পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সার্বিক শৃঙ্খলার জন্য প্রস্তুত হয়েছে প্রায় হাজারো স্বেচ্ছাসেবক।
ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব বণ্টনও সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ ইতোমধ্যে মাহফিলস্থল পরিদর্শন করেছেন। মাহফিলে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত পীর-মাশায়িখ, আলিম-উলামা, ইসলামী শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হবেন।
হযরত আল্লামা ফুলতলী (র.) উপমহাদেশে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯১৩ সালে জকিগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লী ফুলতলীতে তার জন্ম। প্রায় শতবর্ষব্যাপী জীবন অতিবাহিত করে ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন। এ দীর্ঘ জীবনে তিনি দীনের বহুমুখী খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। ইলমে কিরাতের ক্ষেত্রে তার অবদান অনন্য ও বিশ্ববিখ্যাত। ইলমে হাদীসের খিদমতে তার রয়েছে পৌনে এক শতাব্দীর প্রোজ্জ্বল ইতিহাস। সমাজের অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবায় তার রয়েছে বহুবিধ খিদমত। তিনি সারাটি জীবন মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেছেন বিভিন্নভাবে। তিনি একজন সুলেখক ও সমাজ সংস্কারকও ছিলেন।
ইলমে কিরাত ও ইলমে হাদীসের খিদমতের পাশাপাশি তাযকিয়ায়ে নফস বা ইলমে তাসাওউফের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। অগণিত মানুষ তার হাতে বায়আত হয়ে আল্লাহপ্রাপ্তির পথে এগিয়ে গেছেন। তিনি ওয়ায, যিকিরের তা’লীম, খানকা মাহফিল ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার সারাজীবন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তিনি দেশ-বিদেশে অনেক মসজিদ-মাদরাসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও আজ রোববার তার ঈসালে সাওয়াব মাহফিল। মাহফিলকে সফল ও স্বার্থক করে তুলতে ঈসালে সাওয়াব মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে সর্বস্তরের মুসলিম জনতার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন